পরমানু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে রূপপুরের সমীক্ষা শেষ
রূপপুরে পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে সমীক্ষা শেষ করেছে রাশিয়া। সমীক্ষা অনুযায়ি পরমানু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য রূপপুর খুবই উপযুক্ত স্থান। চলতি বছরেই বাংলাদেশের সঙ্গে এবিষয়ে রাশিয়া চূড়ান্ত চুক্তি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে সফররত রাশিয়ার রাস্ট্রয়াত্ত প্রতিষ্ঠান রোসাটমের অধীনস্ত সংস্থা এনআইএইপি এর ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং বাংলাদেশের রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রর তত্ত্ববধায়ক ম্যাকসিম ভি. এলচিসেভ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। শনিবার হোটেল সোনারগাঁও তিনি এক সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাস্ট্রদূত আলেকজাণ্ডার এ নিকোলেভ উপস্থিত ছিলেন।
ম্যাকসিম ভি. এলচিসেভ বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রের আশেপাশের এলাকায় পানি ও মাটি পরীক্ষা করে যে সমস্যা পাওয়া গেছে তা সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চলতি বছর চূড়ান্ত চুক্তি হলে আগামী ২০২২ সালে এই কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। ২০১৭ সাল থেকেই অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু হবে। পদ্মা নদীর পানি প্রবাহ, বাতাস, জমির অবস্থান, ভূমিকম্পসহ সকল বিষয়ে সমীক্ষা শেষ হয়েছে। সমীক্ষা অনুযায়ি সব কিছু বিবেচনায় রেখেই বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। উচ্চমাত্রার ভূমিকম্পসহনীয় করা হবে। কেন্দ্র স্থাপনে নিরাপত্তার বিষয়টি সবথেকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে। কোন রকম দুর্ঘটনা যাতে না হয় তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। পদ্মা নদীতে যে প্রবাহ আছে তাতে এই কেন্দ্র পরিচালনার জন্যে যথেষ্ট। নদী পানি নিয়ে আবার নদীতেই ফেলা হবে। তবে পদ্মায় পানি ফেলার আগে তা ঠাণ্ডা করে নেয়া হবে। এই পানিতে কোন তেজক্রিয়তা ছড়াবে না। কারণ এই পানি দিয়ে শুধু রিএকটর ঠাণ্ডা করা হবে। এতে তেজক্রিয়তার সাথে কোন সম্পর্কই হবে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ভিভিইআর-১২০০ প্রযুক্তির বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। যা সর্বাধনিক প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তিতে নিরাপত্তার বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ফুকুসিমা দুর্ঘটনার পর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কোন কোন বিষয়ে সমস্যা হতে পারে তা বিবেচনায় এনে এই প্রযুক্তি তৈরী করা হয়েছে। এতে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা খুবই কম। তারপরও কোন দুর্ঘটনা হলে তার কোন তেজক্রিয়তা বাতাসে ছড়াবে না। এমনকি দুর্ঘটনা হওয়ার ৭২ ঘন্টা পর্যন্ত তা নিয়ন্ত্রনের ব্যবস্থা থাকবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি প্রায় ৬০ বছর ধরে চলবে। এটি তৃতীয় প্রজন্ম পাস রিএকটর। সম্প্রতি ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভিভিইআর-১২০০ প্রযুক্তির এইএস-২০০৬ নামের বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করার ইচ্ছে প্রকাশ করা হয়েছে বলে তিনি জানান। বর্তমানে এনআইএইপি এ ধরণের মোট ৩৯টি পরমানু বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনা করছে।
ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, এ কেন্দ্র স্থাপনে বাংলাদেশ ও রাশিয়া অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে। সহজ শর্তে ঋণ দেবে রাশিয়া। আগামী দুই মাসের মধ্যেই ৯০ শতাংশ ঋণ অনুমোদন দেয়া হবে। বাংলাদেশে অর্থ মন্ত্রনালয়ের চিঠি পাওয়ার পরই ঋণের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এবিষয়ে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি সই হবে। দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট হবে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াটের।
কেন্দ্র স্থাপনে কি পরিমাণ খরচ হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চূড়ান্ত চুক্তির আগে খরচ নির্ধারণ সম্ভব নয়। প্রতিটি কেন্দ্রই আলাদা আলাদা। একটির সাথে অন্যটির খরচের মিল নেই। অবস্থা, প্রযুক্তি, সময়, চুক্তির শর্ত বিবেচনায় দাম নির্ধারণ হয়। বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে দেরি হলেও এর খরচ বাড়বে না বলে তিনি জানান। বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জমি তৈরির কাজ চলছে। চূড়ান্ত চুক্তির পর কেন্দ্রের মূল যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ নির্মানের কাজ শুরু হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে রাশিয়ান এ্যাম্বাসিডর বলেন, রাশিয়ার প্রেডিডেন্ট ভ্লাদিমি পুতিন শুধু শুভেচ্ছা বা রাজনৈতিক সফরে বাংলাদেশে আসবেন না। নিদিষ্ট প্রয়োজনেই আসবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাশিয়া সফরের সময় পুতিনকে বাংলাদেশে আমন্ত্রন জানান। পুতিন সে আমন্ত্রন গ্রহণ করেছেন এবং তা এখনও বলবত আছে। সুবিধামত সময়ে তিনি বাংলাদেশে আসবেন। রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রর চূড়ান্ত চুক্তির সময় পুতিন বাংলাদেশ আসবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবিষয়ে কিছু এখনও চূড়ান্ত হয়নি।