পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়াই বাঁশখালী বিদ্যুৎ কেন্দ্রর কাজ শুরু
বাঁশখালীর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়াই বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি করা হয়েছে। গতবছর আগষ্ট মাসে এস আলম গ্রুপ ছাড়পত্রর জন্য আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এখনো তা অনুমোদন পাওয়া যায়নি। তবুও এই কেন্দ্রর প্রতি সরকারের পূর্ণ সমর্থন আছে।
রোবাবার বিদ্যুৎ ভবনে বিদ্যুৎ বিভাগ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এতথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে অপপ্রচার করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, এই কেন্দ্রর আশপাশের মায়ের বুকের দুধ শুকিয়ে যাবে। এটা নিতান্তই অপপ্রচার। এধারণের অনেক অপপ্রচার করা হচ্ছে।
নিয়ম অনুযায়ি, বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে চুক্তির আগে জমি এবং পরিবেশের ছাড়পত্র নিশ্চিত করতে হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে এই নিয়ম মানা হয়নি।
সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলাম, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. শাহিনুর রহমান মিয়া, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসেইন, নর্থ ওয়েষ্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক খুরশিদুর রহমানসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বাঁশখালীতে চারজন স্থানীয় মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনায় এখনও কাউকে শাস্তি দেয়া হয়নি এবং কারা গুলি করল তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি কেন জানতে চাইলে তৌফিক ই ইলাহী বলেন, এটি খুবই দুঃখজনক। জেলাপ্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। স্থানীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারকে নিয়ে কমিটি করা হবে। এরপর তদন্ত করা হলে বোঝা যাবে আসলে কি হয়েছিল। এজন্য ধৈর্য ধরতে হবে। তিনি বলেন, বাঁশখালীর এমন জায়গায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে যেখানে জনবসতি খুবই কম। যারা আছেন তাদেরও ক্ষতিপুরণ দেয়া হচ্ছে। তাদের পুর্নবাসনেরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ফলে ওই স্থানে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কোনো সমস্যা নেই। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে সরকারের পূর্ণ সমর্থন আছে বলে তিনি জানান।
পরিবেশের ছাড়পত্র পাওয়ার বিষয়ে বিদ্যুৎ সচিব বলেন, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে নির্মিতব্য প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্থান নির্বাচনের আগে দুই তিন বছর ধরে সম্ভাব্য যাচাই এবং পরিবেশের প্রভাব যাচাই করা হয়। একই সঙ্গে সামাজিক প্রভাবও যাচাই করা হয়। এভাবে ১০-১২টি সমীক্ষা শেষ করে প্রকল্পের স্থান নির্বাচন করা হয়। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বাঁশখালীর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের ক্ষেত্রে ছাড়পত্রের অনুমোদনের জন্য সমী¶া শেষ করা হয়েছে। ছাড়পত্র পেতে একটু দেরি হচ্ছে। খুব শিগগির পেয়ে যাবে।
এস আলম গ্র“পের প¶ থেকে কোম্পানির পরামর্শক এ এস এম আলমগীর কবীর বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ৬৫৫ এশর জমি অধিগ্রহন করা হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে ৫০০ এশর জমি প্রয়োজন হবে। এরমধ্যেই ৬০০ জনের সাথে জমি রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। প্রত্যেক পরিবারের জমির অর্থ শোধ করার পরেও থাকার জন্য ঘর করে দেয়া হবে।
বিদ্যুৎ সচিব বলেন, ২০২১ সালে বাংলাদেশ হবে একটি উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে হবে একটি উন্নত দেশ। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়ছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির চাহিদা। ২০২১ সালে বাংলাদেশের প্রয়োজন হবে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। ২০৪১ সালে প্রয়োজন হবে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। উন্নত দেশে গড়ে মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণের হার বার্ষিক যেখানে ২০ টন সেখানে বাংলাদেশে মাত্র ০ দশমিক ২৫ টন। তবু সরকার দূষণের মাত্রা ন্যুনতম রাখতে বদ্ধপরিকর।