পরিবেশ রক্ষায় কয়লার ব্যবহার বাড়ানো উচিৎ নয়
পরিবেশ রক্ষার জন্য কয়লার ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে। কয়লা পরিবেশ বান্ধব জ্বালানি নয়। পৃথিবীর অন্য সকল দেশ যখন কয়লা থেকে বের হয়ে আসছে তখন বাংলাদেশ এই জ্বালানিতে যাচ্ছে।
সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) আয়োজিত ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানীর ব্যবহার-উপযোগী পরিবর্তন-বর্তমান অবস্থা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তারা একথা বলেন।
বক্তারা বলেন, রামপাল নিয়ে যা বলা হচ্ছে তা ধাপ্পাবাজি। রামপালে প্রচুর পরিবেশ দূষণ হবে। পৃথিবীকে বাসযোগ্য করতে ফসিল জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে। পরিবেশ বাঁচাতে নবায়ণযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর বিকল্প নেই। নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে নানা পরিকল্পনা করা হয় কিন্তু বাস্তবায়ন হয় না।
বাপার সহসভাপতি এডভোকেট সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যুক্তরাস্ট্রের ব্রেনডিস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সাজেদ কামাল। বক্তব্য রাখেন ইডকলের ভাইস প্রেসিডেন্ট নাজমুল হক ফয়সাল, বাপার সাধারণ সম্পাদক ড. মো. আব্দুল মতিন, পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক প্রকৌশলী বি ডি রহমতউল্লাহ, রহিম আফরোজের কর্মকর্তা কাজী আহমেদ ফারুকসহ অন্যরা।
সুলতানা কামাল বলেন, বাংলাদেশে পরিবেশ বিরোধী কাজ চলছেই। কয়লা, যাকে বলা হচ্ছে ‘নোংরা জ্বালানি’ তার ব্যবহার বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। এতে পরিবেশের ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। এরফলে এখনই প্রকৃতি প্রতিশোধ নিচ্ছে। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর দাবি উঠেছে। এখন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ (এসডিজি) নিয়ে কাজ করতে হবে। এতে পরিবেশ বান্ধব জ্বালানির ওপর জোর দিতে হবে। পরিবেশ বাঁচাতে হলে বাংলাদেশকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে ঝুঁকতে হবে। কয়লার ওপর নির্ভর করে বিদ্যুৎকেন্দ্র করলে চলবে না। নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে যেতে হবে।
বি ডি রহমতউল্লাহ বলেন, এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীদের জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ছে না। তারা নিজেদের সুবিধার জন্য ফসিল জ্বালানি ভিত্তিক বিদ্যুতের বাইরে আসতে চায় না। সরকার নীতি করে কিন্তু বাস্তবায়ন করেনা। পরিবেশকে ধ্বংস করতেই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বেশি করা হচ্ছে। বিশেষ আইনে ভারতকে হাজার হাজার মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ দেয়া হচ্ছে। ভারতেই এ ধরনের প্রকল্পের বিরুদ্ধে আন্দোলন হচ্ছে। তিনি বলেন, রামপালে যে পরিবেশের তি হবে না বলা হচ্ছে এটা ধাপ্পাবাজি। সুপারক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করলেও কয়লার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পরিবেশ বাঁচবে না। সুন্দরবন ধবংস হবে। নদী যাবে। দেশ যাবে। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়ন চাই। সেই উন্নয়নে বিদ্যুৎ লাগবেই। কিন্তু দেশের পরিবেশের ক্ষতি করে উন্নয়ন চাই না।
ড. সাজিদ কামাল তার মূল প্রবন্ধে বলেন, বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য একটি অত্যাশ্চার্য ভূমি। এখানে সৌর, বাতাস পানিসহ সব উপাদান সহজলভ্য। সরকারের উচিত নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানো। শুধু প্রকল্প নিয়ে নয়, প্রকল্প বাস্তবায়নও যাতে নির্ধারিত সময়ে হয় সেদিকে নজর দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, দেশে সৌর বিদ্যুতের সফলতা পাওয়া যাচ্ছে। আবাসিক ব্যবহারের জন্য ৩০ লাখ সৌর স্থাপন করা হয়েছে। তবে অন্য উৎসের দিকেও নজর দিতে হবে। বিকল্প জ্বালানির সকল সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিষয়ে সরকারকে আরও উদ্যোগি হতে হবে।