পল্লীতে এক মাসে ৩ লাখ বিদ্যুৎ সংযোগ

একমাসেই তিন লাখ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। গেল মে মাসে এই সংযোগ দিয়েছে তারা। এক সাথে একমাসে এই পরিমান সংযোগ আগে কখনও দেয়া হয়নি। এরআগে, এপ্রিল মাসে দুই লাখ ৪৬ হাজার নতুন সংযোগ দেয়া হয়েছিল।
আরইবি চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মঈনউদ্দিন বলেন, পল্লী বিদ্যুতে আর কোন আবেদন অপেক্ষমান থাকবে না। চলতি জুন মাসের মধ্যে অপেক্ষমান সকল আবেদনের প্রেক্ষিতে সংযোগ দিয়ে দেয়া হবে। বিদ্যুৎ থাকবে না এমন কোন গ্রাম বা বাড়ি রাখা হবে না। ২০২১ সালের মধ্যে শতভাগ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছানো হবে। ২০১৮ সালের মধ্যে ৯০ ভাগ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌছানো হবে। আবাসিক গ্রাহকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দ্রুত সংযোগ দেয়া হবে।
আরইবি সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে আরইবি প্রতিমাসে এক লাখের বেশি গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে। আরইবি’র বেশিরভাগ সংযোগ আবাসিক। এজন্য সংযোগ বাড়লেও চাহিদা বাড়ছে খুব কম। প্রতি এক লাখ গ্রাহকের জন্য গড়ে বিদ্যুৎ প্রয়োজন হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ মেগাওয়াট। এই হিসাবে তিন লাখ গ্রাহকের জন্য চাহিদা বেড়েছে গড়ে প্রায় ১০০ মেগাওয়াট। আরইবি’র বর্তমানে মোট গ্রাহক আছে এক কোটি ১৭ লাখ পাঁচ হাজার। আর বিদ্যুতের চাহিদা আছে প্রায় তিন হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। চাহিদার বেশিরভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে বলে জানালেন আরইবি চেয়ারম্যান। তবে মাঠ পর্যায়ের অভিযোগ, গ্রামে শহরের চেয়ে অনেক বেশি লোডশেডিং করা হচ্ছে।
আরইবি সূত্র জানায়, প্রত্যেক সমিতিকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার পদ্ধতি সহজ এবং দ্রুত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগের ক্ষেত্রে কোন রাজনীতি করা যাবে না। সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রতিটি গ্রাহককে সমতার ভিত্তিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হবে।
সূত্র জানায়, গত কয়েকবছর ধীরে চলো নীতিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। এই সময়ে আরইবিতে ৪৫ লাখ ৩১ হাজার ৯১৬টি আবেদন জমা পড়ে। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩৫ লাখ ১৭ হাজার ৫৭৯ গ্রাহককে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছিল। ফেব্রুয়ারিতে নতুন এক লাখ ২২ হাজার ১৫৭ জনকে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। পরে মার্চ মাসেও এক লাখের বেশি সংযোগ দেয়া হয়েছে। এরপরও আরইবিতে প্রায় ছয় লাখ আবেদন জমা আছে। এর অধিকাংশই আবাসিক।
নতুন সব আবেদনের জন্য প্রায় এক হাজার ৬৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন। প্রতিমাসে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ায় ১০০ মেগাওয়াটের মতো বাড়তি বিদ্যুৎ প্রয়োজন হচ্ছে।
বর্তমানে চাহিদা অনুযায়ি সারাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে বলে সরকার দাবি করলেও রাজধানী ছাড়া দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেয়া যাচ্ছে না। ওভারলোডেড ট্রান্সফরমারের কারণে চাহিদা অনুযায়ি বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হয় না বলে জানিয়েছে আরইবি।
আরইবি কর্তৃপক্ষ জানায়, আরইবি এতদিন ওভারলোড সমস্যার কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পারেনি। এখন সেই সমস্যা অনেকটা দূর হয়েছে। সমিতিগুলো নিজস্ব উদ্যোগে ট্রান্সফরমার পরিবর্তন করছে। এছাড়া চীনের সহায়তায় একটি বড় প্রকল্প হচ্ছে যার পুরোটা বাস্তবায়ন হলে ওভারলোড সমস্যা আর থাকবে না।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, গত জানুয়ারি মাসে আরইবির অধীনে ৬১ হাজার ৫২৫টি ট্রান্সফরমার ওভারলোডেড ছিল। ফেব্রুয়ারি মাসে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫৯ হাজার ২১০টিতে। একমাসে দুই হাজার ৩১৫টি ট্রান্সফরমার বসানো হয়েছে।
সেবা উন্নত করার জন্য বিশ্বব্যাংক, জাইকা, এডিবি ঋণ দিয়েছে এবং বর্তমানে ১২টি প্রকল্প চলমান আছে। আগামী ২০১৮ সালের মধ্যে ৫০টি সমিতি লাভজনক অবস্থায়  আসবে। দেশের ৭২টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি আছে।