পারমাণবিক: রাশিয়ার সঙ্গে ইরানের চুক্তি

পারমাণবিক বিদ্যুত্ উত্পাদন কেন্দ্র বুশেহর পাওয়ার প্লান্ট সম্প্রসারণে রাশিয়ার সঙ্গে সম্প্রতি চুক্তিবদ্ধ হয়েছে ইরান। পারমাণবিক কার্যক্রম হ্রাসে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের দেশটির সঙ্গে সমঝোতা করতে জোর প্রচেষ্টায় থাকা পশ্চিমা বিশ্ব একে অবশ্য ভালো চোখে দেখছে না। খবর ব্লুমবার্গ ও ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।
ইরানের অ্যাটমিক এনার্জি অর্গানাইজেশনের প্রধান আলি আকবর সালেহি ও রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রোসাটম করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী সার্গেই কিরিয়েনকোর মধ্যে গত মঙ্গলবার চুক্তিটি সই হয়। রোসাটমের তথ্য অনুযায়ী, চুক্তিটিতে বুশেহর প্লান্টটিতে নতুন দুটি চুল্লির সম্প্রসারণসহ আরো দুটি চুল্লি যোগ করার সুযোগ রাখা হয়েছে। এছাড়া কয়েকটি জায়গায় আরো চারটি চুল্লি স্থাপনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এ চুক্তির মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে, ইরান এখনো তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি বাড়ানোর পরিকল্পনা থেকে সরে আসেনি। অথচ যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ বিশ্বের ছয় পরাশক্তি দেশটির পরমাণু কার্যক্রম কমিয়ে আনতে দফায় দফায় আলোচনা করে যাচ্ছে। কিন্তু এ আলোচনায় তেমন কোনো অগ্রগতি চোখে পড়ছে না। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও ইরানের প্রতিনিধিদের মধ্যকার সর্বশেষ আলোচনাটিও তেমন কোনো ফলাফল ছাড়াই শেষ হয়েছে। অবশ্য আলোচনায় চূড়ান্ত চুক্তির জন্য ২৪ নভেম্বরকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। চুক্তিটির মাধ্যমে মূলত ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রমে একটি সীমারেখা টেনে দেয়া এবং দেশটির ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হবে। চলমান নিষেধাজ্ঞায় এরই মধ্যে ইরানের অর্থনীতি সংকুচিত হয়ে পড়েছে।
আলোচনায় থাকা ছয় পরাশক্তির একটি রাশিয়া। তবে সম্প্রতি ইউক্রেনে রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ওপর মস্কোর সমর্থনের জের ধরে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সম্পর্ক তিক্ত হয়ে উঠেছে। এতে ইরানের সঙ্গে চলমান আলোচনায় ঐকমত্যে পৌঁছানো কঠিন হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনাটি আগামী মঙ্গলবার থেকে ভিয়েনায় শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাংক-ওয়াটার স্টেইনমেয়ার বলেছেন, ২৪ নভেম্বর চূড়ান্ত চুক্তি না হলে সার্বিক প্রক্রিয়া আবার দুই বছর পিছিয়ে যেতে পারে।
এদিকে মস্কো-তেহরানের চুক্তি বিষয়ে ওয়াশিংটনে ইন্টারন্যাশনাল পিসের ইরানবিষয়ক বিশেষজ্ঞ কারনিজে এনডোমেন্ট বলেন, বুশেহর পারমাণবিক কেন্দ্রটি নির্মাণ করেছিল রাশিয়া, এর পেছনে দুই বছর সময় ব্যয় হয়েছে। ইরানের কাছে এটি নিরাপত্তার দিক থেকেও যেমন গুরুত্বপূর্ণ, অর্থের দিক থেকেও তেমন।
আলি আকবর সালেহি অবশ্য চুক্তিটিকে দুই দেশের সম্পর্কে টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ইরানের চলতি হিসাববর্ষে বুশেহরের সম্প্রসারণ কাজ শুরু হবে। এখান থেকে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। নতুন চুল্লির জ্বালানি সরবরাহ করবে রাশিয়া।
ভিয়েনায় পারমাণবিক সমঝোতা ইস্যু নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনার ঠিক আগ মুহূর্তে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তিটি ‘কাকতালীয়’ ছাড়া কিছুই নয়।