১২০০ মেগাওয়াটে খরচ হবে ১২ বিলিয়ন ডলার

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের অনুস্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ ও রাশিয়া। একই সাথে চুড়ান্ত হয়েছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের খরচ। এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার কেন্দ্র স্থাপন করতে খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ বিলিয়ন ৬৬ মিলিয়ন ডলার। স্বল্প সুদে এই অর্থ ঋণ দেবে রাশিয়া। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে ২০২১ সালে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট চালু করা হবে।

মঙ্গলবার রাজধানির আগারগাঁও আনবিক শক্তি কমিশন কার্যালয়ে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে এই অনুস্বাক্ষর হয়। এসময় রাশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী সার্জে ক্রিংকিয়ানো ও বাংলাদেশের বিজ্ঞান মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুস্বাক্ষরের মাধ্যমে উভয় দেশ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের সকল শর্ত বা নিয়মে একমত হল।

এরআগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে ক্রিংকিয়ানো সাক্ষাৎ করেন। মঙ্গলবার সকালে নিজস্ব বিমানে ক্রিংকিয়ানো বাংলাদেশ আসেন। অনুস্বাক্ষর শেষে দুপুর দেড়টায় আবার রাশিয়া চলে যান।

বিজ্ঞান মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান এনার্জি বাংলাকে বলেন, দেশকে টেনে তুলতে, ভবিষ্যৎ এগিয়ে যাওয়ার জন্য পথ খুলে গেল। রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে আর কোন বাধা থাকলো না। তিনি বলেন, এই চুক্তির পরে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের মহৃল কাজ শুরু হল। অর্থেও নিশ্চয়তা এবং অর্থ নির্ধারণ এদুটোই ছিল জটিল। সেই কাজ শেষ হল। ক্রিংকিয়ানো আসার পর দরকষাকষিতে ২৬৫ মিলিয়ন ডলার কমানো হয়েছে বলে তিনি জানান। দ্রুত সময়ের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ শুরু করা হবে। আনুষ্ঠানিত উ্দ্বোধনীতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমি পুতিনকে আমন্ত্রণ জানানো হবে বলে তিনি জানান।

সূত্র জানায়, চুক্তি অনুযায়ি রাশিয়া বাংলাদেশ থেকে বর্জ্য নিয়ে যাবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পুরো দায়িত্বে থাকবে রাশিয়ার। এজন্য আলাদা কোন খরচ ধরা হবে না। বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের খরচের মধ্যেই এই খরচ ধরা হয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের যে খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে তার মধ্য থেকেই বাংলাদেশের এক হাজার জনকে এবিষয়ে প্রশিক্ষণ দেবে রাশিয়া। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সকল যন্ত্র নদী পথে আনা হবে।

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য আগেই সম্ভাব্য যাচাই শেষ করা হয়েছে। করা হয়েছে নকশা। ভূমিকম্প, বন্যা, খরাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয় বিবেচনায় নিয়ে এই কেন্দ্র স্থাপনের নকশা করা হবে। রূপপুরের মাটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য উপযোগি নয়। এজন্য জার্মানির প্রযুক্তিতে সেখানের মাটি যথাযথ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশে ভিভিইআর-১২০০ প্রযুক্তি রিএকটর ব্যবহার করা হবে। এটা সর্বশেষ প্রযুক্তি। সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন প্রযুক্তিতে নিরাপত্তার বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ফুকুসিমা দুর্ঘটনার পর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কোন কোন বিষয়ে সমস্যা হতে পারে তা বিবেচনায় এনে এই প্রযুক্তি তৈরী করা হয়েছে। এতে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা খুবই কম। তারপরও কোন দুর্ঘটনা হলেও তার কোন তেজস্ক্রিয়তা বাতাসে সহসা ছড়াবে না। এমনকি দুর্ঘটনা হলেও ৭২ ঘন্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিজেই তার তেজস্ক্রিয়তা নিয়ন্ত্রন করে থাকতে পারবে। ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে। এটি তৃতীয় প্রজন্মের রিএকটর। সুতরাং সবচেয়ে নিরাপদ হবে। আর তাছাড়া যে কোন পরমানু বিদ্যুৎ কেন্দ্রর প্রধান বিষয় থাকে নিরাপত্তা। নিরাপত্তা সবার আগে নিশ্চিত করা হয়ে থাকে। পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে গেলে প্রতিটি ধাপে ধাপে জাতিসংঘের তদারকির মধ্যে দিয়েই যেতে হয়। জাতিসংঘের পারমানিবক বিভাগ নিশ্চিত করলে বা তারা নিরাপদ মনে করলেই তা বাজারজাত করা সম্ভব হয়। নিরাপত্তার বিষয়টি তারাও যাচাই করবে। এই প্রযুক্তিতে ভিভিইআর-১০০০ থেকে অনেক ভাল হবে।