পাল্টে যাচ্ছে আমাদের পৃথিবী
পাল্টে যাচ্ছে আমাদের পৃথিবী! দীর্ঘমেয়াদী লকডাউনে হুহু করে কমছে বায়ুদূষণের মাত্রা! চীন, ইতালি বা ব্রিটেনের আকাশে অবিশ্বাস্য গতিতে কমছে নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড, সালফার ডাইঅক্সাইড আর কার্বন মনোক্সাইডের মাত্রা!
পরিবেশবিদদের হতবাক করে নিউইয়র্কের আকাশে দূষণের মাত্রা কমেছে ৫০ শতাংশেরও বেশী! শুধু উপগ্রহ ছবিতে নয়, ঘরবন্দী ইউরোপের মানুষ খালি চোখেও দেখতে পাচ্ছে ঝকঝকে নির্মল আকাশ! রাতে আকাশে তাকালে চোখে পড়ে দূরের তারা। স্বচ্ছ নীল আকাশ। শুধু ইউরোপে কেন বাংলার আকাশ পরিস্কার। স্মরণকালের মধ্যে যা কখনো দেখেনি কেউ। দলবেঁধে ফিরে আসছে পরিযায়ী পাখির দল। সভ্যতা থেকে দূরে সরে যাওয়া নিরীহ ডলফিনের ঝাঁক ফিরে আসছে মানুষের কাছে! কমেছে বিশ্ব ঊষ্ণায়নের হারও।
বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘরবন্দি। বন্ধ কলকারখানা। চলছে না যানবাহন। তাই পুড়ছে না জ্বালানি। যানবাহন না চলায়, শিল্পের ধোয়া না বের হওয়ায়- এই অবস্থা। ফসিল না পোড়ানোর প্রভাব পড়েছে প্রকৃতিতে। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে বায়ুদূষণ কমেছে। একই সঙ্গে কার্বন নিঃসরণ কমেছে ব্যাপক হারে। বিশেষ করে বিশ্বের অন্যতম দূষিত বায়ুর দেশ ও কার্বন নিঃসরণকারী চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের বায়ুর মানে ব্যতিক্রমী উন্নতি ঘটেছে। বাংলাদেশের শহরগুলোতেও কমেছে বায়ু দূষণ।
স্বচ্ছ হচ্ছে নদীর পানিও। জানা গেছে দূষণ কমতে শুরু করেছে ভারতের গঙ্গা নদীতে। সেখানে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ উন্নতি হয়েছে। সংবাদ সংস্থা এএনআই জানায়, ‘গঙ্গার দূষণের এক দশমাংশ আসে শিল্প থেকে। যেহেতু শিল্পোৎপাদন এখন বন্ধ, তাই পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। গঙ্গায় ৪০-৫০ শতাংশ উন্নতি লক্ষ করা যাচ্ছে। এটা তাৎপর্যপূর্ণ উন্নতি।’ এদিকে ভারতের কোলকাতার এক বিজ্ঞানী আকাশে নতুন তারার খোঁজ পেয়েছেন। আর এটা সম্ভব হয়েছে আকাশ পরিস্কার থাকার কারণে।
আনন্দবাজারপত্রিকা বলছে, আকাশে দেখা মিলল এমন এক ঝাঁক তারা, বহু বহু দূরে থাকার ফলে যাদের কথা আমরা এর আগে কখনও জানতেই পারিনি। তাদের কোনওটা আমাদের মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সিরই অন্য এক প্রান্তের। কোনওটা বা আরও অনেক অনেক দূরের কোনও গ্যালাক্সির। খুব দূরে আছে বলে বড় টেলিস্কোপেও এত দিন যাদের চেনা, জানা যায়নি, মেদিনীপুরের সীতাপুরে সেই ‘অচেনা অতিথি’রা ধরা দিল মাত্র ২৪ ইঞ্চি লেন্সের টেলিস্কোপে। কলকাতার ‘ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্স (আইসিএসপি)’-এর বাঙালি গবেষকদের চোখে। আইসিএসপি-র অধিকর্তা দেশের বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী সন্দীপ চক্রবর্তী বলছেন, আগে যদি ১০০ কোটি আলোকবর্য দূরে থাকা কোনও তারার খোঁজ পেতাম, লকডাউনের আকাশ তা হলে আমাদের ২০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে থাকা তারাকেও দৃশ্যমান করে তুলল।
ক্ষুদ্র এক ভাইরাস গোটা দুনিয়ার ভোল পাল্টে দিচ্ছে । পাল্টে দিচ্ছে আমাদের মানসিকতা, আমাদের জীবনযাত্রা। একদিকে সীমান্ত মুছে গিয়ে গোটা পৃথিবী দাঁড়িয়েছে এক আকাশের নীচে, অচেনা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছে এক জোট হয়ে। এরপর ঘরবন্দী হয়ে যাওয়া মানুষ প্রাথমিক ধাক্কা টুকু সামলে হাত বাড়িয়ে দেবে প্রতিবেশীর দিকে। চারপাশের পরিবেশ নিয়ে ছিনিমিনি খেলার আগে ভাববে আত্মীয়, বন্ধু, পড়শীদের কথা।করোনা ঢেউ শুধু এই এক-দু’মাসের গল্প নয়। একটা ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়ে বাজারে আসতে সময় নেবে কমপক্ষে ১২ থেকে ১৮ মাস। এরমধ্যে পৃথিবীর অন্ততঃ দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ আক্রান্ত হবে দফায় দফায় যতদিন ভ্যাকসিন না আসবে।
কী অদ্ভুত না? আমরা আমাদের ইমিউন সিস্টেমের কথা জানি। কিন্তু এই পৃথিবীর ও যে একটা ইমিউন সিস্টেম আছে, তা ভাবি নি কখনো! যেন তিতিবিরক্ত পৃথিবী আর সইতে না পেরে সেই সিস্টেমকে এক্টিভেট করে দিয়েছে!বিজ্ঞানীদের মতে আগামী একবছরে করোনা-বিপর্যস্ত মানুষ, দফায় দফায় ঘরবন্দী থাকা মানুষ পৃথিবীর দূষণ কমিয়ে ফেলবে প্রায় ৪৫ শতাংশ! পরিবেশ ফিরে যাবে ৫০০ বছর আগে, বিশুদ্ধতার নিরিখে। মাস’ছয়েকের মধ্যে কমতে থাকবে হিম বাহের গলন, বন্ধ হয়ে যাবে বছর খানেকের মধ্যে।কমবে ক্যানসার, কিডনী, শ্বাসযন্ত্র ও অন্যান্য দূষণ জনিতরোগ।
নতুন পৃথিবীতে নতুনভাবে নামবে মানুষ, ভাঙাচোরা অর্থনীতি, থমকে যাওয়া শিল্প, আমূল বদলে যাওয়া জীবনকে নতুন করে বাঁধবে। ধূলো-ধোঁয়া-অন্ধকার পেরিয়ে সেই নতুন পৃথিবীর সোনালী আলোর রেখা হয়ত দেখা যাচ্ছে এখন থেকেই!
লেখক
শিক্ষার্থী
পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়