পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রর শ্রমিক সরবরাহের চুক্তি বাতিল: অনির্দিষ্টকালের ছুটি
পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রর বাংলাদেশি শ্রমিকদের অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ছুটি দেয়া হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে শ্রমিক সরবরাহের চুক্তি।
গত ১৫দিন এই বিদ্যুৎকেন্দ্রর নির্মান কাজ বন্ধ আছে।বাংলাদেশি ও চীনা শ্রমিকদের সংঘর্ষের পর কাজ বন্ধ করা হয়। কবে কাজ শুরু হবে তা এখনও অনিশ্চিত।
সূত্র জানায়, ক’দিন আগেও এ বিদ্যুৎকেন্দ্রে সাত/আট হাজার বাংলাদেশী শ্রমিক কাজ করতেন। তবে এখন বাংলাদেশী কোনো শ্রমিক নেই। সবাইকে ছুটি দেয়া হয়েছে।
গাইবান্ধার মজিদ এন্টারপ্রাইজ গত তিন বছর পটুয়াখালির এই তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিক সরবরাহ করছে। গাইবান্ধার মজিদ এন্টারপ্রাইজের এক কর্মকর্তা জানান, আমাদের প্রতিষ্ঠান তিন বছর এখানে শ্রমিক সরবরাহ করে আসছে। গত মঙ্গলবার সকালে একটি বৈঠক হয়েছে। এতে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, এতদিন বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে শ্রমিক রফতানির যে চুক্তি ছিল, তা বাতিল হয়ে গেছে। শ্রমিক রফতানি করতে হলে নতুন করে চুক্তি করতে হবে। সেই সঙ্গে লাগবে শ্রম অধিদপ্তরের লাইসেন্স।
বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রে কর্মরত শ্রমিকসহ সকলের নিরাপত্তা আরও নিশ্চিত করার জন্য কিছু উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই আবার কাজ শুরু হবে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাংলাদেশী ও চীনা শ্রমিকদের সংঘর্ষের পর আশপাশের গ্রামগুলোয় কয়েক দিন আতঙ্ক বিরাজ করলেও পরিস্থিতি এখন অনেকটা স্বাভাবিক।
রোববার পর্যন্ত এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি থাকলেও সোমবার তা স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে।
ঐ এলাকায় হাজারও মানুষের কোলাহল থাকলেও এখন স্থানীয়রা ছাড়া আর কাউকেই দেখা যায় না।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও চীনা শ্রমিকদের মধ্যে এখনো আতঙ্ক কাজ করছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভেতর পরিবারসহ বসবাস করেন চীনা নাগরিকরা। গত সোমবার বকেয়া মজুরি সংগ্রহে বিশালসংখ্যক বাংলাদেশী শ্রমিক একসঙ্গে বিদ্যুৎকেন্দ্রের দিকে এগিয়ে গেলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন তারা। এ কারণে বাংলাদেশী শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি শ্রমিক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিদ্যুৎকেন্দ্রের বাইরে পরিশোধ করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্র ঘিরে আশপাশে যে কর্মসংস্ধান হয়েছিল তা নিয়েও এখন অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
শ্রমিক সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে কমিটির প্রতিবেদন ও সুপারিশ পাওয়ার পর পরের ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানা গেছে।
১৯ শে জুন সকালে বিদ্যুৎকেন্দ্রের বয়লারের ওপর থেকে পড়ে সাবিন্দ্র দাস নামে এক বাংলাদেশী শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এর জের ধরে চীনা ও বাংলাদেশি শ্রমিকরা বিকালে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। বেলা ৩টায় বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষে এক চীনা শ্রমিক নিহত হন। এরপর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয় বিদ্যুৎকেন্দ্রর নির্মাণকাজ।
পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলায় নির্মিত হচ্ছে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মাণাধীণ বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ৮৫ ভাগ অর্থ ঋণ দিচ্ছে চীন। প্রকল্পটির নির্মাণকাজে প্রায় নয় হাজার শ্রমিক যুক্ত আছেন, যার মধ্যে তিন হাজার চীনা শ্রমিক।