পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম বাতি
গ্রাফিন দিয়ে বিশ্বের ক্ষুদ্রতম বাতি তৈরি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকেরা।বিশ্বের ক্ষুদ্রতম বৈদ্যুতিক বাতি তৈরিতে সফল হলেন বিজ্ঞানীরা। বাতি অতি ক্ষুদ্র হলে কী হবে, এর আলো কিন্তু খালি চোখেই দেখা যায়! গ্রাফিন নামের এক অণু পুরু বিস্ময়কর একটি উপাদান দিয়ে তৈরি হয়েছে এই বাতি।
গ্রাফিনকে পৃথিবীর সবচেয়ে পাতলা উপাদান মনে করা হয়। এর নমনীয়তা এবং শক্তির কারণে বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস থেকে শুরু করে মেডিকেলের যন্ত্রপাতিতেও এটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। স্মার্টফোন, কম্পিউটার থেকে শুরু করে চিকিৎসা যন্ত্রপাতি, গাড়ি, ভবন তৈরি কিংবা কৃত্রিম উপগ্রহ তৈরিতেও গ্রাফিনকে কাজে লাগানো যেতে পারে।
বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদন, তথ্যপ্রযুক্তি ও চিকিৎসাপ্রযুক্তি থেকে শুরু করে মহাকাশ গবেষণায়ও বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটাতে পারে এই গ্রাফিন। শুধু তা-ই নয়, প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদ দ্রুত কমে যাওয়ায় ভবিষ্যতের অবলম্বন হতে পারে এই অতি পাতলা পদার্থ। ২০০৪ সালে আবিষ্কৃত গ্রাফিন বর্তমান বিশ্বে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, সংবেদনশীল যন্ত্রাংশ, সৌরবিদ্যুৎ কোষ, ইন্টারনেটের গতিবৃদ্ধির প্রযুক্তি, চিকিৎসা প্রযুক্তিসহ কয়েকটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার গবেষকেরা গ্রাফিনকে অতি উত্তপ্ত ফিলামেন্টে রূপান্তর করতে সক্ষম হয়েছেন। বৈদ্যুতিক বাতির ফিলামেন্ট যেভাবে আলো দিতে পারে গ্রাফিনও সেভাবে আলো দিতে পারে।
এই আলো এত তীব্র যে আণবিক স্তরের এই বাতি থেকে যে আলো তৈরি হয় তা খালি চোখে দেখা যায়। অর্থাৎ অত্যন্ত বেশি তাপমাত্রায় এই বাতি জ্বলে উঠলেও সেটি যে চিপের সঙ্গে যুক্ত থাকে সেই চিপের কোনো ক্ষতি হয় না।
গবেষকেরা দাবি করেছেন, তাঁদের এই উদ্ভাবন নতুন ধরনের সুইচিং যন্ত্র তৈরিতে কাজে লাগবে যা ভবিষ্যতে অপটিক্যাল কম্পিউটার তৈরির মূল প্রযুক্তি হবে। অপটিক্যাল কম্পিউটারে বৈদ্যুতিক প্রক্রিয়ায় তথ্য স্থানান্তরের পরিবর্তে এই আলোক পদ্ধতি ব্যবহৃত হবে যা প্রচলিত সিলিকন চিপের তুলনায় অনেক দ্রুতগতিতে কাজ করতে পারবে। অর্থাৎ কম্পিউটার হবে অনেক দ্রুতগতির।
গবেষণা সংক্রান্ত নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে নেচার ন্যানোটেকনোলজি সাময়িকীতে।
যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জেমস হোন জানিয়েছেন, তাঁরা প্রথমবারের মতো এমন একটি কম্পিউটার চিপ তৈরি করেছেন যাতে নিজস্ব দৃশ্যমান আলোক উৎস রয়েছে। আসলে আমরা বিশ্বের সবচেয়ে পাতলা বৈদ্যুতিক বাতি তৈরি করেছি। নতুন ধরনের এই ‘ব্রডব্যান্ড’ আলোক নির্গমন পদ্ধতিটিকে চিপের সঙ্গে যুক্ত করা হলে অত্যন্ত পাতলা, নমনীয় ও স্বচ্ছ ডিসপ্লে তৈরির দুয়ার খুলে যাবে এবং গ্রাফিন ভিত্তিক অপটিক্যাল চিপ তৈরি করা সম্ভব হবে।
গবেষক জেমস বলেন, আমরা অন্যান্য ক্ষেত্রেও এই গ্রাফিন কাঠামো ব্যবহারের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি। যেমন মাইক্রো-হটপ্লেটস যাতে কয়েক সেকেন্ডে কয়েক হাজার ডিগ্রি তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করে তোলা যায় এবং উচ্চ তাপমাত্রার রাসায়নিক বিক্রিয়া বা অনুঘটক নিয়ে পরীক্ষা চালানো যায়।
গ্রাফিন নামের পদার্থটি মাত্র এক পরমাণু সমান পাতলা। স্বচ্ছতা কাচের মতো। কিন্তু এটি ইস্পাতের চেয়ে ১০০ গুণ দৃঢ় এবং তাপ ও বিদ্যুৎ পরিবাহী হিসেবে অতি চমৎকার। গ্রাফিন আসলে বহুরূপী মৌল কার্বনের একটি ভিন্ন অবস্থামাত্র। এটি অদূর ভবিষ্যতে বিশ্বকে আমূল বদলে দিতে যাচ্ছে বলেই মনে করছেন গবেষকেরা। দুষ্প্রাপ্যতা এবং জটিল ও ব্যয়বহুল উৎপাদনপদ্ধতির কারণে গ্রাফিনের ব্যবহার সীমিত রয়েছে। উৎপাদন বাড়ানো হলে পদার্থটির নানামুখী ব্যবহার শুরু হবে, এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই।