বিদ্যুৎখাতে আর কোম্পানি নয়

বিদ্যুৎখাতে আর কোম্পানি নয়। যে কয়টি কোম্পানি হয়েছে তাতে গ্রাহক সেবার মান বাড়েনি। বরং সরকারের খরচ বেড়েছে। মাথাভারি প্রশাসন তৈরী হয়েছে। বর্তমানে যে পরিমান বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে তা সরবরাহের জন্য এত বেশি কোম্পানি প্রয়োজন নেই। তাই রাজশাহি ও রংপুর এলাকাকে নিয়ে নতুন যে কোম্পানি করা হয়েছে তা বাতিল করার দাবি জানিয়েছে বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ঠ প্রকৌশলীরা।
মঙ্গলবার বিদ্যুৎ ভবনের বিজয় হলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) শতাধিক প্রকৌশলী প্রতিবাদ সমাবেশ করে এই কোম্পানি বাতিলের দাবি জানান। বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ এই প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। তবে সকল পক্ষের প্রকৌশলীরা এতে উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পিডিবি’র প্রধান প্রকৌশলী (সরবরাহ) মাসুদ আল ফারুক। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহি’র প্রধান প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান, মহেশখালি বিদ্যুৎ বিতরণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী (ক্রয়) নিখিল চন্দ্র চৌধুরী ও প্রধান প্রকৌশলী (প্রশিক্ষণ) অমল কৃষষ্ণ বসু।
চলতি আগষ্ট মাসের মধ্যে নর্থ ওয়েষ্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি. এর কার্যক্রম শুরু করার জন্য পদক্ষেপ নিতে পিডিবিকে বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে চিঠি দেয়া হয়। সরকার মালিকানাধিন এই কোম্পানি রাজশাহি ও রংপুর বিভাগে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। ২০০৫ সালে এই কোম্পানি গঠন করা হয়। বর্তমানে পিডিবি এই অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে।
প্রকৌশলীরা বলেন, বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ঠ কোন পক্ষের সাথে কিম্বা বিশেষজ্ঞদের সাথে আলোচনা না করেই কোম্পানির কার্যক্রম শুরুর  সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ জন্য কোন জরিপ করা হয়নি। এতে সুবিধা হবে না অসুবিধা – তাও পর্যালোচনা করা হয়নি। অথচ পিডিবিকে ভেঙ্গে ছোট করার জন্য অল্প কিছু কর্মকর্তা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই সিদ্ধান্ত বাতিলের জন্য প্রকৌশলীরা আবেদন জানান।
প্রকৌশলীরা বলেন, বাংলাদেশে সর্বোচ্চ আট হাজার ১৭৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। পিডিবিসহ পাঁচটি কোম্পানি এই বিদ্যুৎ গ্রাহকের কাছে সরবরাহ করছে। এই পরিমান বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ছোট এই দেশে নতুন আরও একটি কোম্পানির প্রয়োজন নেই। পিডিবি’র পদ্ধতিগত লোকসান অনেক কমে এসেছে। বর্তমানে  এই লোকসান ১২ শতাংশ। উন্নত ব্যবস্থাপনায় আরও কমবে। নতুন যে সব কোম্পানি হয়েছে তাদের পদ্ধতিগত লোকসানও প্রায় পিডিবি’র মতই। ফলে আরও একটি কোম্পানি হলেই যে লোকসান কমবে তা ঠিক নয়। বরং এতে ঐ এলাকার মানুষের বিদ্যুৎ ব্যবহারে খরচ বেড়ে যাবে। সাথে সরকারেরও প্রশাসনিক খরচ বাড়বে। কারণ কোম্পানি হলে বেতন কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। তবে বেতন বাড়লেও পিডিবির কেউ কোম্পানিতে থাকতে চান না। প্রকৌশলীরা অভিযোগ করে বলেন, যারা কোম্পানিতে যেতে চাননা তাদেরকে বাধ্যতামূলক পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তারা বলেন, বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ঠ সরকারি প্রায় প্রতিটি কোম্পানির বর্তমানে চেয়ারম্যান বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা। সেজন্য তারাই এই অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ঠরা জানান, পিডিবি ভেঙ্গে অনেকগুলো কোম্পানি হয়েছে। কিন্তু এতে গ্রাহক সেবা বাড়েনি। বরং পিডিবির গ্রাহকের চেয়ে খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ। পিডিবির চাকরিজীবিরা গড়ে মাসে ১৮ হাজার ৮৬২ টাকা বেতন পান। সেখানে ডেসকোর কর্মকর্তারা পান ৬৬ হাজার ১৫৫ টাকা। যা পিডিবি থেকে তিনগুণ বেশি। একই ভাবে ডিপিডিসিতে পান ৩৫ হাজার ১৭৮ টাকা এবং ওজোপাডিকোতে পান ৩৫ হাজার ৯৩১ টাকা।
এদিকে সরকারি এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাজশাহি, রংপুর ও ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন কর্মকর্তা কর্মচারিরা প্রতিবাদ সমাবেশ, মিছিল করে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করছেন।