প্রধানমন্ত্রীর ত্রিদেশীয় সফরের আগে ‘ইন্দো-প্যাসিফিক রূপরেখা’ ঘোষণা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর শুরুর একদিন আগে আনুষ্ঠানিকভাবে ১৫ দফা ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক (আইপিও) প্রকাশ করেছে সরকার।

রোববার (২২শে এপ্রিল) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইপিও প্রকাশ করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের উপস্থিতিতে প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম আইপিও পড়ে শোনান।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক জিডিপিতে ইন্দো-প্যাসিফিক এলাকার সম্মিলিত অংশীদারিত্ব, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অগ্রাধিকার, অধিকতর জলবায়ু কর্মসূচি এবং ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তিগত গতিশীলতা বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিস্থাপকতা এবং সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে মূল নিয়ামক হতে পারে।

আইপিওটি ১৫ দফা উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি করা হয়েছে জানিয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, এতে চারটি নির্দেশক নীতি অনুসরণ করা হয়েছে। এর প্রথমটি হলো- জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পররাষ্ট্রনীতির বাণী ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরী নয়’।

অপর তিনটি নির্দেশক নীতির মধ্যে রয়েছে: (১) জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও সমতা, রাজনৈতিক স্বাধীনতা, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, আন্তর্জাতিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি, সেইসাথে আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদে উল্লিখিত নীতিগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শক্তির প্রয়োগ না করার জন্য এবং সাধারণ ও সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণের জন্য প্রচেষ্টার ওপর ভিত্তি করে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরিচালনার বিষয়ে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। (২) ১৯৮২ সালের ইউএন কনভেনশন অন দ্য ল অফ দ্য সি (ইউএনক্লস)-সহ প্রযোজ্য সংশ্লিষ্ট জাতিসংঘের চুক্তি এবং আন্তর্জাতিক কনভেনশনগুলো মেনে চলা। (৩) টেকসই উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা, মানবিক পদক্ষেপ এবং মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতার জন্য গঠনমূলক আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা।

যেসব উদ্দেশ্যগুলো বাংলাদেশের ইন্দো-প্যাসিফিক দৃষ্টিভঙ্গি ও সম্পৃক্ততাকে পরিচালনা করবে:

১. পারস্পরিক আস্থা ও শ্রদ্ধা জোরদার করা, অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা গড়ে তোলা এবং ইন্দো-প্যাসিফিকের সকলের জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি, নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংলাপ ও বোঝাপড়ার জোরদার করা।

২. ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সামুদ্রিক নিরাপত্তার বিদ্যমান ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা, যার মধ্যে সমুদ্রে জরুরি পরিস্থিতিতে সাড়া প্রদান এবং অনুসন্ধান ও উদ্ধার পরিচালনা করা এবং আন্তর্জাতিক আইন এবং ইউএনক্লস ১৯৮২-সহ প্রাসঙ্গিক আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুযায়ী নেভিগেশন ও ওভার-ফ্লাইটের স্বাধীনতার অনুশীলনকে সমুন্নত রাখা।

৩. ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের অংশীদারদেরসহ আন্তর্জাতিক অস্ত্রবিস্তার রোধ, শান্তিরক্ষা, শান্তি বিনির্মাণ এবং সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টায় অর্থবহ ও ফলপ্রসূ অবদান বজায় রাখা।

৪. আদর্শিক ও ব্যবহারিক উভয় পদক্ষেপের মাধ্যমে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে আন্তর্জাতিক সংগঠিত অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে সমর্থন করা।

৫. একটি ‘শান্তির সংস্কৃতি’র ফ্ল্যাগশিপ এজেন্ডায় বিশ্বব্যাপী নেতৃত্ব প্রসারিত করা, ‘নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা’ এজেন্ডায় গুরুত্ব বাড়ানো, আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি জোরদার করা এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তিপূর্ণ, ন্যায়সঙ্গত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের লক্ষ্যে কাজ করা।

৬. উন্মুক্ত, স্বচ্ছ, নিয়মভিত্তিক বহুপাক্ষিক ব্যবস্থা জোরদার করা, যা ইন্দো-প্যাসিফিক এবং এর বাইরেও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, উন্নয়নের অধিকার এবং সবার জন্য অভিন্ন সমৃদ্ধির মাধ্যমে ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই উন্নয়ন লাভে সক্ষম করে তুলবে।

৭. ভৌত, প্রাতিষ্ঠানিক, জ্বালানি, ডিজিটাল এবং মানব সংযোগ উন্নত করা, পণ্য, পরিষেবা, পুঁজি ও পদ্ধতিগতভাবে মানুষের চলাচলের সুবিধা দান এবং প্রযুক্তি হস্তান্তর, উদ্ভাবন ব্যবহারের সুযোগ লাভ, এবং উন্মুক্ত ও নিরাপদ সাইবারস্পেস এবং মহাকাশে বাইরে দায়িত্বশীল আচরণ জোরদার করা।

৮. ভবিষ্যৎ সঙ্কট ও বিঘ্নগুলোকে আরও ভালভাবে মোকাবেলা করা এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন ও অবাধ বাণিজ্য প্রবাহকে উন্নীত করার জন্য স্থিতিস্থাপক আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক মূল্য শৃঙ্খল তৈরির জন্য দেশীয় কৃষি, উৎপাদন এবং পরিষেবা খাতগুলোকে কাজে লাগানো।

৯. এসডিজি-১৪ এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক আন্তর্জাতিকভাবে সম্মত উন্নয়ন প্রতিশ্রুতিগুলোর অনুসরণে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে মহাসাগর, সাগর, এবং সামুদ্রিক সম্পদের সংরক্ষণ, টেকসই ব্যবহার এবং ব্যবস্থাপনা জোরদার করা।

১০. ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে খাদ্য নিরাপত্তা, পানি সংহতি এবং দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসের প্রয়াস জোরদারে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত থাকা, যার মধ্যে স্বদেশের ভালো অনুশীলনগুলোর বিনিময় করা।

১১. প্রাসঙ্গিক আন্তর্জাতিক কনভেনশন ও প্রতিশ্রুতিগুলোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি, সামুদ্রিক দূষণ এবং পরিবেশের ওপর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ও ক্ষতিকারক প্রভাবগুলোর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য বাস্তবসম্মত কাজ চালিয়ে যাওয়া।

১২. নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি হস্তান্তরসহ সকলের জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইন্দো-প্যাসিফিক দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।

১৩. ভবিষ্যত মহামারি মেকাবেলায় সমন্বিত সাড়াদান ব্যবস্থা গড়ার লক্ষ্যে কাজ করা এবং ভ্যাকসিন, ডায়াগনস্টিকস ও অন্যান্য চিকিৎসার মতো বৈশ্বিক জনসাধারণের পণ্যগুলোতে সকলের অধিকারসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা।

১৪. আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার এবং পারস্পরিক কল্যাণজনক পরিপূরক ব্যবস্থা জোরদারের জন্য উপ-আঞ্চলিক অংশীদার ও প্রাসঙ্গিক সংস্থাগুলোর সাথে সহযোগিতা।

১৫. ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ রূপকল্পের সাথে সঙ্গতি রেখে সকলের অভিন্ন কল্যাণের জন্য বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, গবেষণা এবং উদ্ভাবনে সহযোগিতা জোরদার করা।

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের বেশির ভাগ বড় শক্তি যেমন- যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়া ইতোমধ্যে তাদের নিজস্ব ইন্দো-প্যাসিফিক পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশিত ইন্দোপ্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি অনুযায়ী, প্রশান্ত মহাসাগরের মার্কিন উপকূল থেকে গোটা ভারত মহাসাগর এর অন্তর্ভুক্ত। অস্ট্রেলিয়া থেকে ২০১৭ সালে প্রকাশিত ফরেন পলিসি হোয়াইট পেপারে বলা হয়েছে, পূর্ব ভারত মহাসাগর থেকে প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত ইন্দোপ্যাসিফিক অঞ্চল