প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে গ্যাস সংযোগ দেওয়ায় অভিযোগ, তদন্ত হওয়া উচিৎ

সম্পাদকীয়:

প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে শিল্প প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সংযোগ দেওয়ায় অভিযোগ উঠেছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে। শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে উৎকোচ নিয়ে তিনি এই সংযোগ দিয়েছেন বলে অভিযোগে জানানো হয়েছে।
বিষয়টি তদন্ত করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগকে ব্যবস্থা নিতে বলেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
তবে এ অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি জানিয়েছেন, কিছু লোক সচেতনভাবে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে।
বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ি, ২৯শে আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এবিষয়ে চিঠি দেওয়া (পত্র সংখ্যা ০৩.০০.২৬৯০.০৭৮.২৭০০৭.২০২০-১১১) হয়েছে। চিঠির ‘বিষয়: বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী (মাননীয় প্রধানমন্ত্রী) নাম ব্যবহার করে উৎকোচ গ্রহণ করত: শিল্প প্রতিষ্ঠানে গ্যাসের সংযোগ প্রদানসহ নানাবিধ অনিয়মের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রসঙ্গে’। চিঠিতে সই করেছেন পরিচালক-১১ রূপালী মণ্ডল।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘উল্লেখিত বিষয়ে সূত্রোস্থ পত্র ও সংযুক্তিসমুহের ছায়ালিপি এতদসঙ্গে পেরণ করা হলো। পত্রে বর্ণিত বিষয়াদি পরীক্ষান্তে বিধি মোতাবেক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অবহিত করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’ সূত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব বরাবর আ. লতিফ এর পাঠানো অভিযোগ পত্র।
ওই অভিযোগে বলা হয়েছে, সিলভার নিট কম্পোজিট নামক একটি প্রতিষ্ঠানের আবেদনে লিখিত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘মন্ত্রী মহোদয়ের দফতর থেকে প্রেরিত, আলাপ করবেন।’ আবেদনে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী শেখ হাসিনা, কিংবা প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের দফতরের কারো কোন সই কিংবা সুপারিশ না থাকা সত্ত্বেও শুধু উৎকোচ নিয়ে নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে প্রায় ৬ মাসের পুরনো একটি আবেদন সংযুক্ত করে দু’টি প্রতিষ্ঠানের ফাইল দ্রুততার সঙ্গে পাস করিয়ে নেওয়া হয়। জ্বালানি খাতের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ প্রতিষ্ঠানে তিতাস গ্যাসের মতো জায়গায় প্রধানমন্ত্রীর রেফারেন্স ব্যবহার করে অবৈধভাবে অর্থের বিনিময়ে রাতারাতি দু’টি নথি পাস করিয়ে নিয়েছেন।
এতে মেসার্স সিলভার নিট কম্পোজিট টেক্সটাইল লিমিটেডের একটি আবেদন যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগে, তিতাস গ্যাসের আরও নানা রকম অনিয়মের কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক যোগদান করার পর থেকে সিস্টেম লস বেড়ে গেছে। আগে যেখানে ৫ থেকে ৬ শতাংশ সিস্টেম লস ছিল, এখন সেখানে ৮ থেকে ৯ শতাংশ দেখানো হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে সিস্টেম লস ১২ থেকে ১৩ শতাংশ হবে। এতে তিতাস গ্যাস সৃষ্টির পর থেকে এবারই প্রথম লোকসানের স্বীকার হয়েছে।
এছাড়া আউটসোর্সিংয়ে লোকবল নিয়োগে দুর্নীতি, একাধিক গাড়ির অপব্যবহারসহ অনেক অভিযোগ আনা হয়েছে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের যুগ্ম সচিব (প্রশাসন-২) মোহাম্মদ ফারুক হোসেন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে পাঠানো চিঠি আমরা পেয়েছি। এ বিষয়ে একটি ফাইল তোলা হয়েছে। ফাইল অনুমোদন হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পেট্রোবাংলায় পাঠানো হবে।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশীদ মোল্লাহ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চিঠির বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। আমাকে সরাতে একটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। তারা নানা রকম মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর চেষ্টা করছে। প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙানোর প্রশ্নই আসে না। তিতাসের কিছু অসাধু কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় একটি গ্রুপ নাখোশ হয়েছে। তারাই মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে।
তদন্তের পর আসল গঠনা নিশ্চয় বের হয়ে আসবে।
দুটো ঘটনায় নিন্দনীয়। যদি ব্যবস্থাপনা পরিচালক এই কাজ করে থাকেন তবে তা বড় অন্যায়। সেক্ষেত্রে অভিযোগকারি ঠিক কাজই করেছেন। কিন্তু যদি ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কথা অনুযায়ি ষড়যন্ত্র হয়ে থাকে তবে সেটাও তদন্ত হওয়া উচিৎ। এভাবে চলতে দেওয়া ঠিক নয়।
এটা ঠিক যে তিতাতে নানা দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকলেও অসাধু কর্মকর্তার যোগ সাজসে অনেকে লাইন পাচ্ছেন। নানা অনিয়ম বাসা বেঁধেছে তিতাতে। সেগুলোও চিহ্নিত করে তদন্ত হওয়া উচিৎ।