ফসলী জমিতে বিদ্যুৎকেন্দ্র চায় না পটুয়াখালী বাসী
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। যেখানে বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে সেখানে বছরে তিনটে ফসল হয়। তাই সেখানে বিদ্যুৎকেন্দ্র না করার দাবিতে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী।
শুক্রবার সকালে ইউনিয়নের নিশানবাড়িয়া গ্রামে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
এই কর্মসূচিতে কৃষক, নারী, ব্যবসায়ীসহ শত শত মানুষ অংশ নেন। এতে সভাপতিত্ব করেন এলাকার কৃষক প্রতিনিধি আবদুর রশিদ তালুকদার। কর্মসূচি চলাকালে বক্তব্য দেন স্থানীয় ব্যবসায়ী গাজী রাইসুল ইসলাম। তিনি বলেন, তিন ফসলি জমি, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, বিভিন্ন ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং কবরসহ শত বছরের পুরোনো বসতভিটা কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়াই অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষসহ কৃষক পরিবারগুলো অপূরণীয় ক্ষতির মুখে পড়ছে।
কৃষক শওকত হোসেন তালুকদার বলেন, সরকারের এক শ্রেণির কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এই জমি নিয়ে মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল করেছে।
বক্তারা নতুন করে জমি অধিগ্রহণপ্রক্রিয়া বন্ধের আহ্বান জানান। না হলে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।
মানববন্ধনে অংশ নেয়া উত্তর নিশানবাড়িয়া গ্রামের সালেহা বেগম বলেন, ‘হুনছি মোগো জমি-জিরাত ব্যাবাক লইয়া যাইবে। তিনডা ফসল যদি যায়, মোরা বাঁচমু ক্যামনে?’
গণ্ডমারি গ্রামের কৃষক সোহেল তালুকদার বলেন, এর আগেও জমি দিয়েছি। সে সময় বলা হয়েছিল আর লাগবে না। আবার নতুন করে জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। আর কোনো জমি দেয়া যাবে না।
রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল) ধানখালী ইউনিয়নের লোন্দা মৌজা এলাকায় ১৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র করার জন্য কাজ শুরু করেছে। এর বাইরেও একাধিক সংস্থার জন্য জমি অধিগ্রহণের চিন্তাভাবনা চলছে। এর আগে একই ইউনিয়নে ১৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজের জন্য ১ হাজার ২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। পায়রার কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে।
আরপিসিএলের প্রকল্প পরিচালক মো. সেলিম ভূঁইয়া বলেন, প্রকল্প এলাকার ২৫ একর জমির মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ৩৪২টি পরিবারের জন্য গৃহনির্মাণ করে দেয়া হবে। তা ছাড়া এখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, কমিউনিটি সেন্টার, জলাধার, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাসহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। এ জন্য ৯২ কোটি টাকা খরচ হবে। ইতিমধ্যে একনেক তা অনুমোদন দিয়েছে। এর বাইরে প্রত্যেক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি সরকারি নিয়ম অনুযায়ী জমি, বসতবাড়ি, পুকুর, গাছপালার জন্য দামের তিন গুণ মূল্য পাবেন। তাই মনে করি, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই।
উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) খন্দকার রবিউল ইসলাম বলেন, আরপিসিএলকে ২৫ একর জমি বুঝিয়ে দিয়েছি। তারা প্রায় এক হাজার একর জমি চেয়েছে। বাকি জমি মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। এর বাইরে অন্য কোনো সংস্থার জমি অধিগ্রহণ করার বিষয় জানা নেই।