ফুলবাড়ীতে কয়লা তোলার চেষ্টার প্রতিবাদে লন্ডনে বিক্ষোভ
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন চেষ্টার প্রতিবাদে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি যুক্তরাজ্য শাখার ডাকে বিক্ষোভ হয়েছে লন্ডনে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক মাইনিং কোম্পানি জিসিএমের বার্ষিক সাধারণ সভা চলাকালে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ওই বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, ২০০৬ সালে সাধারণ মানুষের বিক্ষোভের মুখে ফুলবাড়ী থেকে বিতাড়িত হওয়া এশিয়া এনার্জি এখন নাম পরিবর্তন করে জিসিএম নামে আবার বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছে।
শুক্রবার পশ্চিম লন্ডনের হ্যামিলটন প্যালেসে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মাইনিং কোম্পানি জিসিএমের বার্ষিক সাধারণ সভা চলাকালে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ওই বিক্ষোভ হয়েছে। তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি যুক্তরাজ্য শাখার ডাকে ফুলবাড়ী সলিডারিটি কমিটি, লন্ডন মাইনিং নেটওয়ার্ক ও যুক্তরাজ্য সোশ্যালিস্ট পার্টিসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা সভাস্থলের বাইরে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তাঁরা জিসিএম এর বিরুদ্ধে নানা স্লোগান সংবলিত ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
জিসিএমকে একটি অফিস সর্বস্ব কোম্পানি হিসেবে চিহ্নিত করে বিক্ষোভকারীরা বলেন, ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করা হলে প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার পরিবার বাস্তহারা হবে। ধ্বংস হবে ১৪ হাজার ৬০০ হেক্টর কৃষিজমি। এর নেতিবাচক প্রভাব থেকে জীববৈচিত্র্য, প্রাকৃতিক সম্পদ ও সৌন্দর্যের আধার সুন্দরবনও রেহাই পাবে না।
বিক্ষোভকারীরা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি এড়াতে যুক্তরাজ্য সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। অথচ জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক শিকার বাংলাদেশ ভাবছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা। এটা অগ্রহণযোগ্য বলে তাঁরা মন্তব্য করেন।
বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রকাশিত জিসিএমের প্রতিবেদনে দেখা যায়, অন্য কোনো দেশে এই কোম্পানির কোনো কার্যক্রম নেই। কেবল ফুলবাড়ীতে কয়লা উত্তোলনের অনুমতি আদায়ই কোম্পানির একমাত্র লক্ষ্য। কোম্পানিটি যুক্তরাজ্যের প্রধান শেয়ার বাজারেও নিবন্ধিত নয়। অলটারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট মার্কেটে (আইএএম) নিবন্ধিত এই কোম্পানি ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে নয় লাখ ৩৭ হাজার পাউন্ড লোকসান গুনেছে। কোম্পানির নির্বাহী চেয়ারম্যান মাইকেল ট্যাঙ প্রতিবেদনে এই বলে বাহবা নেওয়ার চেষ্টা করেছেন যে, খরচ কমানোর নানা উদ্যোগের ফলে কোম্পানির লোকসানের হার আগের বছরগুলোর তুলনায় বেশ কমে এসেছে। আগের দুই অর্থবছর কোম্পানির লোকসানের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১৩ লাখ পাউন্ড ও ৩২ লাখ পাউন্ড।
কোম্পানির চেয়ারম্যান মাইকেল ট্যাঙের প্রতিবেদনে জানানো হয়, সরকারের পাশাপাশি ফুলবাড়ীর স্থানীয় বাসিন্দারের উদ্বেগ নিরসনে তাঁরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০১২ সালে আবার কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকে তাঁরা স্থানীয় আড়াই হাজার লোকের সঙ্গে কথা বলেছেন। শেষ পর্যন্ত এই চুক্তি বাংলাদেশ সরকারকে সন্তুষ্ট করার ওপর নির্ভর করছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। বাংলাদেশ সরকার কয়লাভিত্তিক ১৮টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কথা বিবেচনা করছে বা এর মধ্যে চুক্তি করেছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে কোম্পানির শেয়ার হোল্ডারদের ফুলবাড়ী চুক্তি সম্পাদনে আশার আলো দেখানো হয়।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির যুক্তরাজ্য শাখার আহ্বায়ক মুখলিসুর রহমান, সদস্য সচিব আক্তার সোবহান মাসরুর, ওয়ার্কার্স পার্টির সম্পাদক ইসহাক কাজল, সোশ্যালিস্ট পার্টির পিট মেসন, ভারতে নামগিরি আন্দোলনের ফয়েল ভেদাত্ম সংগঠনের সমরেন্দ্র দাস, স্থানীয় কৃষক স্যাম সন্ডার্স প্রমুখ।
সৌজন্যে: প্রথম আলো