ফুলবাড়ীর মতো রামপাল আন্দোলন সফলের আহ্বান
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত কয়লা খনির বিরুদ্ধে আন্দোলন থেকে ‘শিক্ষা নিয়ে’ রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্রবিরোধী আন্দোলন ‘সফল’ করার অঙ্গীকার করেছে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।
শুক্রবার ফুলবাড়ী আন্দোলনের দশক পূর্তিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে সেই আন্দোলনে নিহতদের স্মরণ করার পর এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এই আহ্বান জানানো হয়।
জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ সমাবেশে বলেন, কোনো ন্যায্য সংগ্রাম কখনো বিফলে যায় না, ফুলবাড়ীতে সেটা প্রমাণিত হয়েছে। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের সুন্দরবনে বিদ্যুৎকেন্দ্রবিরোধী আন্দোলন এগিয়ে নিতে হবে।
জাতীয় কমিটি ছাড়াও সিপিবি, বাসদ (মার্ক্সবাদী), বাসদ (খালেকুজ্জামান), ওয়ার্কার্স পার্টি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা, গণসংহতি আন্দোলন, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশনসহ বিভিন্ন বাম সংগঠন শুক্রবার ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।
পরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ফুলবাড়ীতে বিজয়ের কথা শুধু স্মরণে করে আত্মতৃপ্তিতে ভুগলে চলবে না।
অধ্যাপক এমএম আকাশ বলেন, ফুলবাড়ী আন্দোলনে তিনটি বিষয় ছিল, যেগুলো থেকে শিক্ষা নিলে রামপালের আন্দোলনও সফল হবে। প্রথমত, ফুলবাড়ীতে জনগণকে ব্যাপকভাবে উদ্বুদ্ধ করা গিয়েছিল ও তারা তাদের স্বার্থ যথাযথভাবে বুঝতে পেরেছিলেন। দ্বিতীয়ত, সমগ্র জাতি ওই আন্দোলনের পক্ষে ছিল। এবং তৃতীয়ত, শাসক শ্রেণি দু’ভাগে বিভক্ত ছিল, ক্ষমতার বাইরের অংশ আওয়ামী লীগ আন্দোলনের পক্ষে এবং ক্ষমতাসীন বিএনপি বিপক্ষে ছিল। তিনি বলেন, রামপাল ইস্যুতে ক্ষমতার বাইরের অংশ বিএনপি আন্দোলনের পক্ষে আছে; কিন্তু ওই এলাকার জনগণকে সেভাবে উদ্বুদ্ধ করে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করা যায়নি। তাদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে।
সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্সের পরিচালনায় শহীদ মিনারের সমাবেশে অন্যদের মধ্যে কলামনিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বক্তব্য দেন।
২০০৬ সালের এই দিনে ফুলবাড়ীসহ ছয় থানার বাঙালি আদিবাসী নারী-পুরুষ শিশু বৃদ্ধসহ বহু মানুষ কয়লা ক্ষেত্র উম্মুক্ত পদ্ধতিতে খনন এবং ফুলবাড়ী কয়লা প্রকল্পের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে সমাবেশ করছিল। সমাবেশে সাধারণ মানুষের ওপর গুলি চালায় বিডিআর, পুলিশ। এতে আমিনুল, সালেকিন ও তরিকুল মারা যান। গুলিবিদ্ধ হন ২০ জন, আহত হন দুই শতাধিক।
এরপর সারাদেশের মানুষের প্রতিবাদের মুখে ৩০ আগষ্ট চারদলীয় জোট সরকার ‘ফুলবাড়ী চুক্তি’ সাক্ষর করতে বাধ্য হয়। ২০০৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফুলবাড়ীতে এক জনসভায় ফুলবাড়ী চুক্তির প্রতি পূর্ণ সংহতি জানিয়ে ক্ষমতায় গেলে তা পূর্ণ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি।