ফুলের মতো সৌরকোষ

দেখতে ফুলের মতো হলেও এটি আসলে একটি সৌরকোষ। শুধু যে দেখতেই সুন্দর, তা নয়। সূর্যের আলো ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনেও এটি বেশ কাজের। আবার সামান্য আলোতেও এই সৌরকোষ বেশ কার্যকর। নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনের এই ব্যবস্থাটি তৈরির কৃতিত্ব জাপানের একজন গবেষকের।
টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ সেন্টার ফর অ্যাডভান্স সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির গবেষক হিরোশি সেগাওয়ার তৈরি পরিবেশবান্ধব সৌরকোষটি কম দামে পাওয়া যাবে। পাতলা এই সৌরকোষের নাম দেওয়া হয়েছে অ্যানাবেল (সাদা রঙের একধরনের ফুলের নাম)। সেগাওয়া আশা করেন, তাঁর ‘ডাই-সিন্থেসাইজড’ সৌরকোষ বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি বাসাবাড়ির সৌন্দর্যও বাড়াবে।
অ্যানাবেল সৌরকোষটি আসলে আট ইঞ্চি লম্বা একটি কাঠের বাক্স। এটির নকশা করা হয়েছে জাপানের ঐতিহ্যবাহী দরজার মতো করে। আর বাক্সটির চারপাশে রয়েছে ফুলের ছবিসংবলিত কাচের দেয়াল। অ্যানাবেলের কার্যপদ্ধতি প্রসঙ্গে সেগাওয়া বলেন, সূর্যের আলো কাচের ওপর পড়লে বিদ্যুৎ উৎপাদনপ্রক্রিয়া শুরু করে। সৌরকোষের কাচের দেয়ালে থাকা ফুলের ‘পাপড়ি’ থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। বিদ্যুৎশক্তি সরবরাহের পাশাপাশি শক্তি সঞ্চয় করেও রাখতে পারে অ্যানাবেল। আর এতে সঞ্চিত বিদ্যুৎশক্তি দিয়ে দুটি স্মার্টফোন চার্জ দেওয়া সম্ভব।
অধ্যাপক সেগাওয়া আরও বলেন, অ্যানাবেল যখন বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করে সঞ্চিত করতে থাকে, তখন এতে আঁকা ‘পাপড়ি’ নীল হতে শুরু করে। আর সঞ্চিত শক্তি কমতে থাকলে পাপড়ির রংও সাদা হতে থাকে, ঠিক প্রাকৃতিক ফুলের মতোই।
জাপানে তিন বছর আগে ভূমিকম্প ও সুনামিতে ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটে। ফলে দেশটিতে বিদ্যুৎ-সংকট দেখা দেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির পূর্ব উপকূলে গড়ে উঠেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বায়ুভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। তবে এতেও দেশের চাহিদা পুরোপুরি পূরণ করতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। তাই জনগণকে আরও বেশি নবায়নযোগ্য শক্তির ওপর নির্ভরশীল ক্ষুদ্র বিদ্যুৎ উৎপাদনব্যবস্থা ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিতে হচ্ছে।
জাপানে বিদ্যুৎ-ব্যবস্থার বর্তমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে সেগাওয়া বলেন, সাধারণ জনগণ দেশের বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদনের অনেক ব্যাপারে অখুশি। পরমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র জনগণ পছন্দ করছে না। তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রচুর পরিমাণ কয়লার আবর্জনা তৈরি হয়, যা পরিবেশ দূষিত ও নোংরা করে। সৌরকোষ বা সৌর প্যানেল ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন একটি ভালো ব্যবস্থা এবং এতে পরিবেশদূষণ রোধ করা যায়। কিন্তু এটি প্রচুর জায়গা দখল করে। আর টারবাইন ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে পাখিদের ক্ষতি হয়। এ ছাড়া এতে শব্দদূষণও হয়। কিন্তু অ্যানাবেল এসব নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য থেকে মুক্ত।
সূর্যের আলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে অ্যানাবেল এখনই সিলিকনভিত্তিক সৌর প্যানেলের স্থান দখল করে নেবে বলে এমনটা মনে করেন না সেগাওয়া। তবে দ্রুত বর্ধনশীল নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে এটি উপযোগী হতে পারে অবশ্যই। জাপানে বায়ুভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনব্যবস্থা দ্রুত বিস্তার লাভ করলেও এ ধরনের নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন এখনো সীমিত পর্যায়ে রয়ে গেছে। নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে দেশটির জাপানের মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ৪ দশমিক ৭ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। ব্রিটেনে নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে আসে ১০ দশমিক ৪ শতাংশ বিদ্যুৎ। আর জার্মানিতে মোট বিদ্যুৎশক্তির ২০ দশমিক ১ শতাংশই আসে নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে।
জাপানে সূর্যের আলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে অনেক সৌর প্যানেল বসানো হয়েছে। তবে এই খাত থেকে শক্তি উৎপাদন যথেষ্ট নয়, কারণ সূর্যের আলোর অভাব। এ ক্ষেত্রে অ্যানাবেল একটি ভালো বিকল্প হতে পারে। কারণ, এটি অল্প আলোতেও কার্যকর।