বাঁশখালীর ৮০ ভাগ ক্ষতি হলে বিদ্যুৎ প্রকল্প হবে না

‘৮০ ভাগ লাভের বিনিময়ে ২০ ভাগ ক্ষতি মেনে নেব। তবে ৮০ ভাগ ক্ষতি হলে বিদ্যুৎ প্রকল্পটি মেনে নেব না’—কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন নিয়ে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা সদরে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন স্থানীয় বাসিন্দা রিদুয়ানুল হক। তাঁর বক্তব্য, বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য মানুষ মারতে হবে না। গ্রামবাসীকে পরিবেশবান্ধব কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র দেখার ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে এর ভালো-মন্দ বুঝতে পারে মানুষ।
‘বাঁশখালীতে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন’ নিয়ে রোববার দুপুরে উপজেলা সদরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এ মতবিনিময় সভা হয়। সভায় উপস্থিত ব্যক্তিদের বড় অংশই ছিলেন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মী।
‘গণ্ডামারা ইউনিয়ন বাঁচাও আন্দোলন’ এবং ‘বসতভিটা ও গোরস্থান রক্ষা কমিটির’ নেতৃস্থানীয় কেউ সভায় উপস্থিত ছিলেন না। ছিলেন না নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরাও।
এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন এসএস পাওয়ার লিমিটেড ও চীনের দুটি প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে গণ্ডামারা ইউনিয়নে ২৫০ কোটি ডলার ব্যয়ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করা হচ্ছে। ৪ এপ্রিল গণ্ডামারার হাদিরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পক্ষে-বিপক্ষের লোকজন সমাবেশ ডাকেন। এ নিয়ে সংঘর্ষে দুই ভাইসহ চারজন নিহত হন।
মতবিনিময় সভার শুরুতে নিহত চারজনের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। পরে বিদ্যুৎ বিভাগের পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন প্রজেক্টরের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অবস্থা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, পরিবেশের ক্ষতি হোক প্রধানমন্ত্রী নিজেও চান না। তিনি কড়া নির্দেশ দিয়েছেন। স্থানীয় লোকজনের ক্ষতি করে প্রকল্পটি করা হবে না।
সভায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) আহমেদ কায়কাউস বলেন, পরিবেশের ক্ষতি হবে বলে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। এতে বাঁশখালীর পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না বলে তিনি দাবি করেন।
মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। তিনি বলেন, সহজ-সরল মানুষকে ভুল বুঝিয়ে রাস্তায় নামানো হয়েছে। এলাকাবাসীকে গুজবে কান না দিতে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, যারা ঘটনার ইন্ধন দিয়েছে, তাদের উপযুক্ত বিচার হতে হবে। তিনি বলেন, সেদিন চারজন পুলিশের গুলিতে নয়, সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন। ১৪৪ ধারা জারি করা সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। নইলে আরও মানুষের প্রাণ যেত।
তবে ঘটনার পর থেকে বাঁশখালীর স্থানীয় লোকজন ও নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা দাবি করে আসছেন, পুলিশের গুলিতেই চারজন নিহত হয়েছেন।
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন চৌধুরী, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি তাজুল ইসলাম, উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেহেনা আক্তার, উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক শ্যামল দাশ প্রমুখ। তাঁরা দাবি করেন, বাঁশখালীর গণ্ডামারার সহজ-সরল লোকজনকে ভুল বুঝিয়ে লাশ ফেলে রাজনীতি করার জন্য একটি মহল কাজটি করেছে। পরিবেশের ক্ষতি না হলে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে তাঁরা সহযোগিতা করবেন। আর ক্ষতি হলে তাঁরাই তা প্রতিরোধ করবেন। তবে তাঁরা দাবি করেন, প্রকল্পটিতে পরিবেশের ক্ষতি হবে না।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল, সাতকানিয়া সার্কেলের এএসপি কামরুল হাসান, বাঁশখালীর উপজেলা চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান বদরুল আলম,  বাঁশখালীর  গণ্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফ উল্লাহ, এস আলম গ্রুপের পরিচালক শহীদুল আলম প্রমুখ।