বাংলাদেশের জন্য ৭৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ করবে ভারতীয় কোম্পানি

ভারতের দুই বড় কোম্পানি বাংলাদেশের জন্য সাত হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করতে যাচ্ছে।  এরমধ্যে তিন হাজার ২০০ মেগাওয়াট করবে আদানী পাওয়ার কোম্পানি লি. এবং চার হাজার ২০০ মেগাওয়াট করবে রিলায়েন্স কোম্পানি। এছাড়া সব মিলিয়ে ভারত বাংলাদেশে বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতে ১৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ চুক্তি করতে যাচ্ছে।
আসন্ন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি’র ঢাকা সফরের সময় এসব চুক্তি করা হতে পারে। নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতে ভারতের অংশগ্রহণ আরও বাড়বে বলে সংশ্লিষ্ঠরা মনে করছেন।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ইতোমধ্যে সমঝোতা চুক্তির খসড়া তৈরি করা হয়েছে।
সমঝোতার খসড়া অনুযায়ি, আদানী ভারতের কোন এক রাজ্যে ৮০০ মেগাওয়াট করে দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করবে। এই বিদ্যুতের পুরোটা বাংলাদেশে রপ্তানি করবে। তবে ভারতের রাজ্য ভিত্তিক আইন অনুযায়ি মোট উৎপাদনের ১৮ শতাংশ দিতে হবে ঐ রাজ্যে। বাকি বিদ্যুৎ বাংলাদেশ পাবে। কয়লা দিয়ে এই বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। আদানী আরও ৮০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার দুটো কেন্দ্র করবে। বাংলাদেশের মধ্যেই এই কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এটিও কয়লা ভিত্তিক কেন্দ্র হবে। বর্তমান বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন নীতি অনুযায়ি এই কেন্দ্র করা হবে। এই দুই বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে প্রায় চার বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হবে।
ভারতের আর এক বড় কোম্পানি রিলায়েন্স গ্রুপ বাংলাদেশে ৭৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার চারটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করবে। বাংলাদেশের মধ্যে কোন এক স্থানে এই কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ৫০ কোটি ঘনফুট এলএনজি আমদানির টার্মিনাল করবে। এছাড়া ভারতের অরুনাচলের কানাই-এ এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হবে। এবিষয়ে ভারতে সরকারের সাথে রিলায়েন্সের সমঝোতা চুক্তি হয়েছে। এই এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রায় পুরোটা বাংলাদেশে রপ্তানি করবে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন এনার্জি বাংলাকে বলেন, বাংলাদেশে বিদ্যুৎখাতে এটি হবে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ। আপাতত এবিষয়ে একটি সমঝোতার খসড়া তৈরী করা হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি’র বাংলাদেশ সফরের সময় এই সমঝোতা চুক্তি হতে পারে বলে তিনি জানান।
ভারত থেকে বর্তমানে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। আরও ১০০ মেগাওয়াট চলতি বছরের ডিসেম্বরে আসা শুরু হবে। নতুনভাবে আরও ৫০০ মেগাওয়াট আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে ভারতের সরকারি ও বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ বাড়ছে।
বিপিসি সূত্র জানায়, ভারতের আরেক শিল্প গোষ্ঠি হিরানন্দানি পশ্চিমবঙ্গের দীঘা উপকূলের কাছে সমুদ্রে একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করছে। খুলনা অঞ্চলের জন্য এখান থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্যাস আমদানির আলোচনা চলছে। এছাড়া ভারতের আাসমের নুমালিগড় থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে প্রতি বছর ১০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল আমদানির বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত। এখন পাইপ লাইন স্থাপনে জরিপ কাজ চলছে। নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরে এই দুই প্রকল্প নিয়েও চুক্তি হতে পারে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সাথে বিদ্যুৎ খাতের আরও কয়েকটি প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হবে। বহরমপুর (ভারত)-ভেড়ামারা (বাংলাদেশ) গ্রিড আন্তঃসংযোগ এর ক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে ভারত থেকে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানী, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানী, বহরমপুর-ভেড়ামারা বিদ্যমান লাইনের মাধ্যমে ভারতের বিদ্যুৎ বাজার থেকে আরও ৩০-৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানী, ভারতের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং বাংলাদেশের মধ্যে আন্তঃসংযোগ প্রতিষ্ঠার জন্য উচ্চ ক্ষমতার মাল্টি টার্মিনাল এইচভিডিসি বাই-পোল সঞ্চালন লাইন নির্মাণ সংক্রান্ত প্রকল্পের  অগ্রগতি নিয়ে পর্যালোচনা করা হবে। এরমধ্যে নতুন ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আগামী ২০১৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশে আমদানি করা সম্ভব হবে।
রামপালে বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশীপ পাওয়ার কোম্পানীর এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার মৈত্রী সুপার থারমাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অর্থায়ন নিয়েও আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
এছাড়াও নেপাল ও ভুটান থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আমদানীর বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
আগামী ২০১৭ সালের মধ্যে ভারত থেকে বাংলাদেশ প্রায় এক হাজার ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করবে। আর পালাটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে চলতি বছরের মধ্যে বাংলাদেশ ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাবে।