বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বাংলাদেশ দুর্যোগের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। গত কয়েক দশক এর মাত্র বেড়েছে। নানা দুর্যোগ মাথায় নিয়ে এই জনপদের মানুষের পথ চলা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর মানুষের সৃস্টি দুর্যোগ। এই দু্বই দুর্যোগ সহ্য করতে করতে এই জনপদের মানুষ খিটমিটে স্বভাবের হয়েগেছে। ভয় আতঙ্কক আর অবিশ্বাস সব সময় কাধে চেপে আছে।
দুর্যোগ মানে আগে মনে করা হতো উত্তরে বন্যা আর উপকূলে ঝড়। কিন্তু এখন এই দুইয়ের সাথে আরো অনেক কিছু যোগ হয়েছে। খরায় ফসল হয়না। পানি নেই। খাওয়ার পানি তুলতে গেলে পাওয়া যায় না। পানি স্তর নিচে নেমে গেছে। শহরে বাতাসে বিষ। শব্দে দূষণ। কখন কোন ভবন ধ্বসে চাপা পড়তে হয়। সে ভয় পিছু ছাড়ে না। উপকূলে নানা অসুখ। জলবায়ু পরিবর্তনে আবহাওয়া পরিবর্তন তো আছেই।
এখনই অনেক নদীতে পানি নেই। উজানে সে পানি আটকে দেয়া হয়েছে। পানি নিয়ে আগামীতে যুদ্ধ হবে। যুদ্ধ এখন চলছে মাটির নিচের সম্পদ নিয়ে। পানি নেই আর মাটির নিচের সম্পদ তোলা দুটোতেই দুর্যোগ তৈরী করে। আর এ দুর্যোগ মানুষের সৃস্টি। আর মানুষের সৃস্টি করা এই দুর্যোগে মন খারপ করে পৃথিবী তার নিজের ভেতর থেকে মাঝে মাঝে প্রচলিত নিয়মের ব্যত্যয় ঘটায়। তাতে আমাদের ছন্দ পতন ঘটে। আর এই ছন্দ পতনকে আমরা বলি দুর্যোগ। আমরা আমাদের মত করে সুখ সাছন্দ চাইবো কিন্তু ছন্দ পতন চাইবো না। এজন্য প্রয়োজন ব্যবস্থাপনা।
বাংলাদেশের উত্তরে বছরের অনেকটা সময় খরা থাকে। অথচ যদি আরো একটু উত্তরে যাওয়া যায়, হিমালয়ে। তবে দেখা যাবে প্রচুর পানি অকারণে ঝরে যাচ্ছে। যে ঝরে যাওয়া পানির অংশীদার আমরাও। সেই পানি ঝরে যাওয়ার আগে সম্পদে পরিনত করা যেতে পারে। হিমালয়ের পানি আটকে বিদ্যুত্ উত্পাদন করা যেতে পারে। তবে পুরো উপমহাদেশের বিদ্যুত্ চাহিদা মেটানো সম্ভব। তখন আর মাটির নিচের সম্পদ তুলতে পৃথিবীকে খোড়াখুড়ির প্রয়োজন হবে না। আনরা অন্নত কিছু দিন দুর্যোগ থেকে বাচঁতে পারবো। এটা আন্থলিক রাজনৈতিক নেতাদের সিদ্ধান্তের বিষয়।
আধুনিক যন্¿ের যুগে ভূমিকম্প ছাড়া সব দুর্যোগ আগাম জানা যায়। মানুষের তৈরী দুর্যোগ বিষয়ে যেমন জানা যায়। তেমনই জানা যায় প্রাকৃতিক দুর্যোগও। ফলে এখন অনেক কিছুতেই আগাম সজাগ হওয়া সম্ভব। জাতিসংঘ এক গবেষণায় বলেছে, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় এক ডলার খরচ করলে রিলিফসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ১০ ডলার খরচ কমে আসবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার বাজেটের বড় অংশ খরচ হয় রিলিফের জন্য। রিলিফ থেকে বেরিয়ে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য অনেক বেশি খরচ করতে হবে।
দুর্যোগ সবার জন্য। ঝড় এলে বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর মানুষকে ক্ষতি করবে, অন্যরা বেঁচে যাবে তা নয়। দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের আদর্শ মনে করা হয়। কিন্তু সব ধরনের দুর্যোগ নয়। কেবল ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আদর্শ। ১৯৭০ সালের ঝড়ের কথাই আলোচনায় আসে। ১৯৭০ সালের পর থেকে আমরা রিলিফনির্ভর ছিলাম। এখন বেরিয়ে আসছি। বিভিন্নভাবে ঝুঁকি মোকাবিলার দক্ষতা বাড়াতে হবে। এখানে সবার ভূমিকা আছে।
বাংলাদেশে সেচ্ছাসেবকের অভাব নেই। বিদেশীরা যেটা ভাবতেই পারে না। রানা প্লাজার বড় অংশের উদ্ধার কাজ করেছে সাধারণ মানুষ। উপকূলের যতগুলো দুর্যোগ হয়েছে সবগুলোতে প্রাথমিক উদ্ধার কাজ করে সাধারণ মানুষ। অর্থের বিনিময় ছাড়া এই শক্তি কাজে লাগানো সম্ভ্ভব। তাদের একত্রিত করে উদ্ধার উপযোগি করে ব্যবহার করার উদ্যোগ থাকতে হবে।
রানাপ্লাজা ধ্বসের ঘটনা আমাদের মনে আছে। একটি ভবন ধ্বসের দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে কত দিন লাগবে তা অজানা। মৃত মানুষগুলোর ক্ষত তো জীবনেও কাটবে না। তবে অর্থনৈতিক যে ক্ষতি হয়েছে? তাই আমরা এখনো কাটিয়ে উঠতে হিমশিম খাচ্ছি। গামেন্টস শিল্কেপ্প নানা খড়গ নেমে আসছে।
এক ভবন ধ্বসেই পৃথিবী জুড়ে তোলপাড়। এমন কত ভবন আছে তা কে জানে? ঢাকা শহরের অনেক ভবন এখন ঝুঁকিপূর্ণ। এরমধ্যে আছে স্কুল কলেজ হাসপাতালও। এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবন যে কোন সময় দুর্যোগ ডেকে আনতে পারে। আমরা সে বিষয়ে কি সজাগ?
মানুষের সৃস্টি করা দুর্যোগে সহায়তার হাত পাওয়া যায় না। বরং সে হাত পারলে অনেকে গুটিয়ে নেয়। পাশে অনেকে থাকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে। যদিও সে দুর্যোগও কাম্য নয়।
বড় দুর্যোগে অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজব্যবস্থা সবকিছুকে দুর্বল করে দেয়। বারবার দুর্যোগ এসে আমাদের অর্থনীতিকে দুর্বল করে দিচ্ছে। তাই বাংলাদেশকে আরও শক্তভাবে দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হবে। একটা সময় ছিল দুর্যোগ হলেই ভাল। ত্রাণ পাওয়া যায়। দুর্যোগে চেয়ারম্যান লাভবান হয়। সে দিন আজ নেই।
দীর্গ মেয়াদে এবং স্বল্প মেয়াদে দুর্যোগ মোকাবেলায় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত খুব জরুরী। সেটা দেশের মধ্যে এবং বিশ্ব জুড়ে। রাজনৈতিক নেতৃত্বে এখনই এক হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কিভাবে এই পৃথিবীকে রক্ষা করা হবে। সিদ্ধান্ত নিতে আজই।