বাংলাদেশে বিদ্যুৎ দিতে একমত নেপাল, ডিসেম্বরে পরের বৈঠক

নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আমদানি এবং যৌথ বিনিয়োগে নেপালে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন বিষয়ে একমত হয়েছে উভয় দেশ। এবিষয়ে আগামী ডিসেম্বরে পরবর্তী বৈঠক হবে। এছাড়া বাংলাদেশ নেপালে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
বুধবার হোটেল সোনারগাঁও এ বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা সংক্রান্ত বাংলাদেশ-নেপাল মন্ত্রী পর্যায়ের এক বৈঠকে উভয়ে একমত হয়। বৈঠক শেষে অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে একথা জানানো হয়। বলা হয়, নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আনাতে ভারতের কোন আপত্তি নেই।
বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এবং নেপালের পক্ষে নেতৃÍ^ দেন সেদেশের জ্বালানি মন্ত্রী রাধা কুমারী গয়ালী। বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মনোয়ার ইসলাম, বাংলাদেশে নিযুক্ত নেপালের এ্যাম্বেসেডর আরি কুমার সারিস্থাসহ অন্যরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে উভয়মন্ত্রী জানান, বৈঠক ফলপ্রসু হয়েছে। নভেম্বরে নেপালে সার্ক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। তার পরপরই ডিসেম্বরে কাঠমুন্ডুতে বিদ্যুতের বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
গতকালের বৈঠকে সার্ক অঞ্চলের বর্তমান পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যৎ বিদ্যুৎ চাহিদা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, সার্ক অঞ্চলে বিদ্যুতের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।
উন্নয়নের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চাহিদা । আর এই চাহিদা মেটাতে নেপালের জলবিদ্যুৎ অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে। নিজেদের উন্নয়নের স্বার্থে যৌথভাবে এই খাত উন্নয়ন করতে হবে। বাংলাদেশ নেপাল ও ভারত যৌথভাবে এই খাত উন্নয়নে কাজ করবে। কিভাবে একসাথে কাজ করা যায় সে বিষয়ে একটি ধারণাপত্র তৈরী করার বিষয়েও উভয় দেশ একমত হয়েছে। বাংলাদেশ নেপালে তেল গ্যাস অনুসন্ধানে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। নেপাল বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে জানাবে বলে জানিয়েছে।
বৈঠক সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করতে চাইলেও নেপাল এখনই তাতে সম্মত হয়নি। ভারতের সঙ্গে নেপাল বিদ্যুতখাত উন্নয়নে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করতে একমত হয়েছে। আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে এসব চুক্তি হওয়ার কথা। সেগুলো হওয়ার পরই নেপাল বাংলাদেশের সাথে সমঝোতা করবে। বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতার বিষয়ে ভারতের মতামতের উপর গুরুত্ব দিচ্ছে নেপাল। এজন্য আগে নেপালের সঙ্গে ভারতের পাওয়ার ট্রেড এগ্রিমেন্ট (বিদ্যুৎ বাণিজ্য চুক্তি) হবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে রাধা কুমারী গয়ালী বলেন, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ দিতে নেপালের কোন আপত্তি নেই। সার্ক অঞ্চলে বিদ্যুতের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এই চাহিদা মেটাতে নেপালের জলবিদ্যুৎ অগ্রনী ভূমিকা রাখতে পারে। নেপালে প্রচুর জলবিদ্যুতের সম্ভাবনা আছে। এই বিদ্যুৎ দিয়ে আঞ্চলিক চাহিদা মেটানো সম্ভব। নিজেদের স্বার্থেই এই কেন্দ্র উন্নয়ন জরুরী। তিনি বলেন, ভারতের কোম্পানি জিএমআর যে নেপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করছে সেখান থেকেও বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দিতে আপত্তি নেই নেপালের। কারণ জিএমআর আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে কাজ পেয়েছে। তিনি বলেন, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর নেপাল সফরে বিদ্যুৎখাতে সহায়তা সম্প্রসারণ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এসময় দুই দেশ কয়েকটি চুক্তি করার বিষয়ে নীতিগত সম্মত হয়েছে। দ্রুত এইসব চুক্তি হবে। তারপরই বাংলাদেশের সাথে হবে। নেপাল চায় ভারত এবং বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে। পরিবেশগত সমীক্ষার ভিত্তিতেই জলবিদ্যুত প্রকল্প স্থাপন করা হবে বলে তিনি জানান।
নসরুল হামিদ বলেন, আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। ভবিষ্যত বাংলাদেশ ও নেপালের জন্য এই পরিকল্পনা কাজে লাগানো হবে। নেপাল তাদের ভবিষ্যৎ অর্থনীতি চাঙ্গা করার জন্য এই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে চাই। আজকের এই উদ্যোগ ১৫ বছর পরে বাস্তবায়ন হবে। নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনতে ভারতের পূর্ণ সমর্থন আছে। নেপালে পানি থেকে ৮৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ হতে পারে। কিন্তু এখন তারা করছে মাত্র ৬০০ মেগাওয়াট। সমঝোতা সইয়ের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করেছি। নেপাল সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরে সম্মতি দিয়েছে। আশা করছি ভবিষ্যতে এটি স্বাক্ষরিত হবে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বৈঠকে বলা হয়, বাংলাদেশে বর্তমানে ১০ হাজার ৬১৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। ২০২১ সাল নাগাদ ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। ২০৩০ সালে উৎপাদন করা হবে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে আঞ্চলিক সহযোগিতা প্রয়োজন। গ্রীড লাইনের মাধ্যমে তিন হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আনা হবে। প্রয়োজনে এই আমদানি আরো বাড়ানো হবে। এখনই ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। আরো ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ত্রিপুরা দিয়ে ডিসেম্বরে আসবে। এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে ভারতের খোলা বাজার থেকে আরো ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আনা হবে। নেপালের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নেপালের প্রবাহমান নদী গুলোর উপর বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের বিষয়টি নেপাল উম্মুক্ত রাখা হয়েছে। তবে কৃত্রিম আধার তৈরীর বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।
বৈঠকে নেপাল বাংলাদেশের গ্রামীণ জনপদে বিদ্যুৎ বিতরণে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) সাফল্যকে কাজে লাগানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছে।