বাংলাদেশ ছেড়ে যাচ্ছে শেভরন

শেভরন বাংলাদেশ থেকে চলে যাচ্ছে। এখানের সম্পদ ও স্বার্থ বিক্রির খরিদ্দার খুঁজছে। যথাযথ অর্থ পেলেই বিক্রি করে চলে যাবে।
শেভরণ বর্তমানে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বিদেশী বিনিয়োগ করা কোম্পানি। দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাস ক্ষেত্র পরিচালনা করে তারা।
শেভরণ বাংলাদেশের ব্যবস্থাপক শেখ জাহিদুর রহমান বলেন, আকর্ষনিয় দর পাওয়ার উপরে এবিষয়ে সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে। এই মুহুর্তে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে বিক্রির বাণিজ্যিক আলোচনা চলছে। সুবিধামতো ও আকর্ষনীয় দর পেলে শেভরণের স্বার্থ বিক্রি করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে শেভরনের সম্পদ বিক্রির কোনো তথ্য আমরা এখনো পাইনি। শেভরনের বাংলাদেশের সম্পত্তি বিক্রি করতে হলে পেট্রোবাংলার অনুমতি নিতে হবে। পিএসসি অনুযায়ি পেট্রোবাংলার অনুমোতি ছাড়া  শেভরণ চলে যেতে পারবে না।
সংশ্লিষ্ঠরা জানিয়েছে, বাংলাদেশে থাকা সম্পত্তি বিক্রির জন্য আন্তর্জাতিক পরামর্শক নিয়োগ দিয়েছে শেভরন। এরই মধ্যে একাধিক দেশি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠান তাদের সম্পদ কেনার আগ্রহ দেখিয়েছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দরপতনে বিশ্বব্যাপী লোকসানে পড়েছে  বলে শেভরণ এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বলে জানিয়েছে। লোকসান কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে সম্পদ বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে। শেভরন বাংলাদেশে থাকা তাদের প্রায় ২০০ কোটি ডলার বা প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা সমমূল্যের সম্পদ বিক্রি করতে চাইছে। বাংলাদেশের সম্পদ ছাড়াও ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের সম্পদ বিক্রি করতে আগ্রহ দেখিয়েছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশে বর্তমানে মোট গ্যাসের অর্ধেকের বেশি শেভরণ উত্তোলন ও সরবরাহ করে। উৎপাদন অংশীদারিত্ব চুক্তি (পিএসসি) করে জালালাবাদ, মৌলভীবাজার ও বিবিয়ানা তিনটি গ্যাসক্ষেত্রে পরিচালনা করছে।
বুধবার শেভরণ তিন ক্ষেত্রে  থেকে ১৫৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করেছে। আর এদিন দেশে মোট গ্যাস উৎপাদন হয়েছে ২৭৪ কোটি ঘনফুট।
পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়,  শেভরণের গ্যাসের উৎপাদন গত দুই বছর কমেছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছর শেভরণ প্রায় চার হাজার ৬০০ কোটি টাকার গ্যাস পেট্রোবাংলাকে বিক্রি করেছে। যা ২০১৫-১৬ সালে এসে কমে হয়েছে চার হাজার কোটি টাকা। চলতি বছর এখন পর্যস্ত বিক্রি করেছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার গ্যাস।
এই তিন গ্যাসক্ষেত্রে এক বছরের ব্যবধানে শেভরনের বিনিয়োগ কমেছে ১৯ শতাংশ। এ তিনক্ষেত্র ২০১৪ সালে শেভরণ খরচ করেছে ৪১ কোটি ২৯ লাখ ডলার। ২০১৫ সালে করেছে  ৩৩ কোটি ৫৬ লাখ ডলার। অন্যদিকে ২০১৩ সালে খরচের পরিমান ছিল ৪৮ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। এ হিসাবে দুই বছরে বাংলাদেশে শেভরনের বিনিয়োগ কমেছে ২২ কোটি ৮৯ লাখ ডলার।
এদিকে বর্তমানে বাংলাদেশে শেভরনে দুই হাজার জনবল আছে। এরমধ্যে স্থায়ী, অস্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিক জনবল আছে। গত একবছরে নতুন করে আর চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের নবায়ন করেনি শেভরন। এছাড়া ঢাকাসহ গ্যাসক্ষেত্রের কার্যালয়গুলোতে খরচ কমানোর বিষয়ে নানা উদ্যোগ নিয়েছে তারা।