বাংলাদেশ ভারত রাশিয়া সহযোগিতা দরকার কিন্তু দীর্ঘদিন নয়
বাংলাদেশ ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে পরমাণু বিদ্যুৎ নিয়ে ত্রিদেশীয় সহযোগিতা চুক্তি হয়েছে। এই সহযোগিতা বা চুক্তিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে নিজেদের সক্ষমতা দ্রুত তৈরি করার কথা বলেছেন তারা। নিজেরাই পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনায় সক্ষম হতে হবে। নিদির্ষ্ট সময় পর্যন্ত সহযোগিতা নিতে হবে।
বাংলাদেশ এটমিক এনার্জি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান এম আলী জুলকার নাঈন বলেন,
পরমাণু নিয়ে আমাদের অনেক দূর যেতে হবে। আমরা কাজ শুরু করলাম মাত্র। সেক্ষেত্রে আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারত অনেক এগিয়ে। তাদের এবিষয়ে নিজস্ব অভিজ্ঞতা আছে। ভারতের নিজস্ব পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে। এখন ভারত যে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র করছে তার বেশ কয়েকটা রাশিয়া করছে। ভারতের সাথে রাশিয়ার পরমাণু বিদ্যুতে একটা ভাল সম্পর্ক আছে। এখন সেই সম্পর্কের মধ্যে যদি বাংলাদেশ ঢুকতে পারে এটা তো সেটা ভাল হবে। আমাদের অভিজ্ঞতা নেই। প্রতিবেশি দেশের অভিজ্ঞতা আছে। সেই অভিজ্ঞতা আমরা ভালভাবে বিনিময় করতে পারি। বিশেষ করে জনবলের ক্ষেত্রে। আর যেহেতু এখানে রাশিয়ার সাথে ভারতের পরমাণু সহযোহিতা বাড়ছে সে জন্য ত্রিদেশীয় এই সহযোহিতা বাংলাদেশের উপকারে আসবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান সফিকুল ইসলাম বলেন,
অবশ্যই এটা ভাল হবে। পরমাণু বিষয়ে চুক্তি করা, জনবল তৈরি করা, অভিজ্ঞতা বিনিময় করা বাংলাদেশের জন্য ভাল হবে। বাংলাদেশ ভারত রাশিয়া ত্রিদেশীয় সহযোগিতা প্রয়োজন হবে। তবে ভারতের কাছ থেকে প্রকৌশল কোন যন্ত্র বিনিময় উচিত হবে না। কারণ এখন পর্যন্ত ভারত তার উৎপাদন করা পরমাণুর কোন যন্ত্র বিদেশে রপ্তানি করেনি। তাদের যন্ত্রের ভালমন্দ বিচার হয়নি। এজন্য বাংলাদেশে যে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে সেখানে পুরো যন্ত্র রাশিয়া থেকে আনা উচিত হবে। ছোট খাট কোন যন্ত্রও যদি ভারত থেকে আনা হয় তবে তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকবে। সহজ কথায় ভারতের সাথে কোন যন্ত্র বিনিময় ঠিক হবে না। পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র দীর্ঘদিন চলবে। এই দীর্ঘ সময় ধরে চলতে পারার মত ক্ষমতা ভারতের যন্ত্রের আছে কিনা তা কিন্তু এখনও পরীক্ষিত নয়। এজন্য যন্ত্র বিনিময়ের ক্ষেত্রে ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এছাড়া অন্য সক সহযোগিতার ক্ষেত্র বাড়ালে তা বাংলাদেশের জন্য উপকার হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ফিজিক্স সোসাইটি’র সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইশতিয়াক মঈন সৈয়দ বলেন, বাংলাদেশের জ্বালানি চাহিদার বড় অংশ মেটাবে রূপপুরের পরমাণু বিদ্যুৎ। পরমাণু বিদ্যুৎ খুব স্পর্সকাতর। রাশিয়া ভারত উভয় দেশ পরমাণু ব্যবহারে অভিজ্ঞ। তারা অনেকদিন থেকে পরিচালনা করে আসছে। ভারত নিজেরা যন্ত্র এনে নিজেদের মত করে পরিচালনা করছে। প্রথমে ভারত যখন পরমাণু বিদ্যুৎ শুরু করে ছিল তখন তারাও বিদেশ থেকে অভিজ্ঞ জনবল এনেছিল। পর্যায়ক্রমে ভারত নিজ¯^ জনবল তৈরি করেছে। আমাদেরও তেমনই করতে হবে। ভারত রাশিয়ার সহযোগিতা নিয়ে আগাতে হবে। কিন্তু তারও নিদিষ্ট সময় বেধে দিতে হবে। সর্বোচ্চ পাঁচ বছর সময় দেয়া যেতে পারে। তারমধ্যে নিজেদের সক্ষমতা নিশ্চিত করতে হবে। নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে নিজস্ব জনবল তৈরি করে নিজেদের পরিচালনা শিখতে হবে। অনেক দিন অন্যের ভরসায় থাকা যাবে না। বাংলাদেশে এবিষয়ে বাস্তবে কাজ করার কোন অভিজ্ঞ জনবল নেই। যারা আছেন তারা পড়াশুনা করে শিখেছেন। ফলে সে বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। ভারত রাশিয়া বাংলাদেশ সহযোগিতা চুক্তি অবশ্যই ইতিবাচক। বাংলাদেশের কারিগরি সহযোগিতা লাগবে। জনবলের সহযোগিতা লাগবে। কিন্তু লক্ষ্য ঠিক রাখতে হবে যেন এই সগযোগিতা দীর্ঘদিন না হয়। ভারত নিজেরা অনেক কিছু তৈরি করে খরচ কমিয়ে এনেছে। বাংলাদেশকেও সেই পর্যায়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ থেকে কিছু শিক্ষার্থী রাশিয়া গিয়েছে পড়ালেখা করতে। বাংলাদেশেও পরমাণু শিক্ষা শুরু হয়েছে। রাশিয়া কিম্বা ভারত থেকে শিক্ষক এনে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো যেতে পারে। শিক্ষার বিনিময়টা খুব জরুরি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ এ মান্নান. বলেন, সহযোগিতা ভাল। আমাদের যে সীমাবদ্ধতা আছে সেগুলো কাটিয়ে উঠা পর্যন্ত এই সহযোগিতা চালিয়ে যাওয়া যেতে পারে। কিন্তু সেটা বেশি দিনের জন্য নয়। নিজেদের প্রযুক্তি ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। ভারত নিজেদের প্রযুক্তিতে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র করেছে। তাদের অভিজ্ঞতা অনেক। সেই অভিজ্ঞতা আমরা কাজে লাগাতে পারি। যারা সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছে তাদের লাভটা আমাদের দেখতে হবে। আস্তে আস্তে আমাদের নির্ভরতা কমিয়ে আনতে হবে। নির্ভরতা কমাতে না পারলে তাদের ইচ্ছে মত চলতে হবে। এটা একটা দেশের জন্য শুভ নয়। রাশিয়া বা ভারতের সহযোগিতা নিয়ে নিজেরা নির্ভরশীল হতে হবে। যারা নীতি নির্ধারক তারা নিশ্চয় এবিষয় নিশ্চিত করবে।