বাপেক্স শক্তিশালী করার উদ্যোগ শুধু মুখে মুখে
বাপেক্সকে শক্তিশালী করার কোন উদ্যোগ নেই। উদ্যোগের কথা শুধু মুখে মুখে। দীর্ঘদিনে না বেড়েছে কোন সুযোগ-সুবিধা, না বেড়েছে গ্যাসের দাম। শুধু বেড়েছে কাজের ক্ষেত্র। ফলে গতি ধরে রাখা যাচ্ছে না বাপেক্সের। অভিজ্ঞ লোকবল একের পর এক অন্যত্র চলে যাচ্ছে। সুযোগ-সুবিধা কম থাকায় যেমন অভিজ্ঞ ভূ-তত্ত্ববিদরা চলে যাচ্ছেন তেমনি গ্যাসের দাম না বাড়াতে অর্থনৈতিকভাবে লোকসানের দিকে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠান। নতুন খননযন্ত্র আসছে। কিন্তু লোকবলের অভাবে সব খননযন্ত্র একসাথে চালানো নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীর আশ্বাস ও ইচ্ছার পরও গত প্রায় দেড় বছরে বাপেক্সের জন্য প্রস্তাবিত বিশেষ বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে কর্মরতদের মধ্যে হতাশা নেমে এসেছে। বিদ্যুত্ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি বিভাগের সিদ্ধান্তহীনতায় স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো এবং প্রান্তিক সুবিধার বিষয়টি ঝুলে আছে।
বাপেক্সে ২৪ ঘন্টা কাজ করলেও অতিরিক্ত কাজের ভাতা বা রাতে কাজ করার ভাতা নেই। মাঠ পর্যায়ে কাজ করলে বৃটিশ আমলে বাড়তি যে ১০ শতাংশ প্রাপ্তির সুবিধা ছিল এখনো তাই আছে। এজন্য ২০০৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত বাপেক্স থেকে চাকরি ছেড়েছেন ১২৮ জন কর্মকর্তা। আরো ১৫ জন চাকরি ছাড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এদের বেশিরভাগই বিদেশি তেল-গ্যাস কোম্পানিতে চাকরির প্রস্তাব পেয়েছেন। বিদেশি কোম্পানিতে তাদের অনেকে লিয়েনে আবার অনেকে একবারে চলে যেতে চান। ২০০৯ সাল থেকে চলতি মাস পর্যন্ত ১৯ জন কর্মকর্তা চাকরি ছেড়েছেন। যাদের বেশিরভাগই গ্যাসকূপ খনন বিশেষজ্ঞ। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বাপেক্সের বোর্ড সভায় বেতন কাঠামো প্রস্তাব যাচাই-বাছাইয়ের জন্য দুই সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ওই বছর এপ্রিলে প্রতিবেদন জমা দিলে আগস্টে অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় প্রস্তাবটি নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়। এরপর গতবছর জুনে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে বৈঠকে স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর পরিবর্তে বাপেক্সকে প্রান্তিক সুবিধা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এর আর কোন অগ্রগতি হয়নি।
বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মর্তুজা ফারুক আহমেদ বলেন, গ্যাসের মজুদ জানতে ত্রিমাত্রিক ভূ-কম্পন জরিপ, নতুন কূপ খনন ও কূপমেরামত করতে এরইমধ্যে বাপেক্স যথেষ্ট সক্ষমতা অর্জন করেছে। এ কারণে বিদেশি কোম্পানিগুলো এখন বাপেক্সকে কাজের প্রস্তাব দিচ্ছে। কাপেক্সের কাজের ধরন সম্পূর্ণ আলাদা। এখানে যারা কাজ করেন তাদের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো থাকা উচিত। পৃথিবীর সকল দেশেই এ ধরনের সরকারি প্রতিষ্ঠানে স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো আছে। আমাদের নীতিনির্ধারণী পর্যায়েও প্রায় সকলে স্বতন্ত্র বেতন দিতে সম্মত।
বাপেক্সের গ্যাসের দাম বিদেশি কোম্পানিগুলোর তুলনায় প্রায় নয় ভাগের এক ভাগ। পেট্রোবাংলা বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে বেশি দামে গ্যাস কিনছে অথচ বাপেক্সের কাছ থেকে উত্পাদন খরচের চেয়ে কয়েক ধাপ কম দামে গ্যাস কেনে। বাপেক্সকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে গ্যাসের দাম বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করে বিশেষজ্ঞরা। এই দাম বাড়ানোর সঙ্গে সাধারণ গ্রাহকদের গ্যাসের দাম বাড়ার সরাসরি কোন সম্পর্ক নেই। এ বিষয়ে গঠিত এক কমিটি তাদের প্রতিবেদনে সম্প্রতি বাপেক্সের গ্যাসের দাম বাড়ানোর সুপারিশ করেছে।
২০০৮ সালের ১ জুলাই বাপেক্সের গ্যাসের দাম প্রতি হাজার ঘনফুট সাত টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ টাকা করা হয়। ২০১০-১১ অর্থবছরে গ্যাসের দাম আরেক দফা বাড়িয়ে ৫০ টাকা নির্ধারণের বিষয়ে আলোচনা হয়। বাপেক্স এনিয়ে কয়েক দফা চিঠি দিলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় জ্বালানি মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।