বিটিএমএ: গ্যাসের দাম না বাড়ানোসহ ৫ দাবি
নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) গ্যাসের দাম না বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে। গ্যাস সংকট সমাধানে গণপরিবহণে সিএনজি বন্ধ করে দেওয়ারও দাবি জানানো হয়েছে।
শনিবার (২৯ জানুয়ারি) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক হোটেল সোনারগাঁও এ গ্যাস সংকট নিয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন।
সংবাদ সম্মেলনে বিটিএমএ’র প্রক্ষ থেকে পাঁচটি দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হল- দ্রুত সময়ের মধ্যে কেপটিভ পাওয়ার জেনারেশন সংশ্লিষ্ট মিলগুলোতে ইভিসি মিটার স্থাপন ও তার ভিত্তিতে বিল পরিশোধের ব্যবস্থা করা। যেহেতু সায়ের চাহিদা বিকল্পভাবে অর্থাৎ আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব, সেহেতু অন্তবর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসাবে সার কারখানায় সরবরাহ করা গ্যাস টেক্সটাইল খাতের মিলগুলোতে সরবরাহের ব্যবস্থা করা। তিতাস কর্তৃপক্ষ গত ৩ থেকে ৪ বছর মুনাফা করছে। তাই তাদের মুনাফা করা অর্থের একটি অংশ এলএনজি আমদানিতে ব্যয়ের মাধ্যমে এলএনজির মূল্যকে সহনীয় পর্যায়ে রাখাসহ এলএনজির ফ্রিকোয়েন্ট নিশ্চিত করা। গ্যাস সংশ্লিষ্ট অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বিষয়টি জন গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং এ ক্ষেত্রে কোনো কর্মকর্তার গাফিলতিতে যদি কোনো মিলের সার্বিক উৎপাদন ব্যহত হয় তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া। একইসঙ্গে গ্যাসের অপব্যবহারে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা মিলের বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ পাওয়া যায় এবং তা প্রমাণিত হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া। যে সকল মিলের অনুকূলে এরইমধ্যে গ্যাস সংযোগের জন্য ডিমান্ড নোট ইস্যু করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট মিল কর্তৃক ডিমান্ড নোটের অর্থ পরিশোধ করেছে তাদের দ্রুত গ্যাস সংযোগ প্রদান করতে হবে।
বলা হয়, গ্যাসের বদলে বাতাস বিক্রি করে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ কোটি কোটি টাকার বিল আদায় করছে। কেপটিভ পাওয়ার জেনারেশন সংশ্লিষ্ট মিলগুলোতে দ্রুত ইভিসি মিটার স্থাপনের দাবি জানানো হয়।
মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, গত তিন বা তারও বেশি সময় পর্যায়ক্রমে গ্যাস বিল বাড়তি দিচ্ছি। অথচ কারখানাগুলো তাদের নির্ধারিত চাপে গ্যাস পাচ্ছে না।
তিতাস কর্তৃপক্ষ গ্যাস না দিয়ে শুধু পাইপে বাতাস সরবরাহ করে কোটি কোটি টাকা নিচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য মিলগুলোতে ইভিসি মিটার সংযোগের জন্য বারবার অনুরোধ জানিয়েছি। জানামতে ১ হাজার ২০০ ইভিসি মিটার আমদানি করা হয়েছে। কিন্তু খুবই অল্প সংখ্যক মিটার সংযোগ দেয়া হলেও অজ্ঞাত কারণে বেশিরভাগ মিলে ইভিসি মিটারের সংযোগ দেয়া হচ্ছে না।
তিনি বলেন, করোনার সময়েও তিতাস গ্যাস আমাদের একটি পয়সাও মওকুফ করেনি। সারচার্জ মওকুফ করেনি। করোনার সময়েও তিতাসের তিনজন এমডি বদল হয়েছে। বারবার টেলিফোন করার পরও নতুন এমডি ফোন ধরছেন না। আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে ১২০০ ইভিসি মিটার আনা হলেও তা লাগানো হচ্ছে না। মিলগুলোতে তিতাস শুধু বাতাস বিক্রি করছে। ইভিসি মিটার লাগালে হয়তো তিতাসের প্রকৃত সিস্টেম লস বেরিয়ে আসবে। তাই তারা টেক্সটাইল মিলসে এই মিটারগুলো লাগাচ্ছে না।
সাংবাদিক সম্মেলনে বলা হয়, যেসব কূপে গ্যাসের
স্তর নিচে নেমে গেছে সেখানে যদি কম্প্রেসার বসানো হয়, তাহলে ১০ শতাংশ গ্যাস বাড়বে। আমরা অনুরোধ করব, সেসব কূপে দ্রুত কম্প্রেসার লাগানো হোক। কারণ কোনো দেশই জ্বালানি আমদানি করে শিল্পের প্রসার ঘটাতে পারে না। জ্বালানির সংকট সমাধানে শিল্পবান্ধব জ্বালানি নীতি চাই। গ্যাসের দাম বাড়লে সুতা উৎপাদনে খরচ বেড়ে যাবে। এতে টেক্সটাইল মিল হুমকির মুখে পড়বে। একইসঙ্গে পোশাক রফতানিতে দেশের আয় কমে যাবে। তাই কোনোক্রমেই গ্যাসের দাম বাড়ানো যাবে না।
পিডিবি বিদ্যুতের মূল্য প্রায় ৭০ শতাংশ বাড়াতে চায়। দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের উইভিং ও স্পিনিং মিলের সিংহভাগ পল্লী বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। ফলে মিলগুলোর পক্ষে বর্ধিত মূল্যে পল্লী বিদ্যুৎ থেকে যে বিদ্যুৎ ক্রয় করা হবে তা মিলগুলোর পক্ষে কোনক্রমেই বহন করা সম্ভব হবেনা। এমনিতেই মিলগুলো কোনোভাবে চালু রয়েছে।
গ্যাস সংকট মোকাবিলার জন্য এলএনজি আমদানির বিষয়টি উত্থাপন করে আগে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। সে সময় বাস্তবতা বিবেচনায় বর্ধিত গ্যাস ট্যারিফ মেনে নিয়েছি। কিন্তু এখন সারা বছর ধরে এলএনজি আমদানি করা হয় না।
উচ্চ মূল্যের অজুহাতে এলএনজি আমদানি বন্ধ থাকে। আমরা মনে করি এলএনজি’র আমদানি যদি অব্যাহত থাকতো তাহলে আন্তর্জাতিক বাজারের এলএনজির বিভিন্ন সময়ের মূল্য গড় করলে হয়তো এলএনজির মূল্য একটি গ্রহণীয় পর্যায়ে থাকত ফলে গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হতো।