বিদ্যুতে বাজেটের ৪০ ভাগই অ-ধরা

বাজেটে এক বিভাগ হিসেবে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েও আশানুরূপ খরচ করতে পারেনি বিদ্যুৎ বিভাগ। অনেক প্রকল্পে গেল এক বছরে একটাকাও খরচ করতে পারেনি।

চলতি অর্থ ব্ছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) পর্যালোচনা করে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
দেখা গেছে, বরাদ্দের প্রায় অর্ধেকই খরচ করতে পারেনি। সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ কমিয়ে আনা হয়েছে। তবুও সেই কমিয়ে আনা কাজেরও ৪০ ভাগ এখনও অধরা। অথচ বছর শেষ হতে মাস বাকি আর দুই।

চলতি অর্থ বছর জাতীয় বাজেটের সর্বোচ্চ বরাদ্দ ছিল বিদ্যুৎখাতে। যা ছিল গত অর্থবছর থেকে দ্বিগুণ। কিন্তু এই বরাদ্দ রেখেও যথাযথ লাভ হয়নি।
বিদ্যুৎখাতে গড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকার মধ্যে নয় হাজার কোটি টাকা খরচ করা গেছে। বাকী অর্থ খরচই করতে পারেনি সংশ্লিষ্ঠরা। অর্থের অভাব না থেকেও কাজ করতে পারেনি। অর্থ আছে। তবু খরচ করতে পারেনি। আবার কিছু প্রকল্প শুরু করতে পারেনি বলে অর্থও তুলতে পারেনি। এতে না হয়েছে অবকাঠানো, না হয়েছে অর্থ খরচ।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি বছর শতভাগ খরচ হয়েছে এমন প্রকল্প সংখ্যা হাতে গোনা। মাত্র তিনটি প্রকল্পে এপর্যন্ত শতভাগ অর্থ খরচ করতে পেরেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। অর্ধেক কাজ হয়েছে এমন প্রকল্প সংখ্যা ২৯টি।
বিদ্যুৎখাতের ২৫টি বড় বড় প্রকল্পে এক টাকাও খরচ করতে পারেনি বিদ্যুৎ বিভাগ। এ প্রকল্পগুলোর অনেকটাই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। সর্বোচ্চ বরাদ্দ রেখেও সরাসরি বিদ্যুৎ উৎপাদনে তেমন কোন খরচই করা যায়নি। বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রধান লক্ষ হলেও দেখা যাচ্ছে বেশিরভাগ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন বিষয়ক প্রকল্পর কাজ হয়নি।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এক টাকাও ছাড় হয়নি এমন কাজগুলোর মধ্যে আছে পাঁচ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র। সংশোধিত বাজেটেওে এই সৌর স্থাপন করার জন্য ৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলে প্রিপেইড মিটার স্থাপন শেষ করার কথা ছিল এই চলতি ২০১৬ সালের মধ্যে। সংশোধিত বাজেটে এখাতে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দও দেয়া হযেছে। কিন্তু এখান থেকে এক টাক্রাও খরচ করতে পারেনি পিডিবি।
এছাড়া পল্লী বিদ্যুতের প্রি-পেইড মিটার স্থাপন। গ্রামে ৭০ হাজার নিম্মক্ষমতার উপকেন্দ্র প্রতিস্থাপন। পিজিসিবি’র বাংলাদেশ-ভারত সঞ্চালন লাইনের ক্ষমতা বাড়ানো। বঙ্গভবন, গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ১১ কেভি সুইচিং স্টেশন স্থাপন। ডেসকো’র উপকেন্দ্র নির্মান ইত্যাদি প্রকল্পে এক টাকাও খরচ করা যাযনি।

তবে কিছু প্রকল্পে সন্তোষজনক অর্থ খরচ হয়েছে। শাহজীবাজার ৩৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বরাদ্দ থাকা অর্থেও চেয়ে বেশি খরচ করা হয়েছে। ১৩৭ শতাংশ খরচ করা হয়েছে। বিনিয়ানা ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার তিন নম্বর বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বরাদ্দ থাকা অর্থেও ৮২ ভাগ খরচ হয়েছে। পাবর্ত্য চট্টগ্রামের বিতরণ লাইন নির্মানে খরচ করা হয়েছে ৭৭ ভাগ অর্থ। পিডিবি ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ আনতে উপকেন্দ্র স্থাপন করতে শতভাগ খরচ করেছে। আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্রর জন্য ইজিসিবি শতভাগ খরচ করেছে।

বাজেটে বরাদ্দ থাকা অর্থ খরচের হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি (এপিএসসিএল) বরাদ্দের প্রায় পুরো টাকা খরচ করতে পেরেছে। মোট বরাদ্দের ৯৭ ভাগ অর্থই খরচ করেছে। বরাদ্দ থাকা বিদেশী ঋণের শতভাগ খরচ করেছে সরকারি এই বিদ্যুৎ উৎপাদনকারি কোম্পানি। তবে দেশীয় অর্থেও খরচ হয়েছে বরাদ্দের ৬৫ ভাগ। আর অর্থ খরচের দিক দিয়ে সবচেয়ে নিচে আছে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (সিপিজিসিএল)। সিপিজিসিএল বরাদ্দের মাত্র ২০ ভাগ খরচ করেছে। দেশীয় বরাদ্দ অর্থেও মাত্র দুই ভাগ আর বিদেশী ঋণের ৫১ ভাগ খরচ করেছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ নিজস্ব প্রকল্পগুলোতে ৬০ভাগ খরচ করতে পেরেছে। নিজস্ব টাকা খরচ করেছে মাত্র ২৮ ভাগ ও বিদেশী ঋণ ৮২ভাগ। সব মিলে প্রায় ১১৯ কোটি টাকা।
পিডিবি করেছে ৪৭ শতাংশ কাজ। এরমধ্যে নিজস্ব টাকা ৫১ ভাগ আর ঋণের ৪৫ ভাগ। আরইবি মোট বরাদ্দের ৭১ শতাংশ খরচ করেছে। পিজিসিবি করেছে ৫৪ ভাগ। ডিপিডিসি মাত্র ২৩ ভাগ, ডেসকো ৫১ ভাগ, পাওয়ার সেল ৭৪ ভাগ, ওজোপাডিকো ৫৯ ভাগ, নওপাজেকো ৮১ ভাগ ও ইজিসিবি ৫১ ভাগ অর্থ খরচ করতে পেরেছে। সবমিলে ৬২ দশমিক ৯২ ভাগ অর্থ খরচ করতে পেরেছে বিদ্যুৎ বিভাগের আওতায় থাকা কোম্পানি ও সংস্থাগুলো।