বিদেশ নির্ভরতা কমিয়ে দেশের কয়লা ব্যবহারের পরামর্শ


বিদেশ নির্ভরতা কমিয়ে দেশের কয়লা ব্যবহার করতে হবে। কয়লার উৎস এবং নির্দিষ্ট দামে পাওয়ার সব সময় চ্যালেঞ্জ থাকবে। পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
শনিবার পাক্ষিক এনার্জি এ্যান্ড পাওয়ার পত্রিকা আয়োজিত ওয়েবিনারে বক্তারা একথা বলেন।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, পায়রা প্রকল্প ২১ মাসে শেষ হয়েছে। দেশে বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে এটি একটি উদাহরণ।
তিনি বলেন, কিছুদিন আগে দীঘিপাড়ার সমীক্ষা শেষ হয়েছে। আন্ডারগ্রাউন্ড মাইনিং করে মাত্র ১০ শতাংশ কয়লা তুলে এই মাইনিং করা লাভজনক হবে না, তাই বন্ধ করা হয়েছে। বড়পুকুরিয়ায় ৪/৫ হাজার টন কয়লা তোলা হচ্ছে। এখানেও খুব বেশি উৎপাদন সম্ভব নয়। নিজেদের কয়লা ব্যবহার করে বড় আকারে খনিমুখে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করার সম্ভাবনা নেই। ভূগর্ভস্থ মাইনিংয়ের মাধ্যমে কয়লা তুলে সেই কয়লা রেললাইনে করে পায়রাতে নিয়ে আসা অসম্ভব। সেই চিন্তা না করাই শ্রেয়। ভবিষ্যতে মিশ্র জ্বালানির মাধ্যমে সস্তায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ কীভাবে উৎপাদন করতে পারি, তা চিন্তাভাবনা করছি।  
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম তামিম বলেন, নিজস্ব কয়লা উত্তোলন নিয়ে যদি সিদ্ধান্ত নিই, তাহলে খনিমুখেই বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে হবে। কয়লা তোলার জন্য সেখানে এমনিতেই একটি জায়গা তৈরি হবে, সেখানে খনিমুখ বিদ্যুৎ কেন্দ্র করলে ভাল হবে। কয়লাবিদ্যুতের দাম নিয়ে অনেক ধরনের কথা শুনেছি, আট টাকা হয়ে যাবে, নয় টাকা হয়ে যাবে, এ প্রকল্পে উৎপাদন খরচ সাড়ে ছয় টাকা হয়েছে, ফলে কয়লায় সস্তায় বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে।
পিডিবি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী এম বেলায়েত হোসেন বলেন, আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক প্রকল্পের ক্যাপাসিটি মূল্য বেশি হলেও দীর্ঘমেয়াদে তা লাভজনক। তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি খরচ ইউনিট প্রতি আট থেকে সাড়ে আট টাকা, সেখানে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জ্বালানি খরচ মাত্র আড়াই টাকা। গ্যাসের তুলনায় আড়াইগুণ হলেও তেলের তুলনায় অনেক কম। আমাদের গ্যাস দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে, আবার আমাদের জ্বালানিও আমদানি নির্ভর, তাই একক জ্বালানির ওপর নির্ভর করা কোনভাবেই ঠিক নয়। এলএনজি গ্যাসের পাশাপাশি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প আমাদের জন্য সবচেয়ে ভাল বিকল্প।  
অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী জ্বালানি বিশেষজ্ঞ খন্দকার আবদুস সালেক সূফী বলেন, কয়লা পরিবহনের চ্যালেঞ্জ নিরসনে মাতারবাড়ি বন্দরের ক্ষমতা বাড়িয়ে নিজস্ব কয়লা উঠিয়ে ওখানে নিয়ে যেতে হবে।
খনি প্রকৌশলী ড. মুশফিকুর রহমান বলেন, দেশে মজুদ কয়লার ওপর নজর দেয়ার দরকার। তিনি বলেন, দেশের উত্তরাঞ্চলে উত্তম কয়লার মজুদ আছে, তা উত্তোলেনে মনোযোগ দিতে হবে, না হলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও আমদানি প্রতিবন্ধকতার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বো।

‘এনার্জি এ্যান্ড পাওয়ার’ সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ হোসেনের পরিচালনা ও সভাপতিত্বে পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে আয়োজিত ওয়েবিনারে
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পায়রা বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী শাহ আবদুল মওলা হেলাল।
প্রবন্ধে বলা হয়, এই প্রকল্প নানা মাপকাঠিতে সফল। সরকারের শীর্ষস্তর থেকে সংশ্লিষ্ট সকলের সদিচ্ছা ও পরিশ্রমে সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে। তবে কয়লা পরিবহণ ও বিদ্যুৎ সঞ্চালনে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।
নর্থওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের সিইও প্রকৌশলী এ এম খুরশেদ আলম, পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন, বুয়েটের সহযোগী অধ্যাপক ড. কাজী বায়েজিদ কবীর, অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী প্রফেসর ফিরোজ আলসহ অন্যরা বক্তৃতা করেন।
রাষ্ট্রীয় মালিকানার নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইম্পোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের যৌথভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপন করেছে।