বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির শুনানি ১৮ই মে

নিজস্ব প্রতিবেদক:
এবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। এরপর বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আগামী ১৮ই মে বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের শুনানির দিন ঠিক করেছে।
চলতি বছর বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রির জন্য পিডিবির ঘাটতি দাঁড়াবে ৩০ হাজার ২৫২ কোটি টাকা। এ ঘাটতি মেটাতে ইউনিটপ্রতি আট টাকা ৫৮ পয়সা করার প্রস্তাব দিয়েছে পিডিবি। অর্থাৎ বিদ্যুতের পাইকারি দাম সাড়ে তিন টাকা বা ৬৮ দশমিক ৯০ শতাংশ বাড়াতে হবে। আর পাইকারি দাম অনুপাতে গ্রাহক পর্যায়েও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে পিডিবি।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বর্তমানে বিদ্যুৎ খাতে ব্যবহার করা গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটার চার টাকা ৪৫ পয়সা। গ্যাসের দাম বাড়ালে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচও বাড়বে। এক্ষেত্রে দুইটি বিকল্প প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে গ্যাসের দাম ১০০ শতাংশ বাড়ালে বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি আরও ৫৬ পয়সা বাড়াতে হবে। ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের পাইকারি দাম পড়বে ৯ টাকা ১৪ পয়সা। আর গ্যাসের দাম ১২৫ শতাংশ বাড়ালে বিদ্যুতের দাম ইউনিট প্রতি ৬৯ পয়সা বাড়াতে হবে। এতে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের পাইকারি দাম হবে ৯ টাকা ২৭ পয়সা।
প্রস্তাবে বিদ্যুতের পাইকারি মূল্য প্রায় ৬৯ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু বিতরণ কোম্পানির জন্য এই দাম। বিতরণ কোম্পানির দাম বাড়লে সাধারণ গ্রাহক পর্যায়েও বাড়ানোর প্রস্তাব দেবে বিতরণ কোম্পানিগুলো।
পাইকারি দাম অনুপাতে গ্রাহক পর্যায়েও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে পিডিবি। গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর শুনানির বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত জানায়নি বিইআরসি।
পিডিবির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি থাকায় ও বিদ্যুৎখাতের জন্য বরাদ্দ করা এক হাজার ৩২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করতে না পারায় ফার্নেস অয়েল আমদানি বাড়াতে হয়েছে। তবে গত জুনে ফার্নেস অয়েল আমদানিতে শুল্ক-কর অব্যাহতি প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে এজন্য খরচ ৩৪ শতাংশ বেড়েছে। এতে গত অর্থবছর শুধু জ্বালানি খরচ আট হাজার ১৮০ কোটি টাকা বেড়েছে। ফলে ২০২০-২১ অর্থবছর প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি খরচ দাঁড়িয়েছে তিন টাকা ১৬ পয়সা। ২০১৯-২০ অর্থবছর এ খরচ ছিল দুই টাকা ১৩ পয়সা।
জুলাইয়ে কয়লার ওপর পাঁচ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারেও কয়লার দাম বেড়েছে। সব ধরনের জ্বালানির দাম বাড়া এবং গ্যাস সরবরাহ আরও কমে যাওয়ায় চলতি (২০২২) বছর বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতি ইউনিট জ্বালানি খরচ বেড়ে দাঁড়াবে চার টাকা ২৪ পয়সা। আর জ্বালানির জন্য মোট খরচ বাড়বে ১২ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা। তবে গ্যাসের দাম বাড়লে এ খরচ আরও বাড়বে।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিইআরসি বিদ্যুতের গড় পাইকারি মূল্য নির্ধারণ করে পাঁচ টাকা ১৭ পয়সা। যদিও গত অর্থবছর গড় বিক্রয় মূল্য পাঁচ টাকা ১২ পয়সায় নেমে যায়। এতে পিডিবির পাইকারি বিদ্যুৎ বিক্রি থেকে আয় হয় ৩৯ হাজার ৫২ কোটি টাকা। আর এ বিদ্যুৎ কেনায় পিডিবির খরচ হয় ৫০ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা। এতে ঘাটতি হয় ১১ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার ১১ মাসের জন্য (জুলাই-মে) ঋণ দিয়েছে ১০ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা।
বিতরণকারী সংস্থা/কোম্পানিগুলোর কাছে চলতি বছর বিদ্যুৎ বিক্রির সম্ভাব্য পরিমাণ দাঁড়াবে আট হাজার ৮৯৯ কোটি ৩০ লাখ ইউনিট। গ্যাসের দাম না বাড়ালে এ বিদ্যুৎ কেনায় পিডিবির খরচ হবে ৭৪ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা। আর এ বিদ্যুৎ বিক্রি করে পিডিবির আয় হবে ৪৩ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ পিডিবির বিদ্যুৎ কেনা ও বিক্রিতে ইউনিটপ্রতি দাম পড়বে যথাক্রমে পাঁচ টাকা আট পয়সা ও আট টাকা ৫৮ পয়সা।
ডিমান্ড চার্জ আরোপ, বছরভিত্তিক দাম নির্ধারণ ব্যবস্থা প্রবর্তণ, ক্যাপটিভ নিরুৎসাহিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।