বিদ্যুতের দাম ১৫.৩০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব নেসকোর
নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) গ্রাহক পর্যায়ে গড়ে ১৫.৩০ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। যা ইউনিট প্রতি দাঁড়ায় ১ টাকা ৩ পয়সা। তবে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি ইউনিট প্রতি ৮৯ পয়সা হারে দাম বাড়ানোর পক্ষে মত নিয়েছেন।
বর্তমান বিদ্যুতের পাইকারি দরের ভিত্তিতে এই প্রস্তাব করেছে নেসকো। নতুন করে পাইকারি দাম বৃদ্ধি হলে তার সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানোর আবেদন করেছে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের শহরাঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা এই কোম্পানিটি।
আজ বুধবার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) গণশুনানিতে এ প্রস্তাব তুলে ধরেন নেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকিউল ইসলাম। গণশুনানি গ্রহণ করছেন বিইআরসি চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম, সদস্য মিজানুর রহমান, রহমান মুরশেদ, আবদুল আজিজ খান ও মাহমুদউল হক ভুইয়া। গণশুনানিতে ক্যাব, ব্যবসায়ী সংগঠন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত রয়েছেন।
নেসকোর প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পিডিবি ইতোমধ্যে পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আবেদন করেছে। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গণশুনানিতে বিইআরসি কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি দাম বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। পাইকারি দাম বাড়লে সমন্বয় করে দাম বাড়ানোর আবেদন করছি।
জাকিউল ইসলাম বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য যে বিতরণ এলাকার পৌরসভাগুলো ঠিকমতো বিল পরিশোধ করছেনা। অনেক পৌরসভার কাছে ৯ মাস পর্যন্ত বকেয়া পড়ে রয়েছে। এতে ২২১ কোটি টাকা বকেয়া নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে নেসকো। তিনি বলেন, নেসকোর এলাকায় নিম্ন আয়ের গ্রাহক বেশি। ১২ লাখ ৭৪ হাজার ৮৮৩ জন গ্রাহকের মধ্যে ৮০ শতাংশ গ্রাহক কৃষিজীবী, সে কারণে পল্লী বিদ্যুতের মতো পাইকারি দামের কাঠামো হওয়া উচিত। এদিকে উত্তরাঞ্চলের গ্রাহকদের বিদ্যুতের সেবার মান ভাল না হলেও ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের দাম ৮৯ পয়সা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের মূল্যায়ন কমিটি।
নবগঠিত এই কোম্পানিটি রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের অধিকাংশ অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণ করে। প্রস্তাবে বিদ্যুতের দামের সঙ্গে সঙ্গে ডিমান্ড ও সার্ভিস চার্জ বাড়ানোরও দিয়েছে নেসকো। নতুন এই কোম্পানিটির মোট গ্রাহক সংখ্যা ১২ লাখ ৭৪ হাজার ৮৮৫ । এর মধ্যে আবাসিক গ্রাহক ১০ লাখ ৬৯ ৯০৪ যা মোট গ্রাহকের ৮৪ শতাংশ। নেসকোর মোট বিদ্যুৎ চাহিদা ৭৪৫ মেগাওয়াট। কোম্পানিটি আবাসিক পর্যায়ে ধাপ ভেদে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ২০ পয়সা থেকে একটা ৫২ পয়সা পর্যন্ত বাড়ানোর আবেদন করেছে। সেচ পাম্পের বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিটে ২৮ পয়সা বাড়ানো কথা বলা হয়েছে। এছাড়া বাণিজ্যিক, শিল্পসহ সব খাতেই দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। অবকাঠামো নির্মাণে অস্থায়ী সংযোগে সাত টাকা ২৫ পয়সা এবং ব্যাটারিচালিত যানবাহনের জন্য ১০ টাকা ৩০ পয়সার আলাদা স্ল্যাবের প্রস্তা করা হয়েছে।
প্রস্তাবে বলা হয়, একই ধরনের অন্য বিতরণ কোম্পানি যেমন পল্ল¬ী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ও ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) চেয়ে নেসকো পাইকারি পর্যায়ে বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছ থেকে গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনতে নেসকোর ব্যয় হয় পাঁচ টাকা ১২ পয়সা। যেখানে ওজোপাডিকোর ক্ষেত্রে এ ব্যয় চার টাকা ৬৪ পয়সা এবং আরইবির ক্ষেত্রে চার টাকা ২৩ পয়সা। অর্থাৎ প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ওজোপাডিকোর চেয়ে ৮৪ পয়সা ও আরইবির চেয়ে ৮৯ পয়সা বেশি দিতে হচ্ছে নেসকোকে। এছাড়া অন্য কোম্পানির জন্য যেখানে পাওয়ার ফ্যাক্টর দশমিক ৯০ ধরা হয়। নেসেকোর ক্ষেত্রে তা দশমিক ৯২ ধরা হচ্ছে। ফলে প্রতি ইউনিটে ওজোপাডিকো বা আরইবির চেয়ে নয় পয়সা বেশি ব্যয় হচ্ছে নেসকোর। এভাবে সরবরাহ ব্যয় ও বিদ্যুতের খুচরা দামের মধ্যে পার্থক্য থাকায় বছরে ৩৮২ কোটি টাকা লোকসান গুণছে উত্তরাঞ্চলের কোম্পানিটি।
বিইআরসির মূল্যায়ন কমিটি মতে, ২০১৭-১৮ বছরের জন্য প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে নেসকোর পরিচলন ব্যয় সাত টাকা চার পয়সা। বিদ্যুতের খুচরা দাম ছয় টাকা ১৫ পয়সা। প্রতি ইউনিটে ঘাটতি ৮৯ পয়সা। ঘাটতি মেটাতে পাইকারি পর্যায়ে দামের সমন্বয় প্রয়োজন। পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়লে খুচরা পর্যায়েও দাম বাড়াতে হবে।
ভোক্তাদের পক্ষে অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, কোম্পানি করার আগে এই গ্রাহকদের বিদ্যুৎ দিতো পিডিবি। তখন ব্যয় কম ছিল। নতুন কোম্পানি হলো কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা ও সুযোগ সুবিধা বাড়লো। এতে ব্যয় বেড়েছে। এই দায় ভার গ্রাহক বহন করবে কেনো?
শুনানিতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. সালেক সুফিসহ অন্যরা।