আরও দুদিন চাই, বিদ্যুৎ ঘাটতি ২ হাজার মেও: প্রতিমন্ত্রী

বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আরও দুইদিন সময় চাইলেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। বললেন, শনিবারের মধ্যে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। আর এখন দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি।
সিএনজি ষ্টেশন বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বন্ধ রেখে এবং সার কারখানার গ্যাস বিদ্যুতে দিয়ে এই পরিস্থিতি সামাল দেয়া হবে বলে জানান তিনি। ১লা রমজান থেকে এই কার্যক্রম চালু হবে। তবে রমজানে বিদ্যুতের লোডশেডিং একেবারে চলে যাবে না বলেও তিনি জানান।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বিদ্যুৎ ভবনে বর্তমান বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

এর আগে গত ২২ মে প্রতিমন্ত্রী এক সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ৩/৪ দিন সময় লাগবে বলে জানান। ৩/৪ দিন পর আবার সংবাদ সম্মেলন করে তিনি দুইদিনের সময় চাইলেন। আর পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে যে ব্যবস্থার কথা জানালেন তাও নতুন কিছু নয়। এটা প্রতিবছরের কর্মসূচি।

তবে এই বিদ্যুৎ বিভ্রাটকে লোডশেডিং নয় লোডশেয়ারিং বলে জানিয়েছেন তিনি।সারাদেশে এত বিদ্যুৎ সমস্যা হওয়ার পরও বিপিডিবি এর হিসাবে দেখানো হচ্ছে দেশে কোন লোডশেডিং নেই। এবিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, লোডশেডিং করছি না। লোডশেয়ারিং করছি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, শনিবারের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারবো। এখন আট হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। ১০ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন হলেই সমস্যার সমাধান হবে। শনিবার পর্যন্ত ধৈর্য ধরুন।এরমধ্যে পরিস্থিতি ভাল হবে। স্বাভাবিক হবে।
বিবিয়ানা ও মেঘনা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়মিত মেরামতের জন্য বন্ধ থাকায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে তিনি জানান। একই সাথে সরকারি বেসরকারি কয়েকটি কেন্দ্র মেরামতের জন্য বন্ধ রাথা হয়েছে।এই গরমের সময় কেন নিয়মিত মেরামতের জন্য বন্ধ করা হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিভিন্ন কারণে শীতের সময় বন্ধ করা সম্ভব হয়নি।
এক প্রশ্নের উত্তরে শনিবারের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পেছনে কয়েকটি যুক্তি তুলে ধরেন। বলেন, শনিবারের মধ্যে গ্যাস পাব। কাফকো সারকারখানা বন্ধ রাখা হয়েছে। তার গ্যাস বিদ্যুতে দেয়া হবে। সিএনজি স্টেশন বিকাল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বন্ধ রাখা হবে। বাণিজ্যিক বিভিন্ন কারখানা বন্ধ রাখা হবে। সেখান থেকে গ্যাস পাওয়া যাবে। রাতে বিপণি বিতানগুলোতে আলো কম জ্বালানো হবে। সেখানে সাশ্রয় হবে। এগুলো থেকে পাওয়া যাবে। সাথে উৎপাদনও বাড়বে। গ্যাস স্বল্পতা বড় সমস্যা বলে তিনি জানান। বর্তমানে সঞ্চালন লাইন ১২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পরিবহন করতে পারে বলেও তিনি জানান।
সামগ্রীকভাবে এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও একটু সময় লাগবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। বলেন, বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো উৎপাদনে আসতে সময় লাগছে। বিশেষ করে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র। আগামী জুন মাসে এলএনজি আমদানি শুরু হবে। এলএনজি আমদানি শুরু হলে গ্যাসের সমস্যা কিছুটা মিটবে। বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো উৎপাদনে চলে আসলেই সমস্যার সমাধান হবে।
প্রতিমন্ত্রীর সাংবাদিক সম্মেলনের আগে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক শুরু করেন। বৈঠকে দেয়া তথ্যে জানানো হয়, কোন এলাকায় লোডশেডিং করতে হলে তা গ্রাহককে আগে থেকেই জানাতে হবে। ইফতার, তারাবির নামাজ ও সেহরির সময় লোডশেডিং না করা, রাত আটটায় বিপনী বিতান ও দোকান বন্ধ করতে হবে, সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ চাহিদার সময় অর্থাৎ সন্ধ্যায় রি-রোলিং মিল, ওয়েল্ডিং মেশিন, লন্ড্রীসহ বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী সরঞ্জাম ব্যবহার বন্ধ রাখতে হবে, সুপার মার্কেট, পেট্রোল পাম্প ও সিএনজি স্টেশনে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বাতি ব্যবহার বন্ধ করতে হবে, ইফতার ও তারাবির সময় শীতাতপ নিয়ন্ত্রন যন্ত্রের সাশ্রয়ী ব্যবহার করতে হবে, বিদ্যুতের অপচয় রোধ করতে সিএফএল বাল্বের পরিবর্তে এলইডি ব্যবহারে ব্যবস্থা নিতে হবে, এক এক দিন এক এক এলাকার বিপনী বিতান বন্ধ রাখার নিয়ম (হলিডে স্ট্যাগারিং) কার্যক্রম জোরদার করা হবে, প্রয়োজনে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করতে হবে এবং অবৈধ্য বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।

power minister nosrul hamid energy bangla