বিদ্যুতের সেবার মান বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে ডিপিডিসি

রাজধানীতে বিদ্যুৎ সেবার মান বাড়াতে বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি)। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় করা হবে ২০ হাজার ৫০১ কোটি টাকা। এর মধ্যে চীনের ঋণ হচ্ছে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। বাকি অর্থ সরকারি কোষাগার থেকে ব্যয় করা হবে। বর্তমান উপকেন্দ্রগুলোকে আধুনিকিকরণ ও সঞ্চলন লাইনগুলোকে ভূগর্ভস্থ লাইনে রূপান্তরের মাধ্যমে পাঁচ বছরে অর্থাৎ ২০২১ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
২০২১ সালের মধ্যে সারাদেশের চাহিদা মেটাতে সরকার ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এতে দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন অনেক বাড়লেও সঞ্চালন এবং বিতরণ ব্যবস্থা এখনো নাজুক অবস্থা। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা ও এর পাশে নারায়ণগঞ্জ জেলাতে আধুনিকায়ন করা হয়নি। তাই যখন তখন লোডশেডিং হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে ডিপিডিসিকে নতুন করে উদ্যোগ নেয়ার নির্দেশ দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। ‘এক্সপানশন অ্যান্ড স্ট্রেনদেনিং অব পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক আন্ডার ডিপিডিসি এরিয়া’ নামে একটি প্রকল্প তৈরি করেছে ডিপিডিসি। প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ হাজার ৫০১ কোটি ৫১ লাখ  টাকা। এরমধ্যে প্রকল্প সাহায্য হচ্ছে ১৩ হাজার ৮৪৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা ও সরকারি অর্থ ব্যয় হবে ১ হাজার ১২০ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বঙ্গভবনসহ রাজধানীর ইংলিশ রোড, তেজগাঁও, কাকরাইল, নবীনগর, বশিলা, মোহাম্মদপুর, গ্রিন মডেল টাউন, তালতলা, গোড়ান, মাতুআইল, নাখারপাড়া, মহাখালী, বেইলি রোড, হলি ফ্যামিলি, হাসপাতাল, বসিলা-১, বসিলা-২, শ্যামলী, আদাবর, মনসুরাবাদ, মাণ্ডা, দক্ষিণগাঁও, গোড়ান-২, বনশ্রী-২, সিপাইবাগ, রিয়াজবাগ, লামাপাড়া, দেলপাড়া-২, ভূইগড়, সানারপাড়, শিবু মার্কেট, রিয়াজবাগ, লাসাপাড়া, দেলপাড়া-২, মুন্সীখোলা, ধানমণ্ডি ও বুয়েট এলাকা রয়েছে। এ ছাড়া হাতিরঝিল (মগবাজার), নারিন্দা, শ্যামপুর, কামরাঙ্গীরচর, পঞ্চবটি বিএসসিআইসি, সারুলিয়া ও সিকদার মেডিক্যাল কলেজ। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের সাইন বোর্ড, ফতুল্লা স্টেডিয়াম, চাষাঢ়া ও আদমজী এলাকাও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ডিপিডিসি জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ডিপিডিসির ওইসব এলাকায় গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। এ জন্য ১৩২ কেভি লাইনের ৫৩৩০ এমভিএ ট্রান্সফরমার এবং ৩৩ কেভির ৪০৮০ এমভিএ ক্ষমতাবর্ধন করা হবে। এ জন্য ১৩২/৩৩ কেভি উপকেন্দ্র নির্মাণ হবে ১৪টি। নতুন ৩৩/১১ কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন উপকেন্দ্র নির্মাণ হবে ৪০টি। দাফতরিক ও বাণিজ্যিক ভবনও নির্মাণ করা হবে। বিদ্যমান ১৩২/৩৩ কেভি ভূগর্ভস্থ কেবল নেটওয়ার্ক তৈরি করা হবে ৮টি। একই সঙ্গে বিদ্যমান ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্রের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে ৪টি। নতুন করে ১৩২ কেভির ভূগর্ভস্থ ক্যাবল লাইন নির্মাণ করা হবে ৬৫৩ কিলোমিটার। আর ৩৩ কেভির ভূগর্ভস্থ ক্যাবল লাইনও নির্মাণ করা হবে সাতশ’ কিলোমিটার। একই সঙ্গে হাতিরঝিল এলাকার বিদ্যমান ওভারহেড সঞ্চলন লাইনকে ভূগর্ভস্থ লাইনেও রূপান্তর করা হবে। ধানমণ্ডিতে ১১/ ০.৪ কেভি ভূগর্ভস্থ নতুন বিতরণ লাইন নির্মাণ করা হবে ১০৫ কিলোমিটার। অন্য এলাকাতেও ১১/০.৪ কেভির ওভারহেড নতুন বিতরণ লাইন নির্মাণ করা হবে ৫৮২ কিলোমিটার। বর্তমান উপকেন্দ্রগুলোকে সয়ক্রিয়করণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বিবেচনা করে নতুন (এসসিএডিএ) স্ক্যাডা স্থাপন করা হবে একটি। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ কমপ্লেক্সসহ টেস্টিং ল্যাবরেটরি নির্মাণ ও উন্মুক্ত হ্যাঙ্গার সংবলিত অত্যাধুনিক মেকানাইজড ওয়্যার হাউস নির্মাণও করা হবে।
এ বিষয়ে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নজরুল হাসান বলেন, ঢাকায় বিদ‌্যুৎ সেবার মান বাড়াতে ডিপিডিসি কাজ করে যাচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে এ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। তিনি জানান, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ডিপিডিসির গ্রাহক সেবার মান আরো ভাল হবে।