বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে বাজেটের পুরোটা কখনই খরচ হয় না
বাজেট বরাদ্দের পুরোটা খরচ করতে পারে না বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগ। প্রতিবছরই মোটা অংকের বরাদ্দ রাখা হয়। কিন্তু বছর শেষে দেখা যায় বড় একটি অংশই বরাদ্দ থেকে বাদ দিতে হচ্ছে। খরচ করতে না পারার কারণে বরাদ্দ কমানো হচ্ছে। এই অবস্থায় আসন্ন অর্থবছরেও মোটা অংকের বরাদ্দ রাখা হচ্ছে বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতে।
গত কয়েক বছরের বাজেট বরাদ্দ এবং খরচ পর্যালোচনা করে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
চলতি অর্থবছরে বিদ্যুৎখাতে মোট বরাদ্দ ছিল নয় হাজার ২৭২ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। কিন্তু খরচ হয়েছে আট হাজার ২৮৩ কোটি ৭১ লাখ টাকা। প্রায় এক হাজার কোটি টাকা (৯৮৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা) খরচই করা যায়নি। এপ্রিল ২০১৫ পর্যন্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের আর্থিক কাজ হয়েছে ৬৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং ভৌত কাজ হয়েছে ৬৪ দশমিক ৩১ শতাংশ।
একই অবস্থা জ্বালানিখাতেও। যা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা খরচ করতে পারেনি। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের জন্য বরাদ্দ ছিল এক হাজার ৭১ কোটি ১৫ লাখ টাকা। কিন্তু এপ্রিল পর্যন্ত খরচ হয়েছে এক হাজার ৩৩৮কোটি ২০ লাখ টাকা অর্থাৎ ৫৯ দশমিক ৭৭ ভাগ।
বিদ্যুৎ বিভাগের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, টাকা ছাড় হতে দেরি হওয়া এবং দরপত্র আহবান জটিলতায় অনেক সময় প্রকল্প শেষ করা যায় না। বরাদ্দ হওয়া অর্থ হাতে পেলেও যাদের মাধ্যমে কাজ করানো হয় অনেক সময় তারাও দেরি করে। ফলে টাকা খরচ করা যায় না। নানা নিয়ম কাননে এবং উদ্যোগে সমস্যা থাকার করাণে এসব হয়ে থাকে।
২০০৭-০৮ অর্থবছর থেকে এখন পর্যন্ত পর্যালোচনা করলে দেখা যায় মাত্র দুই বছর বাদে কোন বছরই বাজেট বরাদ্দের পুরোটা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগ খরচ করতে পারেনি। ২০০৭-০৮ অর্থবছরের বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল চার হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা, খরচ হয়েছে তিন হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল চার হাজার ৩৪০ কোটি টাকা, খরচ হয়েছে দুই হাজার ৯০৭ কোটি টাকা। ২০০৯-১০ অর্থবছরের ছিল চার হাজার ৩১০ কোটি টাকা, খরচ হয়েছে তিন হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছরের বরাদ্দ ছিল আট হাজার ৩১০ কোটি টাকা, খরচ সাত হাজার ১৯২ কোটি। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১১ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা, খরচ হয়েছে নয় হাজার ৯০৩ কোটি টাকা।
এরমধ্যে মাত্র দুই বছর বাজেটে যা বরাদ্দ ছিল তা থেকে খরচ বেশি হয়েছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল নয় হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা, খরচ হয়েছে নয় হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা এবং ২০১০-১১ অর্থবছরের বরাদ্দ ছিল ছয় হাজার ১১৪ কোটি টাকা, খরচ হয়েছে সাত হাজার ২৫৬ কোটি টাকা।
এদিকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বিদ্যুৎখাতের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসুচিতে মোট ১৬ হাজার ৪৮৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এরমধ্যে সরকারিভাবে সাত হাজার ৩০০ কোটি টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য নয় হাজার ১৮৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা। যা গত অর্থবছরের তুলনায় সাত হাজার ২১২ কোটি ২৮ লাখ টাকা বেশি। আগামী অর্থবছরের বিদ্যুৎ বিভাগের ৬৬টি প্রকল্প এডিপির আওতাভুক্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে ৬১টি বিনিয়োগ এবং ৫টি টিএ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের এডিপিতে ৭৮টি অননুমোদিত প্রকল্প (বিনিয়োগ ১৯টি এবং বৈদেশিক সাহায্য পাওয়ার জন্য ৫৯টি) বরাদ্দহীনভাবে সবুজ পাতায় অন্তর্ভুক্ত আছে।
২০১৫-১৬ অর্থবছরে এখাতে এক হাজার ৯৯৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এরমধ্যে সরকারি ও প্রকল্প সাহায্যভূক্ত মোট ২২টি অনুমোদিত প্রকল্পের অনুকূলে এক হাজার ৯৮৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া অননুমোদিত প্রকল্পের জন্য থোক হিসেবে ১০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা (সরকারি খাতে তিন কোটি তিন লাখ এবং প্রকল্প সাহায্য সাত কেটি ৮১ লাখ টাকা) বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। আগামী বছরে জ্বালানির এডিপিতে মোট ৪৯টি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে কয়েকটি প্রকল্প পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, টাকা বরাদ্দ হয়েছে, ছাড়ও হয়েছে। কিন্তু এক বছরে এক টাকাও খরচ করা যায়নি। টাকা ছাড় হলেও বিবিয়ানা ৪০০ মেগাওয়াটের তিন নম্বর প্রকল্পটিতে এক টাকাও খরচ করতে পারেনি। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য সাত কোটি টাকা ছাড় হয়েছিল। শাহজিবাজার ৩৫ মেগাওয়াটের দুটি কেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন হলেও কোন টাকা ছাড় হয়নি। ফলে কাজও হয়নি। একই অবস্থা বাঘাবাড়ি ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ঘোড়াশাল ৩৬৫ মেগাওয়াট, এবং চাপাঁইনবাবগঞ্জ ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রে। শাহজিবাজার ৩৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য মাত্র জমি উন্নয়নের কাজ হয়েছে। অথচ ইতিমধ্যে পাঁচ কোটি টাকা ছাড় হয়েছে। যে টাকা ছাড় হয়েছে তার এক টাকাও খরচ হয়নি। বৃহত্তর চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রকল্পের কাজ হয়েছে মাত্র দুই দশমিক ৬৮ ভাগ। খুলনা ও কুমিল্লায় প্রিপেউড মিটার লাগানোর কথা থাকলেও তার কোন কাজই হয়নি। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুর ও রাজশাহিতে পল্লী বিদ্যুতের কার্যক্রম বাড়ানোর প্রকল্পেও একটুও কাজ হয়নি। কথা ছিল বঙ্গভবন, গণভবন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ১১ কেভি সুইচিং স্টেশন নির্মানের। কিন্তু তা হয়নি।
আবার বড়পুকুরিয়া ২৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রর জন্য এক টাকাও ছাড় না হলেও বলা হচ্ছে ২০ ভাগ শেষ।