দরপত্র ছাড়া আরো চার বছর কেনাকাটা

দরপত্র ছাড়াই আরো চার বছর বিদ্যুৎ ও জ্বালানিখাতের যেকোনো কেনাকাটা করা যাবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি  দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন ২০১০’ সংশোধন করে এর মেয়াদ আরো চার বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বুধবার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সভাপতিত্বে বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহম্মদ হোসেন বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি  দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন ২০১০’ এর মেয়াদ চার বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এই আইনের মাধ্যমে ভাড়ায় আনা বিদ্যুকেন্দ্র স্থাপন, রাশিয়ার গ্যাসপ্রমের মাধ্যমে গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম করা হয়েছে। এছাড়া তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল স্থাপনসহ বড় বড় প্রকল্পগুলোর কাজ এই আইনের মাধ্যমেই করা হবে।
দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে বড় ধরণের বিনিয়োগ দীর্ঘমেয়াদি হওয়ায় সরকার দ্রুত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন ও গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য সরকার এই আইন পাশ করেছিল। এই আইনের আগে সরকারি সকল কেনাকাটা দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে করতে হতো। ২০১০ সালের  ১২ অক্টোবর থেকে এই আইন কার্যকর হয়েছিল। যার মেয়াদ পরবর্তীকালে আরো দুই বছর বাড়ানো হয়। চলতি বছরের ১১ অক্টোবর এই আইনের মেয়াদ শেষ হবে। চার বছরও পরও ‘জরুরী’ বিষয়টি অব্যহত রাখা হচ্ছে।
‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন ২০১০ এ ১৪টি ধারা রয়েছে। আইনটিতে বিদ্যুৎ জ্বালানি সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় প্রকল্প নেয়া ও প্রক্রিয়াকরণ কমিটির মাধ্যমে পরিকল্পনার প্রাথমিক পর্যায় থেকে চূড়ান্ত পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া এবং অর্থনৈতিক বা ক্রয় বিষয়ক ধারা রয়েছে।
এ বিষয়ে তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, এই আইন কার্যকর হওয়ায় দরপত্র ছাড়া বহু অযোগ্য কোম্পানি কাজ দেয়া হয়েছে। এতে বিদ্যুত্খাতে যে দুর্নীতি হয়েছে তা নিয়ে মামলা করা তো দূরে থাকুক কথাও বলা যাচ্ছে না। এতে বিদ্যুত্খাতের উন্নয়নের পরিবর্তে দুর্নীতির বিরাট ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, নতুন করে এই আইনের মেয়াদ না বাড়িয়ে চলমান আইনের কাজ করা উচিত ছিল বর্তমান সরকারের।

এই আইনের আওতায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বিদ্যুৎ কিনতে এ পর্যন্ত ২০টি চুক্তি সাক্ষর করেছে। ১৫ কুইক রেন্টাল ও পাঁচটি রেন্টাল বিদ্যুৎ কোম্পানির ২২টি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনতে চুক্তি করে পিডিবি। এরমধ্যে ১৩ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ পাঁচ বছর করে বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া এক হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার আরো ১৫টি আইপিপি (ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্ল্যান্ট) স্থাপনের চুক্তি করে পিডিবি।
জ্বালানিখাতে এই আইনের আওতায় রাশিয়ার রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রমের সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্রের ১০টি উন্নয়ন কূপ খননের চুক্তি করে পেট্রোবাংলা। গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল) ৮টি চুক্তি করে। এরমধ্যে ২টি গ্যাস কম্প্রেসর এবং আশুগঞ্জ থেকে এলেঙ্গা, বাখরাবাদ থেকে সিদ্ধিরগঞ্জ এবং ভেড়ামারা থেকে খুলনা পর্যন্ত তিনটি গ্যাস ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপনের কাজ রয়েছে।
সর্বশেষ এই আইনের আওতায় চলতি বছর কক্সবাজারের মহেশখালীতে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ভাসমান টার্মিনাল স্থাপনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এক্সট্রা অয়েল এন্ড এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে অনুসাক্ষর করেছে পেট্রোবাংলা।