চাহিদার চেয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বেশি অর্থনীতিতে বোঝা

বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা চাহিদার অতিরিক্ত থাকায় ভর্তুকি বেশি লাগছে। একারণে সরকারকে এখন উৎপাদন প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে ‘ধীরে চলো নীতি’ গ্রহণের সুপারিশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বুধবার বিদ্যুৎ জ্বালানির বাজেট নিয়ে অনলাইন সেমিনারের আয়োজন করে। সেখানে বক্তারা একথা বলেন।

সিপিডে’র চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, সামঞ্জস্যপূর্ণ বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং বিতরণ ব্যবস্থার ওপর জোর দিতে হবে। তিনি বলেন, কেন ভাড়ায় আনা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর নির্ভরতা থেকে সরকার বের হতে পারছে না। এগুলোর খরচ বেশি। বিদ্যুৎ চাহিদার সাথে উৎপাদনের সমন্বয় করতে হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, এখন শিল্প কারখানার ক্যাপটিভসহ আমাদের উৎপাদন ক্ষমতা ২৩ হাজার মেগাওয়াট। চার হাজার মেগাওয়াট রয়েছে ক্যাপটিভ পাওয়ার। অর্থাৎ, ক্যাপটিভ বাদে রয়েছে ১৯ হাজার মেগাওয়াট। এই ১৯ হাজারের মধ্যে আবার অবচয় বাদ দিলে থাকে ১৭ হাজার মেগাওয়াট। এরমধ্যে আরও এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র ইতোমধ্যে অর্থনৈতিকভাবে আয়ু ফুরিয়েছে। তাহলে আমাদের উৎপাদন ক্ষমতা হচ্ছে ১৬ হাজার মেগাওয়াট। করোনা না থাকলে বিদ্যুতের সংকট তৈরি হতো উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সমালোচনা করার আগে এসব বিষয়ে পর্যাপ্ত জানাশোনার প্রয়োজন রয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকার কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের নীতি পরিবর্তন করেছে। এখন মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মধ্যে পাঁচ হাজার মেগাওয়াট কয়লা থেকে উৎপাদন করা হবে। কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন দক্ষতা যেখানে ৪২ থেকে ৪৩ ভাগ, সেখানে গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন দক্ষতা ৬২ ভাগ। এছাড়া, এলএনজি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়। এজন্য নতুন করে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে কয়লার বদলে এলএনজিকে প্রাধ্যান্য দেয়া হবে।

সেমিনারে সিপিডি বলেছে, যেসব কয়লাচালিত বিদ্যুৎ প্রকল্প অতিসম্প্রতি গ্রহণ করা হয়েছে, সেগুলো বাতিল করতে হবে। বাজেটে কয়েকটি কয়লাচালিত প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ এবং সম্ভাব্যতা জরিপ চালানোর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এসব প্রকল্প বাতিল করে সঞ্চালন এবং বিতরণে দিতে হবে।

সেমিনারে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ম তামিম বলেন, বিদ্যুতের চাহিদার যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে, তা খুব বেশি উচ্চাভিলাষী মনে হয়েছে। বড় তিন প্রকল্প মাতারবাড়ি, পায়রা, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বাদে বাকি প্রজেক্টগুলো বাদ দেয়া উচিত। এই প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে কয়লা আমদানি বড় ধরনের ঝামেলা। এজন্য দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধানে জোর দিতে হবে। অন্যদিকে পর্যায়ক্রমে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেয়া উচিত।

সাবেক বিদ্যুৎ সচিব ড. ফয়জুল কবির খান বলেন, প্রয়োজন অনুসারে প্রকল্প বাস্তবায়ন বা বাতিল করা যেতে পারে। বিদ্যুতের দাম বাজার চাহিদার ওপরে ছেড়ে দেয়া উচিত।

বাংলাদেশ ইনডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ইমরান করীম বলেন, বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর দক্ষতা ভালো। এজন্য এগুলো উৎপাদনের তালিকায় অগ্রাধিকার পায়। সরকার যেভাবে আশা করেছিল, সেভাবে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়েনি। সঞ্চালন ও বিতরণ প্রকল্পগুলোতে কোভিড পরিস্থিতিতে একটু ধীরে এগুনো উচিত। না-হলে সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়বে।

সেমিনারে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন, স্রেডার সাবেক সদস্য সিদ্দিক যোবায়েরসহ অনেকে বক্তব্য রাখেন।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থার গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।