বিদ্যুৎ জ্বালানির দাম বাড়ানোর পরামর্শ ঋণদাতাদের
প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম বলেছেন, বিদেশী ঋণদাতারা সব সময় বিদ্যুৎ জ্বালানির দাম বাড়ানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থায় সেটা সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী চান না জনগণ দুর্ভোগের শিকার হোক।
শুক্রবার বিদ্যুৎ ভবনে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালা উদ্বোধনীতে তিনি একথা বলেন।
তৌফিক-ই-ইলাহী বলেন, দাতা সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিদ্যুতে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে। এই ভর্তূকি অন্যখাতে দেয়া যেতে পারে। বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে সেই টাকা দিয়ে অনেকগুলো হাসপাতাল স্থাপন করা যেতে পারে। কিন্তু তাদের সেই পরামর্শ বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রক্ষাপটে মেলানো যায় না। দাম বাড়ানোর সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িত।
বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মনোয়ার ইসলামের সভাপতিত্বে কর্মশালা উদ্বোধনীতে অন্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য এসএম গোলাম ফারুক, টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান তাপস কুমার রায়, বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বক্তৃতা করেন। বিদ্যুৎ বিভাগ আয়োজিত দুই দিনের এই ‘সেক্টর লিডারর্স ওয়ার্কশপ ২০১৫’ এ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সংস্থা ও কোম্পানির প্রধানরা অংশ নেন।
উপদেষ্টা বলেন, ভাড়ায় আনা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে সমালোচনা থাকলেও এখন জনগণ এর সুফল পাচ্ছে। ভাড়ায় আনা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে জ্বালানি খরচ বেশি এজন্য সমালোচনা হয়। কিন্তু এখন বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কম। তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে সকলের জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা হবে। এখন ৭০ ভাগ মানুষ বিদ্যুতের সুবিধা ভোগ করছে। নিরাপত্তা শব্দটি আপেক্ষিক বিষয়। পুরোপুরি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এখন যাকে নিরাপত্তা বলছি, দশ বছর পর তা বদলে যেতে পারে। তিনি বলেন, সারাদেশে বিদ্যুতের সুবিধাভোগী বলা হচ্ছে ৬৮ শতাংশ। মনে হয় এই হিসাব ঠিক নয়। এখন সুবিধাভোগী ৭০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। বিদ্যুৎ সুবিধা পাওয়ার সাথে সাথে মানুষের জীবন মানেরও উন্নতি হচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। তখন শিল্পসহ বিভিন্ন খাতে আলাদা আলাদা বিদ্যুৎ দেয়া হবে। তিনি বলেন, দেশের সামগ্রীক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎ জ্বালানিখাত অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এইখাতে যারা আছে তাদেরকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে হবে। আমলাতান্ত্রিকতা বাদ দিতে হবে। সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
আসন্ন গ্রীষ্ম মৌসুমে লোডশেডিং বিষয়ে তিনি বলেন, এ মৌসুমে চাহিদা সাড়ে আট হাজার ছাড়িয়ে যাবে। এই পরিমান বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা আছে। তবে কিছুটা সমস্যা হলে জনগণকে মেনে নেয়ার অনুরোধ করছি।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিদ্যুতের সঙ্গে জ্বালানি সরাসরি জড়িত। এই দুইয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য করা না গেলে জটিলতা তৈরি হতে পারে। প্রাথমিক জ্বালানি আগে নিশ্চিত করতে হবে।
কর্মশালায় পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ইশতিয়াক আহমেদ জানান, ২০১৯ সালে বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাসের চাহিদা দাঁড়াবে ২০০ কোটি ঘনফুট। নতুন কোনো গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার না হলে এ বাড়তি চাহিদা পুরণ করা যাবে না। গ্যাস সংকট আছেই, নতুন কোনো গ্যাসক্ষেত্রও আবিষ্কার হয়নি। সম্প্রতি যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি হয়েছে তার মধ্যে বেশিরভাগই গ্যাসভিত্তিক। নতুন ২৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে ১৫টিই গ্যাসভিত্তিক। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে প্রতিদিন ১৪২ কোাটি ঘনফুট গ্যাস লাগবে। এই চাহিদা জুলাই থেকে ডিসেম্বরে বেড়ে দাঁড়াবে ১৫২ কোটি ঘনফুট। প্রতিবছর এই চাহিদা বাড়তেই থাকবে। ২০১৯ সালে গিয়ে চাহিদা দাঁড়াবে ২০৮ কোটি ঘনফুট।