বিদ্যুৎ জ্বালানির সব চুক্তি প্রকাশ চায় দাবি বিএনপি’র 

নিজস্ব প্রতিবেদক/বিডিনিউজ:

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সব চুক্তি প্রকাশের দাবি জানিয়েছে বিএনপি।

এ খাতে সত্যিকার অর্থে টেকসই উন্নয়ন হয়নি মন্তব্য করে দলটি বলেছে, বিদ্যুৎ খাত যেকোনো সময় মুখ থুবড়ে পড়তে পারে।

বৃহস্পতিবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ‘গত ১৫ বছরের আওয়ামী লীগ আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ লুটপাট ও পাচার’ শীর্ষক বিশ্লেষণ তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকেন বিএনপি মহাসচিব।

গত সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দুর্নীতি-অনিয়মের চিত্র তুলে ধরেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুৎ খাতে ‘ম্যাজিক’ দেখানোর নামে একটা ‘ব্যবসার’ খাত খুলে বসেছিল। আইনি পথে নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে ইচ্ছামত বিদ্যুৎ খাতের চুক্তিগুলো করেছে। জনগণের অধিকার আছে এসব বিষয় জানার।

কীভাবে চুক্তিগুলো হল সেটি প্রকাশ করা উচিত মন্তব্য করেন ‍ ইকবাল মাহমুদ বলেন, অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রথম কাজ হলো জনগণের কাছে এই চুক্তিগুলো উন্মুক্ত করে দেওয়া, জনসমক্ষে প্রকাশ করা।

সংবাদ সম্মেলনে ক্যাপাসিটি চার্জ বা কেন্দ্র ভাড়ার নামে ১৫ বছরে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা ‘লুটপাটের’ অভিযোগ তোলা হয়েছে। বলা হয়, বিদ্যুৎখাতে ১৫ বছরে মোট খরচ হল ২ হাজার ৮৩০ কোটি ডলার। বর্তমান বিনিময় হারে তা ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। ক্যাপাসিটি চার্জে লুটপাট হয়েছে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা।

“২০০৮-০৯ অর্থবছরে হয়েছে ১ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা, ২০১১-১২ অর্থ বছরে হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে হয়েছে ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা এবং ২০২২-২৩ এ হয়েছে ১৭ হাজার ১৫৫ কোটি টাকা।”

তিনি বলেন, তার অর্থ হল- বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চলেনি এবং এই টাকা তাদের দেওয়া হয়েছে। এভাবে দেশের মানুষের কাছ থেকে ‘লুট’ করে নিয়ে গেছে।

সাবেক এই বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, সামিট নিয়েছে ১০ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা, অ্যাগ্রিকো ইন্টারন্যাশনাল নিয়েছে ৭ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা, আল্ট্রা পাওয়ার হোল্ডিংস নিয়েছে ৭ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা, ইউনাইটেড গ্রুপ নিয়েছে ৬ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা, আরপিসিএল নিয়েছে ৫ হাজার ১১৭ কোটি টাকা।

তিনি বলেন, “কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট আসে সাধারণত আপদকালীন বিদ্যুৎ সংকট নিরসনের জন্য। এই প্ল্যান্ট দু্ই বছরের, সেটা ১৫ বছর পর্যন্ত চালাচ্ছে এবং এসব কুইক রেন্টালে ৭৫% বিনিয়োগ করেছে উইথ আউট রিটার্ন। ভারত থেকে বিদ্যু আমদানির নামে ৯ বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়েছে ১১ হাজার ১৫ কোটি টাকা। সব কিছু রিভিউ করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা পুরো বিষয়গুলো রিভিউ করব। এগুলো করার পর যেটা প্রয়োজনীয় সেটা আমরা করব।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে রিভিউ মানে বাতিল না। আমরা দেখবো যে, কোন কোন জায়গায় দুর্বলতা ছিল।

সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদ্যুতে যেসব উন্নয়ন করা হয়েছে তা টেকসই না। যেকোনো সময় মুখ থুবড়ে পড়বে।

তিনি বলেন, “উনারা তো বিল পেমেন্ট করছেন। আমি যতটুকু জানি বকেয়া বেশি নাই.. সবই তো পেমেন্ট করছে এই সরকার এসে। কিন্তু আলমেটলি ২০২৭ সালে এসে ধরা খাবে।

“আমরা মনে করি, এখন যদি আমরা টাইট না করি, তাহলে ২০২৭ সালে আমরা বিপদে পড়ে যাবো। ফরেন এক্সচেঞ্জ ঘাটতি হয়ে যাবে। টাকা ছাপানো হবে, এতে ইনফ্লুয়েশন বাড়বে… বুঝতেই পারেন কি হবে?”

রূপপুর প্রকল্পে দুর্নীতি

রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের ৫ বিলিয়ন ডলার তারা (শেখ হাসিনাসহ তার পরিবার) নিয়ে গেছে। সেটা নিয়ে তদন্ত হচ্ছে লন্ডনে টিউলিপের ব্যাপারে।

প্রিপেইড মিটার বাণিজ্যে সিন্ডিকেট

ইকবাল মাহমুদ বলেন, এটা তাদের একটা সিন্ডিকেট। ৭১ লাখ ২০ হাজার গ্রাহকের কাছে তারা মিটার পৌঁছাবে এবং সেখানে বিরাট অংকের একটা দুর্নীতি প্রায় ৩৬ কোটি টাকা পাচার করেছে। ১ হাজার ২৩৫ কোটি অতিরিক্ত খরচ করেছে, এর মধ্যে দুর্নীতি করেছে ৬১৭ কোটি টাকা। মিটার সরবারহ ও স্থাপন, বাস্তবায়নে ছিল ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, সেটা ১২ হাজার কোটি টাকা করেছে।

তিনি বলেন, স্মার্ট প্রিডেইড মিটার প্রকল্প, এর যে নেটওয়ার্ক তৈরি করছে, এই নেটওয়ার্কটা হচ্ছে কিছু ব্যক্তির নেটওয়ার্ক। যেখানে পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় স্বজনরা আছে। তাতে তারা কোটি কোটি টাকা লাভবান হবে এই প্রকল্পে।

সাবেক বিদ্যু প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর কোম্পানিসহ ‘একটি চক্র’ এলএনজি প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি, লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ করেন ইকবাল হাসান মাহমুদ টুক।

বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রতিরোধে এই খাতে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, প্রকল্পের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ বাড়ানো, দুর্নীতি রোধে কঠোর আইন প্রণয়ন, বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, নিয়মিত বিদ্যুৎ পরীক্ষা-নিরীক্ষা পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলে মনে করেন সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী।