বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের পরিকল্পনা দাতা নির্ভর 

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতের পরিকল্পনা দাতা নির্ভর। এজন্য বিনিয়োগকারী ও সংশ্লিষ্ট দাতাদের কাছে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত অনেকাংশেই জিম্মি।

টিআইবি-বাপার যৌথ অধিপরামর্শ সভায় বক্তারা একথা বলেন।

বক্তারা বলেন, আইনি দুর্বলতা, নীতিকাঠামোর জিম্মিদশা এবং স্বচ্ছতার ঘাটতিতে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারে রাষ্ট্র ও জনগণের ক্ষতি হচ্ছে। অন্যদিকে, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে সরকারের অঙ্গীকার ও আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি থাকা স্বত্ত্বেও সে বিষয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ দেখা যায় না। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সুশাসন নিশ্চিতে কার্যকর জাতীয় নীতি এবং তার আলোকে পরিকল্পনা করা প্রয়োজন।

বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে‘ বাংলাদেশে কয়লা ও এলএনজি বিদ্যুৎ প্রকল্পে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ: আইইপিএমপি প্রণয়নে শুদ্ধাচার নিশ্চিতে করণীয়’ শীর্ষক এই অধিপরামর্শ সভার আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশে কয়লা ও এলএনজি বিদ্যুৎ প্রকল্প: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায় শীর্ষক গবেষণার সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন টিআইবির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো মো. মাহফুজুল হক।

সভায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বিশেষজ্ঞ ছাড়াও বরিশাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, বাঁশখালী এস এস বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং মাতারবাড়ী এলএনজি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে সরাসরি ভুক্তভোগীরাও অংশ নেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে এই মুহূর্তে জাতীয় নীতি তৈরি করা প্রয়োজন। সেই নীতি হতে হবে বাংলাদেশের স্বপ্ন ও লক্ষ্যকে মাথায় রেখে। এতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে কোনও কমতি বা শূণ্যস্থান থাকলে তা পূরণ করা সম্ভব হবে। আমরা জলবায়ু নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যতটা সোচ্চার, দেশের ভেতর পরিবেশ রক্ষার ব্যাপারে ততটা তৎপর নই। কিন্তু এখানে সামঞ্জস্য নিশ্চিত করা খুবই জরুরি।

পাওয়ার সেল’র মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, কাজ করলে কিছু ভুল ত্রুটি থাকবেই। গঠনমূলকভাবে সেই ত্রুটি ধরিয়ে দেওয়া হলে আমরাও সে ত্রুটি সংশোধনে আগ্রহী। আইইপিএমপি নিয়ে বেশ কিছু পরামর্শ পেয়েছি এবং তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনাও করা হবে। নবায়নযোগ্য শক্তি বিশেষত সৌরবিদ্যুতের ক্ষেত্রে আমরা অনেক সম্ভাবনা দেখতে পারছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বদরূল ইমাম বলেন, ২০১২ সালে সমুদ্র বিজয়ের পর থেকে আমরা তা নিয়ে বহু উদযাপন করেছি। কিন্তু গত ১০ বছরে আমরা কি সেই সমুদ্রসীমা কাজে লাগিয়েছি? পার্শ্ববর্তী দেশগুলো যেখানে গ্যাস উত্তোলন করছে আমরা ঠিক তার পাশেই এতো দিনে কি করেছি? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজা জরুরি।

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ডিন প্রফেসর ড. শামসুল আলম বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানদের একনায়কতান্ত্রিকতাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে।

সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, শুধু জিডিপিভিত্তিক উন্নয়নের মধ্যে আটকে না থেকে, বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং পরিবেশের ক্ষেত্রেও উন্নয়ন প্রত্যাশা করি। এ খাতে যথোপযুক্ত নীতিকাঠামো প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবি সমিতি’র (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, পরিবেশ নষ্ট না করেও যে সাশ্রয়ী বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা যায় তা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমরা দেখেছি। এ খাত নিয়ে গত কয়েক বছরে যে প্রচার- প্রচারণা দেখেছি তা আসলে ফানুসের মতো। দেশীয় সক্ষমতা অর্থাৎ নিজেদের গ্যাস সম্পদকে কাজে না লাগিয়ে বৈদেশিক এলএনজি নির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। যা মূলত ব্যবসায়িক স্বার্থসিদ্ধির দিকে ইঙ্গিত করে।

সমাপনী বক্তব্যে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে স্বার্থের দ্বন্দ্ব সংশ্লিষ্টদের বাদ দিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তি ও অংশগ্রহণমূলক উপায়ে প্রস্তাবিত আইইপিএমপি প্রণয়ন করতে হবে। একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপসহ প্রস্তাবিত আইইপিএমপি’তে কৌশলগতভাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে গুরুত্ব দিতে হবে। এছাড়া বিদ্যুৎ খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন’ এর দায়মুক্তির বিধানটি বাতিল করতে হবে। সার্বিকভাবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বাপা’র সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল।