বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতে বরাদ্দ বেড়েছে দুই হাজার কোটি টাকা

প্রতিবছরের মতো এবারো বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। বরাদ্দ বাড়লেও কমেছে ভর্তুকি। বিদ্যুতে ৩৩০ কোটি টাকা ভর্তুকি বাড়লেও জ্বালানিতে ৬ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা ভর্তুকি কমেছে।

২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ খাতে ১১ হাজার ৩৫১ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৯ হাজার ৬০ কোটি টাকা এবং জ্বালানি ও খনিজসম্পদ খাতে ২ হাজার ২৯১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এবার মোট বাজেটের ৫ দশমিক ১ শতাংশ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গত বছর জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে মোট ৯ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল।
এবারের বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ১৩ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা ভর্তুকির প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুতের জন্য ৫ হাজার ৫০০ কোটি এবং জ্বালানি খাতে ৭ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। গত বছর এ খাতে ভর্তুকি ছিল ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জ্বালানিতেই ভর্তুকি ছিল ১৫ হাজার ২৩০ কোটি টাকা।
এবারের বাজেটে বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতে বরাদ্দের প্রায় পুরোটাই উন্নয়ন খাতে খরচ হবে। বিদ্যুৎ খাতে ৯ হাজার ৬০ কোটি টাকার মধ্যে মাত্র ৭ কোটি টাকা অনুন্নয়ন খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বাকিপুরোটা উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ। ২০১২-১৩ অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে সংশোধিত বাজেট আছে ৮ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। অন্যদিকে জ্বালানি খাতে মোট বরাদ্দের মাত্র ৩৬ কোটি টাকা অনুন্নয়ন খাতে যাবে। বাকি ২ হাজার ২৫৫ কোটি টাকাই খরচ হবে উন্নয়ন কাজে। ২০১২-১৩ সময়ে জ্বালানিতে বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা।
গতকাল বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, প্রতিবার বিদ্যুৎ সমস্যার গ্রহণযোগ্য সমাধান দেয়ার বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেছি। ৫৪টি কেন্দ্র নির্মাণ করেছি। আমাদের সময়ে ৩ হাজার ৮৪৫ মেগাওয়াট অতিরিক্ত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করেছি। বিদ্যুৎ সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৪৭ থেকে বেড়ে ৬০ শতাংশ হয়েছে। ২০ লাখ সোলার হোম সিস্টেম চালু হয়েছে। নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে ৩০ লাখ। ২০১৫ সাল নাগাদ বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা হবে ১৪ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। ২০১৭ সালে উৎপাদন হবে ১৯ হাজার ৭০১ মেগাওয়াট। এর ফলে চাহিদা ও উৎপাদনের মধ্যে ভারসাম্য আসবে। সম্প্রতি বাসাবাড়িতে গ্যাস দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে। জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা বাড়িয়ে ৯ লাখ ৮৩ হাজার মেট্রিক টন করা হয়েছে।
বাজেটের সঙ্গে চতুর্থবারের মতো ‘বিদ্যুৎ জ্বালানি খাত উন্নয়নে পথনকশা: অগ্রগতির ধারা’ শীর্ষক বই প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১৮৩ কিলোওয়াট আওয়ার। যা বর্তমানে ২৯২ কিলোওয়াট আওয়ারে উন্নীত হয়েছে। চার বছরে মাথাপিছু বিদ্যুতের ব্যবহার প্রায় ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বর্তমান সরকারের সময় এ পর্যন্ত মোট ৩ হাজার ৮৪৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হয়েছে। গত ৪ বছরে ৬৮০ মিলিয়ন ঘনফুট অতিরিক্ত গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হয়েছে। এবারের পথনকশায় কুইক রেন্টাল ও রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রভাব নিয়ে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ ঘাটতি তাৎক্ষণিকভাবে মোকাবিলার জন্য সরকার কুইকরেন্টাল পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনকে জোরদার করে। অধিকাংশ কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রকে তরল জ্বালানিচালিত বলে এর বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বেশি। ফলে বিদ্যুতের ভর্তুকির পরিমাণ বেড়ে যায়। তবে সম্ভবত কুইক রেন্টাল পদ্ধতি ছাড়া এত দ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হতো না।
বিদ্যুতের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, ২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করার উদ্দেশে ২০১৫ সালে ২০১৫ মেগাওয়াট এবং ২০১৬ সালে ২৩৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনার ঘোষণা করা হয়েছিল। ঘোষিত পরিকল্পনা সংশোধন করে ২০১৫ সালে ২৭০১ মেগাওয়াট এবং ২০১৬ সালে ২৯১৪ মেগাওয়াট এবং ২০১৭ সালে ৩২৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়েছে।