বিদ্যুৎ বিষয়ে মতামত জরিপ
বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের মনোভাব জানতে জরিপের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। জ্বালানি ও বিদ্যুত গবেষণা কাউন্সিল (ইপিআরসি) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে (বিবিএস) দিয়ে এই জরিপ পরিচালনা করবে। এজন্য রোববার উভয়পক্ষ একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে। তবে এবারও সেই শীতেই বিদ্যুতের ভাল-মন্দের মতামত জরিপ করা হচ্ছে।
গত বছর জুনে সরকারের তরফ থেকে এক জরিপের ফল তুলে ধরে বলা হয়েছিল দেশের ৮৮ ভাগ মানুষ বিদ্যুত পরিস্থিতিতে সন্তুষ্ট। তবে ২০১৫ সালের ২২ থেকে ২৮ জানুয়ারি শীতের সময় ওই জরিপ চালানো হয়। তখন বিদ্যুত পরিস্থিতি এমনিতেই ভাল থাকে। এবারও গ্রীষ্মের বিদায় বেলায় এসে একই ধরনের উদ্যোগ নেয়া হলো। আর এবারও জরিপের একটি অংশ আগামী জানুয়ারি অর্থাৎ শীতেই করার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে জরিপের ফলাফলে বাস্তবতা কতটা প্রতিফলিত হবে তা নিয়ে জরিপ শুরুর আগেই শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
দেশে ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে মে পর্যন্ত বিদ্যুতের সংকট চরম আকার ধারণ করে। গ্রীষ্মের বাড়তি চাহিদার সঙ্গে এই সময় বোরো মৌসুমে সেচের চাহিদা যোগ হয়। বিতরণ কোম্পানির হিসেবে চলতি বছর এই সময়ে তীব্র গরমের সময় আড়াই হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং হয়েছে। এর মধ্যে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের এলাকাগুলোতে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ ছিল দুই হাজার মেগাওয়াট। এখন গ্রামীণ জনপদে বিদ্যুতের অবস্থা স্বাভাবিক হয়নি। এপ্রিলের শুরু থেকে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে সারাদেশের বোরো মৌসুম শেষ হলে বিদ্যুত পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হয়। জুনের শেষ দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। সারাদেশে তীব্র লোডশেডিংয়ের মধ্যেই বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড পিডিবি লোডশেডিং স্বীকার করেনি।
চলতি বছর আরইবি জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারদের চিঠি দিয়ে তাদের স্থাপনার নিরাপত্তা দিতে অনুরোধ করেন। ওই চিঠিতে আরইবি আশঙ্কা করে সারাদেশে যে পরিমাণ লোডশেডিং হচ্ছে এতে তাদের স্থাপনা এবং কর্মীদের ওপর হামলা হতে পারে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বুরোকে (বিবিএস) দিয়ে এবার যে জরিপ চালানো হচ্ছে তবে সময়ও আগামী মাস অর্থাৎ জুন এবং জানুয়ারিই নির্ধারণ করা হয়েছে। এমওইউ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জানানো হয় বিবিএস দুই পর্যায়ে (প্রথমটি জুন ২০১৬ এবং দ্বিতীয়টি জানুয়ারি ২০১৭, প্রতিটি ১০ দিনব্যাপী) এ জরিপ পরিচালনা করবে। এতে বিদ্যুত ব্যবহারকারীর সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি মনোভাব জানা যাবে এবং সে অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানানো হয়।
‘ওপেনিয়ন সার্ভে অন পাওয়ার সাপ্লাই টু হাউসহোল্ড’ শীর্ষক জরিপ করার জন্য রোকবার বিদ্যুত ভবনে এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়। সমঝোতা স্মারকে ইপিআরসি’র পক্ষে সংস্থার চেয়ারম্যান ড. আহমদ কায়কাউস এবং বিবিএসের পক্ষে মহাপরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াজেদ স্বাক্ষর করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম বলেন, প্রতিযোগিতার এ বিশ্বে টিকে থাকতে হলে প্রয়োজন জ্ঞানভিত্তিক সমাজ। সঠিক তথ্য উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিতে পারলে তা বাস্তবায়ন করা সহজ ও জনকল্যাণময় হয়। সরকার জনগণকে যে সেবা দিতে বদ্ধপরিকর সে সেবা তারা কতটুকু, কিভাবে পাচ্ছে বা পেতে চায় তা এসব জরিপের মাধ্যমে জানা যাবে এবং পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সহায়তা করবে। তিনি বিদ্যুত সাশ্রয় এবং এর সাশ্রয়ী ব্যবহার সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের আরও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানান।
বিদ্যুত সচিব মনোয়ার ইসলাম, এ জরিপে বিদ্যুত বিতরণকারী ছয়টি সংস্থার সেবার মান এবং সার্বিক মূল্যায়ন সম্পর্কে জনগণের ধারণা অন্তর্ভুক্ত করতে এবং পরবর্তী শুমারিতে বিদ্যুত নিয়ে একটি অধ্যায় করা যায় কি না তা ভেবে দেখার জন্য পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগকে অনুরোধ করেন।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব কে এম মোজাম্মেল হক বক্তব্য রাখেন।