বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩১ উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন উদ্বোধন করছেন। ছবি: বিডিনিউজ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩১ উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন উদ্বোধন করছেন। ছবি: বিডিনিউজ

দেশবাসীকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র, ১১টি গ্রিড উপকেন্দ্র, ছয়টি সঞ্চালন লাইন এবং ৩১টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমের উদ্বোধন করে তিনি এ আহ্বান জানান।

ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ কিন্তু অনেক বেশি হয়। এত বেশি খরচের টাকা আমরা কিন্তু এখনো ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছি। অর্থাৎ উৎপাদনের খরচ যেটা হয়, তার থেকে কিন্তু কম পয়সায় গ্রাহকদের আমরা বিদ্যুৎ সরবরাহ করছি।

“সেই ক্ষেত্রে আমি গ্রাহকদের কাছে অনুরোধ করব যে আপনারা বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই মিতব্যয়ী হবেন, সাশ্রয়ী হবেন। অহেতুক বিদ্যুৎ আপনারা অপচয় করবেন না।”

আর বিদ্যুৎ ব্যবহারে সচেতন হলে বিদ্যুতের বিল কম আসবে, তাতে গ্রাহকেরই লাভ হবে বলে মন্তব্য করেন সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, “অন্তত নিজেদের কথা চিন্তা করে বিদ্যুৎ বিল যাতে কম ওঠে সেদিকে লক্ষ্য রেখে বিদ্যুৎটা সবাই ব্যবহার করবেন। অপচয়টা বন্ধ করবেন। এটা আমার বিশেষভাবে অনুরোধ।”

বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ১২ হাজার মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎখাতের মোট উৎপাদন সক্ষমতা এখন প্রায় ২০ হাজার মেগাওয়াট।

বিদ্যুৎ খাতে গত ১০ বছরে সরকারকে ৫২ হাজার ২৬০ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়েছে বলে গত ফেব্রুয়ারিতে সংসদে জানিয়েছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অনেক বেশি ভর্তুকি আমাদের দিতে হচ্ছে। কিন্তু এই ভর্তুকি সব সময় দেওয়া সম্ভব না। এটা সবাইকে মাথায় রাখতে হবে। তবুও এখন যেহেতু আমরা উন্নয়নের জন্য ব্যাপক কর্মসূচি করছি, সেজন্য মানুষের অসুবিধাগুলো আমরা দূর করতে চাচ্ছি।”

দেশের মানুষের কাছে বিদ্যুৎ সেবা পৌছে দিতে সরকারের নানা উদ্যোগের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন সরকার প্রধান।

গণভবন থেকে এই অনুষ্ঠানে বগুড়ায় কনফিডেন্স পাওয়ার কোম্পানির ১১০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নোয়াখালীতে এইচএফ পাওয়ার কোম্পানির ১১৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার নতুন দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

এছাড়া মহাস্থানগড়, রাজশাহী (উত্তর), চৌদ্দগ্রাম, ভালুকা, বেনাপোল, শরীয়তপুর, শ্যামপুর, শেরপুর (বগুড়া), কুড়িগ্রাম, নড়াইল ও রাজেন্দ্রপুরে১১টি গ্রিড উপকেন্দ্র এবং পটুয়াখালী (পায়রা)-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন (প্রথম সার্কিট), যশোর-বেনাপোল ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন, শরীয়তপুর-মাদারীপুর ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন, তিস্তা-কুড়িগ্রাম ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন, মাগুরা-নড়াইল ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন ও পটুয়াখালী-পায়রা ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইনেরও উদ্বোধন করা হয় অনুষ্ঠানে।

২০০৯ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে শতভাগ বিদ্যুতায়নের অঙ্গীকার ছিল আওয়ামী লীগের। বৃহস্পতিবার ১৮ জেলার ৩১টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী জানান, এরই মধ্যে দেশের ৯৭ শতাংশ মানুষ বিদ্যুতের আওতায় এসেছে।

তিনি বলেন, ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে ব্যাপক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। ২০২০ সাল থেকে ২০২১ সাল মুজিববর্ষ ঘোষণা করে ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বড় পরিসরে পালনের পরিকল্পনা হয়েছিল।
“কাজেই ২০২০ থেকে ২০২১- এই বছরের মধ্যে আমরা সমগ্র বাংলাদেশের প্রত্যেকটা ঘরে আলো জ্বালব। শতভাগ বিদ্যুৎ আমরা দিতে পারব। ইতোমধ্যে আমরা ৯৭ ভাগ জনগণকে বিদ্যুৎ দিতে সক্ষম হয়েছি এবং আমরা আশা করি, এই ২০২১ সালের মধ্যে আমরা শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ দিতে পারব। সেভাবে আমরা পরিকল্পনাও নিয়েছি।”

শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন সংগ্রামের কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরে তাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনাও স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, দেশবাসী আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণের সুযোগ দেওয়া বাংলার মানুষের কাছে তিনি ‘কৃতজ্ঞ’।

“১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর থেকে হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু হয়। মিলিটারি ডিক্টেটররা মার্শাল ল জারি করে এদেশের শাসনভার হাতে নেয় এবং তারা স্বাভাবিকভাবেই অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে সেই ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করবার জন্য স্বজনপ্রীতি, তোষামোদি এবং দুর্নীতিকে তারা স্থায়ী রূপ দিয়ে যায়।

“দেশের উন্নয়ন না করলেও তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়। কিছু লোককে তারা অর্থশালী, সম্পদশালী করে দেয়, যাদের শক্তিতে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করে। কিন্তু দেশের মানুষের ভাগ্য, সেই ভাগ্য বিড়ম্বিতই থেকে যায়। দেশের মানুষ শোষিত বঞ্চিতই থেকে যায়। এটাই হচ্ছে সব থেকে দুর্ভাগ্য।”

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে সারা বাংলাদেশ ঘুরে মানুষের হাহাকার, দুঃখ আর দুর্দশার চিত্র দেখার অভিজ্ঞতাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “দুর্ভাগ্য হল, যে বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় থাকতে বাজেট দেওয়ার সময় খুব গালভরা কথা বলত, গোপালগঞ্জের জন্য এটা দেব, ওটা দেব। আর বাজেট দেওয়া শেষ হয়ে গেলে টাকাগুলো কেটে নিয়ে চলে যেত।”

বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় নিজের এলাকা টুঙ্গিপাড়ায় গেলে কেমন অভিজ্ঞতা হত, সে কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “হয়ত সারাদিনেও বিদ্যুৎ পেতাম কিনা সন্দেহ, পেতাম না। জেনারেটর দিয়ে চালাতে হত বা হারিকেন জ্বালাতে হত।

“কিন্তু আমরা যখন উন্নয়ন করি, তখন কিন্তু আমরা এই রকম নির্দিষ্ট কোনো জায়গাকে অবহেলা করি না। কাজেই আজকে সেটার একটা দৃষ্টান্ত পাচ্ছেন যে বগুড়া জেলায় (খালেদা জিয়ার নির্বাচনী এলাকা ও শ্বশুরবাড়ি) ১১০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র আমরাই প্রতিষ্ঠা করেছি এবং আমরা আজকে তা উদ্বোধন করছি।”

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ তার মন্ত্রণালয়ের কার্যালয় থেকে অনুষ্ঠানে যোগ দেন। বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. সুলতান আহমেদ বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় থেকে ‘বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাত: বঙ্গবন্ধু থেকে বঙ্গবন্ধু কন্যা’ শীর্ষক একটি তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন অনুষ্ঠানে।

অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।