বিনিয়োগের জন্য চাই গ্যাস-বিদ্যুৎ

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম এর কাছে উদ্যোক্তা গ্যাস বিদ্যুতের নিশ্চয়তা চেয়েছেন। তারা বলেছেন, জ্বালানি নিশ্চয়তা পেলে বিনিয়োগের অন্য প্রতিবন্ধকতা নিজেরাই উতরে যেতে পারবেন।

রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁও এ বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) আয়োজিত ‘শিল্পে বিনিয়োগের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বিনিয়োগের নানা প্রতিবন্ধকতার কথা জানান উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা।
জবাবে অর্থমন্ত্রী ও জ্বালানি উপদেষ্টা জ্বালানি নিশ্চয়তা দিয়ে বলেন, আগামী দুই বছরের মধ্যে বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হবে। গ্যাসের বিকল্প ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

সভায় অর্থমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুতের উৎপাদন ও সরবরাহ পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। কিন্তু সঞ্চালন লাইনের কারণে শিল্পে মানসম্মত বিদ্যুৎ দেয়া যাচ্ছে না। তবে যেসব শিল্পপার্ক তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেখানে জ্বালানিসহ অন্য সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। পরিবেশগত দিক বিবেচনায় শিল্পপার্ক এলাকায় বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) স্থাপনের কাজটিও সরকার করে দেবে। তবে সেজন্য শিল্পমালিকদের কাছ থেকে কিছু মাশুল আদায় করা হবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, তেলের দাম কমানোর চিন্তা এখনো নেই। বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমলেও দেশের বাজারে কখন তা সমন্বয় করা হবে, তা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।
তবে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার সমন্বয়ের বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় রয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।

তৌফিক-ই-ইলাহী বলেন, এক-দেড় বছর সময় দিন। এরপর মন্ত্রিপাড়ায় যেভাবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়, শিল্পেও সেই ধরনের সরবরাহ ও মানসম্মত বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা হবে। আর দুই বছরের মধ্যে গ্যাসের সরবরাহও নিশ্চিত করা যাবে। এ জন্য বিদেশ থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি নতুন করে গ্যাস অনুসন্ধানে ১০টি কূপ খননের সিদ্ধান্তও চূড়ান্ত হয়েছে।

সভার সভাপতি বিসিআইয়ের সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, বিনিয়োগ স্থবিরতার কারণে বেসরকারি খাতে ঋণ নেয়ার প্রবণতা কম। বাংলাদেশ ব্যাংক বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, সেটি পূরণ হচ্ছে না। হিমায়িত খাদ্য, চামড়াজাত পণ্য, পাটপণ্যের রপ্তানি প্রবৃদ্ধিও ঋণাত্মক। কারণ, বিনিয়োগের স্থবিরতা বিরাজ করছে। আর বিনিয়োগ স্থবিরতার কারণ জ্বালানি নিয়ে অনিশ্চয়তা।

আনিসুল হক বলেন, ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ অলস টাকা আছে। উন্নয়নের স্বার্থে বিনিয়োগ দরকার। সেটি করতে হলে এখনই সরকারকে কিছু অগ্রাধিকার খাত নির্ধারণ করতে হবে। যেসব শিল্প খাতে সম্ভাবনা ও সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে, সেগুলোকে অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত করে সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা নিতে হবে।
বক্তারা বলেন, রাতারাতি সরকার বিদ্যুৎ ও গ্যাস সমস্যার সমাধান করে দেবে, এটিও বাস্তবসম্মত নয়। সেটি প্রত্যাশাও করা হয় না। তাই সরকারের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট একটি পথনকশা দেয়া উচিত। তাহলে সেই অনুযায়ী উদ্যোক্তারা বিনিয়োগের পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন।

সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আখন্দ। এতে বক্তব্য দেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা তপন চৌধুরী, মেট্রো চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান, বিটিএমএর সাবেক সভাপতি আবদুল হাই সরকার, নিট পোশাকমালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক, আবাসন মালিকদের সংগঠন রিহ্যাবের সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন, নিউজপেপারস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (নোয়াব) সভাপতি ও প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান প্রমুখ।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের (আইসিসিবি) সভাপতি মাহবুবুর রহমান ও ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।

মূল প্রবন্ধে আহসান এইচ মনসুর বলেন, বিনিয়োগ বাড়াতে না পারলে কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে না। পাশাপাশি বিনিয়োগ পরিবেশও উন্নত করতে হবে। কারণ, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিবেশ সবচেয়ে খারাপ।

 

বিটিএমএর সভাপতি তপন চৌধুরী বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো উচিত ধাপে ধাপে। বর্তমানে বিদ্যুতের অভাবে অনেক শিল্প উৎপাদনে যেতে পারছে না। তাই সরকারের উচিত বিকল্প ব্যবস্থা করা।
মেট্রো চেম্বারের সাবেক সভাপতি লতিফুর রহমান বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহৎ ঋণ পুনর্গঠনের বিশেষ সুবিধা দিয়েছে। বড় ঋণগ্রহীতাদের এ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু ছোট যেসব উদ্যোক্তা বাস্তব সমস্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদেরও এ ধরনের সুবিধা দেয়া উচিত।
মতিউর রহমান সংবাদপত্রকে শিল্পের মর্যাদা দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান। তিনি সংবাদপত্রশিল্পের কিছু সমস্যাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, নিউজপ্রিন্ট আমদানির ক্ষেত্রে এখন ২০ শতাংশ ট্যাক্স ও ভ্যাট দিতে হয়। এটি অতিরিক্ত এবং এ শিল্পের অগ্রযাত্রার জন্য প্রতিবন্ধকতা।
মীর নাসির হোসেন বলেন, বিনিয়োগে অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে। সরকার শুধু গ্যাস-বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিত করুক, বাকি সব প্রতিবন্ধকতা উদ্যোক্তারা কাটিয়ে উঠবেন।
বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, গ্যাস-বিদ্যুতের বিষয়ে সরকারের কাছ থেকে নির্দিষ্ট পথনির্দেশনা চাই। এখনই ডিজেলের দাম কমানো উচিত।
বিটিএমএর সাবেক সভাপতি আবদুল হাই সরকার বলেন, বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান উদ্যোক্তারা করবেন। সরকার শুধু বিদ্যুতের নিশ্চয়তা দিক।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহসভাপতি জসীমউদ্দীন বলেন, শিল্পের জন্য দরকার প্রতিযোগিতামূলক দামে নিরবচ্ছিন্ন মানসম্মত বিদ্যুৎ। কিন্তু সেটি পাচ্ছি না। এ কারণে বিনিয়োগ নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছি।