বৃষ্টি চলবে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত
শ্রাবণেই চলছে পচাঁভাদ্র। ভাদ্রের বিরামহীন বৃষ্টি শুরু হয়েছে এখনই। যেন থামছেই না।বর্ষাকালে বৃষ্টি হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এবার পরিমাণ একটু বেশিই। যাগত কয়েক বছরের তুলনায় প্রায় ২০ ভাগ বেশি। এই ধারা বৃষ্টি চলবে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। তবে পুরোপুরি থামার জন্য মধ্য আগষ্ট অর্থাৎ সেইভাদ্রের শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যেমন সাগরের পানি উষ্ণ হচ্ছে, ভূমির উপরিভাগের বরফ গলছে, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে তেমনি বৃষ্টিপাতের পরিমাণও বেড়ে গেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বৈশ্বিক গড় বৃষ্টিপাত বাড়বে যা সবচেয়ে বেশি হবে মেরুদ্বয়ের কাছাকাছি অঞ্চলে এবং ভারতীয় মৌসুমী অঞ্চলে। আর সবচেয়ে কম প্রভাব পড়বে উপগ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে।
চলতি বছর জুলাই মাসে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে টেকনাফ ও এর আশেপাশের অঞ্চলে। এই বৃষ্টির পরিমাণ গড়ে প্রায় ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১৪৪ মিলিমিটার। অন্যদিকে সবচেয়ে কম বৃষ্টি হয়েছে উত্তরাঞ্চলে। গড়ে ৯২ থেকে ২০০ মিলিমিটার। চলতিবছর জুন মাসে সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে কক্সবাজারে ৪৬৭ মিলিমিটার। যা গত কয়েক বছরের তুলনায় অনেক বেশি। ঢাকায় সর্বশেষ সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে ২০০৪ সালে ৩৪১ মিলিমিটার।
এর আগে চলতি বছর জুন মাসে বাংলাদেশে তিন হাজার ৪৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশে জুন মাসে গড়ে ৪৫৯ দশমিক ৪০ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার কথা। কিন্তু জুনে বাংলাদেশের সাত বিভাগে গড়ে বৃষ্টি হয়েছে ৪৯৩ দশমিক ৭১ মিলিমিটার। ঢাকা বিভাগে মোট বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ৪২০ মিলিমিটার। এ বিভাগে স্বাভাবিক বৃষ্টির পরিমাণ ৩৫৫ মিলিমিটার। চট্টগ্রাম বিভাগে জুনে বৃষ্টি হয়েছে ৮৩০ মিলিমিটার। এ বিভাগে স্বাভাবিক বৃষ্টির পরিমাণ ৫৮৯ মিলিমিটার। সিলেট বিভাগে জুনে বৃষ্টি হয়েছে ৫৩৫ মিলিমিটার। এ বিভাগে স্বাভাবিক বৃষ্টির পরিমাণ হলো ৬৩৪ মিলিমটিার। খুলনা ও বরিশাল বিভাগে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ যথাক্রমে ২৯৮ ও ৪৮৩ মিলিমিটার। এ দুই বিভাগে জুন মাসে বৃষ্টি হয়েছে যথাক্রমে ৩৩৫ ও ৬৫৬ মিলিমিটার।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. শাহ আলম বলেন, বর্ষাকালে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টি হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু যখন এর সঙ্গে লঘুচাপ হয় তখন বৃষ্টির পরিমাণটা বেড়ে যায়। এ পর্যন্ত চলতি বছর তিনটি লঘুচাপ হয়েছে। তিনি বলেন, এবারের বর্ষা মৌসুমের চরিত্রটা একটু অন্যরকম। দিনের কোনো সময় আকাশে সূর্য দেখা গেলেই ভাবার কোনো কারণ নাই যে আজ বৃষ্টি হবে না। যে কোনো সময় বৃষ্টি শুরু হয়ে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা আকু ওয়েদার (যারা বিশ্বজুড়ে আবহাওয়া বার্তা প্রচার করে) জানিয়েছে, বাংলাদেশে আগস্টে ১৫ তারিখ পর্যন্ত এই বৃষ্টি থাকতে পারে। তবে প্রথম সপ্তাহের পর তা কমে আসবে। তবে ভালভাবে সূর্য দেখতে চাইলে মধ্য আগষ্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
গতকাল দেশে সবচেয়ে বেশি হয়েছে টেকনাফে ৩৩১ মিলিমিটার। ঢাকায় এই বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ২৭ মিলিমিটার। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়, উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় নিুচাপে পরিনত হয়েছে। এটি আরও ঘনীভূত হতে পারে। মৌসুমী বায়ুর অক্ষ রাজস্থান, সুস্পষ্ট লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল, মধ্য প্রদেশ, বিহার, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং নিুচাপের কেন্দ্রস্থল হয়ে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের দক্ষিণাংশে সক্রিয় ও উত্তরাংশে মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থা বিরাজ করছে।
আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি এবং ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী বৃষ্টি হতে পারে।