ঝড়ের পূর্বাভাসেই লোডশেডিং!
ঝড়ের পূর্বাভাসেই দেশজুড়ে চলছে লোডশেডিং। অগ্রিম সতর্কতায় কমিয়ে দেয়া হয়েছে উৎপাদন।
উৎপাদন ক্ষমতার পুরো বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে না। তাই দেশজুড়ে বিদ্যুতের ভোগান্তি। গ্রীষ্ম চলে গেছে। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে আবহাওয়া ঠাণ্ডা। বৃষ্টির কারণে চাহিদা কম থাকলেও চাহিদা অনুযায়ি বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো।
বিদ্যুতের সংকট শুরু হলে সরবরাহকেই দায়ি করা হয়। বলা হয়, সরবরাহ ব্যবস্থার কারণে বিদ্যুৎ দেয়া যাচ্ছে না। অথচ কিছুদিন আগেও উৎপাদন বেশি হওয়ায় ভোগান্তি এত ছিল না।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশের মোট উৎপাদন ক্ষমতা ১২ হাজার ৭৮০ মেগাওয়াট। কিন্তু উৎপাদন করা হচ্ছে ৮ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট। বর্তমানে মোট ৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্র এই মুহুর্তে সংস্কারের জন্য দীর্ঘসময়ের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। এরমধ্যে ঘোড়াশাল ২১০ মেগাওয়াট, হরিপুর ৩২ মেগাওয়াট, আশুগঞ্জ ৬৪ মেগাওয়াট, ভেড়ামারা ১০৫ মেগাওয়াট এবং খুলনা ১১০ মেগাওয়াট। এছাড়া বাঘাবাড়ি ১০০ মেগাওয়াট, সিলেট ১৫০, সিলেট ২০ মেগাওয়াট, শাহজিবাজার ৭০. আশুগঞ্জ ৫৬, শিকলবাহা ৬০. চট্টগ্রাম ২১০, নর্দান পাওয়ারের ৫৫ মেগাওয়াট, হরিপুর ৪২০, টঙ্গী ৭৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে না। জ্বালানি সংকটের কারণে ১ হাজার ৩২৪ মেগাওয়াট আর সংস্কারের জন্য ৪৩৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না।
এ অবস্থায় রাজধানীসহ সারাদেশেই চলছে বিদ্যুতের ভোগান্তি। রাজধানীতে ঢাকায় গড়ে প্রায় সব এলাকায় দিনে দুই থেকে তিন ঘন্টা লোডশেডিং হচ্ছে। শহরে লোডশেডিং এর পরিমাণ কম হলেও গ্রামের অবস্থা খারাপ। এ হিসেব বিতরণ, উৎপাদন ও সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোর তথ্য থেকে এ হিসেব পাওয়া গেছে।
এখন এপ্রিল-মে মাসের মতো বিদ্যুতের ভোগান্তি হচ্ছে। হঠাৎ বিদ্যুতের ভোগান্তি বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে বরাবর মতোই বিতরণ ব্যবস্থাকেই দায়ি করলেও প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, বিতরণ ব্যবস্থার সমস্যার কারণে বিদ্যুৎ গ্রাহকের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। বিতরণ ব্যবস্থা ঠিক করতে নানা পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। আগামী দুই তিন বছরের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
ঢাকার বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি (ডিপিডিসি) জানায়, ঢাকা শহরে তাদের বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় ১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। কিন্তু সরবরাহ করা হচ্ছে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের মতো। গড়ে প্রায় ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকছে। লোডশেডিং করেই এই পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ডিপিডিসির কর্মকর্তারা। ডেসকোর অবস্থাও একই। চাহিদার তুলনায় ২০/৩০ মেগাওয়াট ঘাটতি হচ্ছে। ফলে লোডশেডিং করা হচ্ছে।
পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির (ওজোপাডিকো) ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিক উদ্দিন বলেন, ওই এলাকায় মোট বিদ্যুতের চাহিদা সাড়ে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। চাহিদার প্রায় পুরোটাই সরবরাহ করার চেষ্টা করা হয়। তবে ২০ থেকে ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি থাকে প্রতিদিনই। ফলে বিদ্যুতের লোডশেডিং কিছুটা করতে হয়।
দেশের সবচেয়ে বেশি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) জানায়, তাদের প্রায় সাড়ে ৪ হাজার মেগাওয়াট চাহিদা বিপরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে আড়াই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। চাহিদার প্রায় অর্ধেক বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে গ্রামে। ফলে দিনের বেলায় বিদ্যুতের দেখা পাওয়া এখন গ্রামগুলোতে ভাগ্যের ব্যপার। রাতেও বার বার বিদ্যুতের আসা যাওয়ার মধ্যে থাকতে হচ্ছে গ্রাহকদের। সবমিলিয়ে গ্রামে বিদ্যুতের অবস্থা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
আরইবি কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের কোনো আবেদনই ফেলে রাখছে না। একের পর এক সংযোগ দিয়ে যাচ্ছে তারা। কিন্তু সে তুলনায় বিদ্যুতের সরবরাহ না বাড়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে।
এই পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্ধ গ্রাহকরা দেশের বিভিন্ন স্থানে লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করছে, বিদ্যুৎ অফিসে ঘেরাও করছে।