বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর বেতন বাড়ল ৭৫ ভাগ
বিদ্যুৎখাতের কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তা কর্মচারিদের মাসিক বেতন বাড়ানো হয়েছে। গড়ে প্রত্যেকের বেতন ৭৫ ভাগ করে বেড়েছে। নতুন এ বেতন চলতি বছরের ১লা জানুয়ারি থেকে কার্যকর করা হবে।
নতুন কাঠামোতে সর্বোচ্চ এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা এবং সর্বনিন্ম বেতন ১৫ হাজার টাকা রাখা হয়েছে। এছাড়া প্রতিবছর চার শতাংশ করে বেতন বাড়বে।
বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে বিদ্যুৎখাতের কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন কাঠামো ২০১৫ বিষয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
উৎপাদন, বিতরণ ও সঞ্চালন সকল কোম্পানির জন্য নতুন বেতন নির্ধারন করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিদ্যুৎ বিভাগের অধীন কোম্পানি প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
তবে এই সিদ্ধান্তে কিছু গ্রেডের কর্মকর্তা-কর্মচারি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাদের অভিযোগ, যে হারে বেতন বাড়ার কথা তা বাড়ানো হয়নি। সর্বোচ্চ বেতন ও সর্বনিন্ম বেতনের মধ্যে পার্থক্য অনেক বেশি। এই পার্থক্য কমিয়ে আনা উচিত।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এবিষয়ে এনার্জি বাংলাকে বলেন, যে সব গ্রেডে বেতন নিয়ে সমস্যা আছে তা পর্যালোচনা করে ঠিক করা হবে। অভিন্ন বেতন কাঠামো নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবায়ন করা যাচ্ছিল না। নতুন এই বেতন কাঠামোর কারণে কর্মকর্তা-কর্মচারিদের কাজের স্পৃহা বাড়বে বলে তিনি আশা করেন।
এর আগে বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর অভিন্ন বেতন কাঠামো করার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. আহমেদ কায়কাউসকে আহ্বায়ক করে একটি উপ কমিটি করা হয়। কমিটি নতুন বেতন কাঠামোর বিষয়ে একটি খসড়া প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবটি যাচাই বাছাই করেই বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
নতুন বেতন কাঠামো অনুযায়ি বর্ধিত বেতন চলতি বছরের ১লা জানুয়ারি থেকে এবং ভাতা সন্মনি ১লা জুলাই থেকে কার্যকর করা হবে। বেতন নির্ধারনের ক্ষেত্রে বর্তমানের মহার্ঘ ভাতা ১লা জানুয়ারি থেকে সমন্বয় করা হবে।
নতুন বেতন কাঠামো অনুযায়ি, ২০টি গ্রেডে বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎপাদন ও সঞ্চালন কোম্পানিগুলো বর্তমানে গ্রেড-১ বা ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের বেতন আছে এক লাখ টাকা। এটি বাড়িয়ে এক লাখ ৭৫ টাকা করা হয়েছে। গ্রেড-২ এ ৮০ হাজার থেকে বাড়িয়ে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা, গ্রেড-৩ এ ৬৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে এক লাখ ১৪ হাজার টাকা, গ্রেড-৪ এ ৫৬ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৮ হাজার টাকা, গ্রেড-৫ এ ৪৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৯ হাজার টাকা, গ্রেড-৫ এ ৩৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬১ হাজার টাকা, গ্রেড-৬ এ ২৯ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫১ হাজার টাকা, গ্রেড-৭ এ ২৬ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৫ হাজার টাকা, গ্রেড-৮ এ ২১ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৭ হাজার টাকা, গ্রেড-৯ এ ১৮ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩১ হাজার টাকা, গ্রেড-১০ এ ১৫ হাজার ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৮ হাজার টাকা, গ্রেড-১১ এ ১৪ হাজার ৪০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা, গ্রেড-১২ এ ১৩ হাজার ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৪ হাজার টাকা, গ্রেড-১৪ এ ১৩ হাজার ৪০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৩ হাজার টাকা, গ্রেড-১৫ এ ১১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা, গ্রেড-১৬ এ ১০ হাজার ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৮ হাজার টাকা, গ্রেড-১৭ এ নয় হাজার ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৭ হাজার টাকা, গ্রেড-১৮ এ নয় হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫ হাজার টাকা, গ্রেড-১৯ এ আট হাজার ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪ হাজার ৫০০ টাকা এবং গ্রেড-২০ এ সাত হাজার ৭৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪ হাজার টাকা করা হয়েছে।
বিতরণ কোম্পানির জন্য ১৬টি গ্রেডে বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে। বিতরণ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের বেতনকিরা হয়েছে এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা। যা আগে ছিল এক লাখ টাকা। এরপর পর্যায়ক্রমে বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৪০ হাজার, এক লাখ ৪০ হাজার, ৯৮ হাজার, ৭৯ হাজার, ৬১ হাজার, ৫১ হাজার, ৩৯ হাজার, ৩২ হাজার, ২৭ হাজার, ২৫ হাজার, ২৪ হাজার, ২৩ হাজার, ১৮ হাজার, ১৭ হাজার এবং ১৬তম গ্রেডে বেতন নয় হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫ হাজার টাকা করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন উৎপাদন, বিতরণ ও সঞ্চালনে ১০ কোম্পানিতে মোট ১১ হাজার ৫৩৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারি আছেন। এরমধ্যে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের দুই হাজার ৪১৭ জন, ছয়টি উৎপাদন কোম্পানি এক হাজার ৬৯৯ জন এবং তিনটি বিতরণ কোম্পানি ডেসকো, ডিপিডিসি ও ওজোপাডিকোতে সাত হাজার ৪১৭ জন কাজ করছেন।