বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ২৩.১৪ বিলিয়ন ডলার
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্ষয়ের প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। চলতি আগস্টের প্রথম ১৬ দিনে রিজার্ভ কমেছে প্রায় ২১ কোটি ডলার। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী রিজার্ভ এখন ২৩ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব হিসাবায়ন পদ্ধতিতে রিজার্ভ ২৯ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গণনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস তথা জুলাই থেকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণপ্রাপ্তির শর্ত হিসেবেই তা করা হচ্ছে। ২০১২ সাল থেকে আইএমএফের সদস্যদেশগুলো ব্যালান্স অব পেমেন্টস এবং ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল (বিপিএম৬) অনুযায়ী রিজার্ভের হিসাবায়ন করে আসছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক তা শুরু করতে সময় নিয়েছে প্রায় এক যুগ। বিপিএম৬ মূলনীতি অনুযায়ী হিসাব করা রিজার্ভও বাংলাদেশের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভ নয়। নিট রিজার্ভ হিসাবায়নের ক্ষেত্রে আইএমএফ থেকে নেয়া এসডিআরসহ স্বল্পমেয়াদি বেশকিছু দায় বাদ দেয়া হয়। সে হিসাবে বাংলাদেশের নিট রিজার্ভের পরিমাণ এখন ২০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত ৩১ জুলাই বিপিএম৬ অনুযায়ী দেশের রিজার্ভ ছিল ২৩ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার। আর ১৬ আগস্ট এ রিজার্ভের পরিমাণ ২৩ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। সে হিসাবে আগস্টের প্রথম ১৬ দিনে রিজার্ভে ক্ষয় হয়েছে ২১ কোটি ডলার। তবে গত এক বছরে রিজার্ভে ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষয় হয়েছে।
রিজার্ভ বৃদ্ধির প্রধান উৎস হলো প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। গত মাসের মতো চলতি মাসেও রেমিট্যান্স প্রবাহ বেশ মন্থর। জুলাইয়ে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৯৭ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই মাসের তুলনায় ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। চলতি আগস্টেও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়েনি। আগস্টের প্রথম ১১ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৬৯ কোটি ডলার।
বাজারে সংকট থাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে। ফলে রিজার্ভের পরিমাণও দ্রুত কমছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকগুলোয় এখনো ডলার সংকট কমেনি। প্রতিদিনই কেনার বিপুল চাহিদা আসছে। কোনো কোনো দিন তা ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকৃত চাহিদা যাচাই করে তবেই ডলার বিক্রি করছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূলত জ্বালানি তেল, এলএনজি, সারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির দায় মেটানোর জন্য ডলার বিক্রি করছে। পাশাপাশি সরকারের বিদেশী ঋণের কিস্তি পরিশোধের জন্যও ডলার বিক্রি করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে রেকর্ড সাড়ে ১৩ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর চলতি অর্থবছরের এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছে।
দুই দশক ধরে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ঊর্ধ্বমুখী। ২০১৬ সালের ৩০ জুন রিজার্ভের গ্রস পরিমাণ ছিল ৩০ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার। এরপর ২০১৯ সালের শেষ পর্যন্ত রিজার্ভ অনেকটাই স্থিতিশীল ছিল। ২০২০ সালে কভিড-১৯-এর প্রভাবে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহে বড় ধরনের উল্লম্ফন হয়। রিজার্ভের পরিমাণও দ্রুতগতিতে বেড়ে যায়। ২০২১ সালের আগস্টে তা ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের পরিসংখ্যান নিয়ে অনেক আগে থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছে আইএমএফ। সংস্থাটির সুপারিশ ছিল, রিজার্ভের হিসাবায়ন করতে হবে বিপিএম৬ মূলনীতি অনুসরণ করে। এক্ষেত্রে রফতানি উন্নয়ন তহবিলসহ (ইডিএফ) বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করা প্রায় সাড়ে ৮ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ থেকে বাদ দিতে হবে। আইএমএফের শর্ত মেনেই শেষ পর্যন্ত রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করা হয়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ৭ বিলিয়ন ডলারের ইডিএফ তহবিল এখন ৪ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে এসেছে। এ কারণে আইএমএফের শর্ত পূরণ করা কিছুটা সহজ হয়েছে। বিপিএম৬ মূলনীতি অনুযায়ী হিসাবায়নের ক্ষেত্রে রিজার্ভের অর্থে গঠন করা গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ডে (জিটিএফ) ২০ কোটি, লং টার্ম ফাইন্যান্সিং ফ্যাসিলিটি (এলটিএফএফ) তহবিলে ৩ কোটি ৮৫ লাখ, সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষকে দেয়া ৬৪ কোটি ও বাংলাদেশ বিমানকে দেয়া ৪ কোটি ৮০ লাখ এবং শ্রীলংকাকে ২০ কোটিসহ মোট ৬৪০ কোটি ডলার বাদ দেয়া হয়েছে।