বোরোতে ডিজেলে ভর্তুকির বিষয়টি বিবেচনাধীন: কৃষিমন্ত্রী

বোরো মৌসুমে কৃষকদের ডিজেলে ভর্তুকি দেওয়ার বিষয়টি সরকার ‘গভীরভাবে বিবেচনা’ করছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টার সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ‘খাদ্য নিরাপত্তায় ভূগর্ভস্থ পানির টেকসই ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক গবেষণা প্রকল্প নিয়ে কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

বর্তমানে ডিজেলের দাম অনেক বেশি মন্তব্য করে তিনি বলেন, “রাশিয়া- ইউক্রেইন যুদ্ধ বন্ধ না হলে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ডিজেলের দাম না কমলে ডিজেলেও আমাদের কিছু একটা করতে হবে, যাতে কৃষকের উৎপাদন খরচ কমে।

“বর্তমানে ডিজেলের দাম অনেক বেশি। এতে বোরো মৌসুমে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। আমরা সারে যেমন ভর্তুকি দিই, তেমনি বোরোতে প্রয়োজনে ডিজেলে ভর্তুকি দেওয়া হবে। সরকার গভীরভাবে এ বিষয়টি বিবেচনা করছে।”

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বেড়ে যাওয়াকে কারণ দেখিয়ে ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতি লিটারে দাম ৬৫ টাকা থেকে ২৩ শতাংশ বাড়িয়ে করা হয়েছিল ৮০ টাকা।

আট মাসের মাথায় ইউক্রেইন যুদ্ধের জেরে ডলারের উচ্চ মূল্যকে কারণ দেখিয়ে ৬ অগাস্ট ডিজেলের দাম আরও ৪২ শতাংশ বাড়ায় সরকার। এতে ডিজেলের মূল্য দাঁড়ায় ১১৫ টাকায়।

পরে মূল্য সমন্বয়ের কথা জানিয়ে গত ২৯ অগাস্ট ডিজেল, কেরোসিন, অকটেন ও পেট্রোল এই চার ধরনের জ্বালানির দাম লিটারে ৫ টাকা করে কমানো হয়। এরপরও ডিজেলের দাম এখন অনেক।

পরে মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও অস্ট্রেলিয়ার কমনওয়েলথ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ অর্গানাইজেশন (সিএসএসআইআরও) এর সহযোগিতায় ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউম) এ কর্মশালার আয়োজন করে।

এতে কৃষিমন্ত্রী বলেন, অনাবৃষ্টির জন্য আমন রোপণ ব্যাহত হচ্ছে। এখন বৃষ্টির মৌসুম, সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী বৃষ্টি হওয়ার কথা, কিন্তু হচ্ছে না।

“এটাই আমাদের জন্যে কনসার্ন। বৃষ্টি না হলে হয়ত আমনের উৎপাদন কম হবে। অন্যদিকে আমনের টাকা দিয়ে কৃষকেরা অনেক সময় বোরোতে বিনিয়োগ করে। সার, ডিজেল কিনে ও সেচ খরচসহ অন্যান্য খরচ মেটায়। কাজেই, বৃষ্টি না হওয়ার জন্য আমন উৎপাদন ব্যাহত হলে কৃষকের উপর এর প্রভাব পড়বে।”

এদিকে খাদ্য নিরাপত্তায় ‘টেকসই সেচ ব্যবস্থাপনা’ গড়ে তুলতে গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা ভূগর্ভস্থ ও ভূ-উপরিস্থ পানির টেকসই ব্যবস্থাপনায় কাজ করে যাচ্ছি। এক দিকে সেচকাজে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বৃদ্ধিতে কাজ চলছে, অন্যদিকে বারিড পাইপ (ভূগর্ভস্থ পাইপ) ব্যবহার করে সেচ দক্ষতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে।“

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকায় অস্ট্রেলিয়া হাই কমিশনের সহকারী হাই কমিশনার নাদরিয়া সিম্পসন। গবেষণার সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন সিএসআইআরও বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন।

এতে সভাপতিত্ব করেন আইডব্লিউএম- এর নির্বাহী পরিচালক আবু সালেহ খান।

এছাড়া ইমেরিটাস অধ্যাপক সাত্তার মণ্ডল, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক দেবাশীষ সরকার, বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন প্রকল্পের নির্বাহী পরিচালক মো. আব্দুর রশিদসহ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

প্রতি কেজি বোরো ধানে পানি লাগে ৬৬১ লিটার

বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সেচের জন্য ব্যবহারযোগ্য পানির (বিশেষত ভূগর্ভস্থ) টেকসই স্তর নির্ধারণ এবং পানি ব্যবহারের পরিবর্তনের উপর নারী ও গ্রামীণ জীবনযাত্রার প্রভাব মূল্যায়নে গবেষণাটি করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

গবেষণার প্রতিবেদনে বলা হয়, এক কেজি বোরো ধান উৎপাদনে কতটুকু পানি লাগে তা নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত রয়েছে৷ তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার লিটার পানির প্রয়োজন পড়ে এটি একটি ভুল ধারণা।

গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৫-১৬ সালে এক কেজি বোরো ধান উৎপাদনে ৬৬১ লিটার পানি লেগেছে আর ২০১৬-১৭ সালে লেগেছে ৫৮৪ লিটার।

এছাড়া ভূগর্ভস্থ পানির প্রাপ্যতা বোরো ধান উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়। আর বেশি দূষ্পাপ্র্য এলাকায় তুলনামূলকভাবে সেচ খরচ বেশি হয়, অন্যদিকে উৎপাদন কম হয় এবং কৃষকের লাভও হয় কম।

গবেষণায় দেখা গেছে, বরেন্দ্র অঞ্চলে বোরো চাষ করার ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর সর্বত্র নিচে নেমে যায়নি। শুধু নওগাঁ, নবাবগঞ্জ ও রাজশাহী- এ তিন জেলায় পানির স্তর নিচে নেমেছে।

এছাড়া মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারই পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার একমাত্র কারণ নয়। উজানে নদীর নিয়ন্ত্রণ, শস্য বিন্যাসের পরিবর্তন, জলাভূমি হ্রাস পাওয়া, শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানির প্রবাহ কমে যাওয়া, ভূমি ব্যবহারে পরিবর্তনসহ নানা কারণে পানির স্তর নিচে নামছে।

অস্ট্রেলিয়া সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক সিএসআইআরও- এর সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণাটি সম্পন্ন করেছে আইডব্লিউএম, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বারিন্দ মাল্টিপারপাস ডেভেলপমেন্ট অথরিটি ও ওয়াটার রিসোর্সেস প্ল্যানিং অর্গানাইজেশন।