ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর বিশাল বাঁধ দিচ্ছে চীন

অরুণ কর্মকার:
প্রমত্ত ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর পৃথিবীর গভীরতম গিরিসংকটে বিশাল বাঁধ নির্মাণ করতে যাচ্ছে চীন। আপাতঃ উদ্দেশ্য প্রায় ৬০ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদন। এই বাঁধ ভারত ও বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে পানি প্রবাহে বিঘœ ঘটাবে। সেচ ও নৌ চলাচল ব্যাহত করবে। মৎস্য সম্পদ নষ্ট করবে। সর্বোপরি এই অঞ্চলে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ হবে। এসব আশংকা বিশেষজ্ঞদের।
হিমালয় পর্বতমালার তিব্বত অংশে কৈলাশ পর্বতের (মাউন্ট কৈলাশ) কাছে মানস সরোবর থেকে উৎসারিত হয়ে ব্রহ্মপুত্র যেখানে ভারতে প্রবেশ করেছে সেখানে বাঁধটি নির্মাণ করা হবে। সেখানেই পৃথিবীর দীর্ঘতম ও গভীরতম গিরিসংকট অবস্থিত, সমদ্রপৃষ্ঠ থেকে যার উচ্চতা দেড় কিলোমিটারেরও বেশি (৪৯০০ ফুট)।
সেখানেই পাওয়া যাবে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে প্রবল জলধারা। জায়গাটি স্বায়ত্ত¡শাসিত তিব্বতের মেগড কাউন্টিভুক্ত। তিব্বতে নদটির নাম ‘য়ারলুং সাংপো’।
বিষয়টি নিয়ে এএফপি, গালফ নিউজ, আরব নিউজ, ভারতের এনডিটিভি, হিন্দুস্থান টাইমসসহ অনেক গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করেছে। তাতে বাঁধ নির্মাণের সিদ্ধান্তটিকে হিমালয় পর্বতমালায় ভয়াবহ পরিবেশ-প্রতিবেশ বিপর্যয় এবং ভারত ও বাংলাদেশে পানি প্রবাহ বিঘিœত হওয়ার কারণ হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এসব গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, বাঁধ নির্মাণের সিদ্ধান্তটি চীনের শীর্ষস্থানীয় আইন প্রণেতাদের কংগ্রেস অনুমোদন দিয়েছে। এরপর সেটি চীনের চতুর্দশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (২০২১-২৫) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সবশেষ খবর হচ্ছে-এই বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের বিষয়ে তিব্বতের স্থানীয় সরকারের সঙ্গে পাওয়ার চায়না একটি ‘কৌশলগত সহযোগিতা চুক্তি’ সই করেছে। চীনা কমিউনিস্ট পার্টি পরিচালিত গেøাবাল টাইমস পত্রিকায়ও এবিষয়ে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, পাওয়ার চায়না চীনের বৃহত্তম বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান। জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে এই প্রতিষ্ঠানের বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে।
এর আগে চীন হুবাই প্রদেশে ইয়াংশি নদীর ওপর তিনটি গিরিসংকটকে ঘিরে বাঁধ দিয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র করেছে। সেই প্রকল্পের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২২ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। আর ব্রহ্মপুত্রের ওপর যে বাঁধ নির্মাণ করতে যাচ্ছে তার উৎপাদন ক্ষমতা হবে প্রায় ৬০ হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু হিমালয় পর্বতমালার একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর অঞ্চলে বাঁধ নির্মান পুরো অঞ্চলের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
ব্রহ্মপুত্র পৃথিবীর পঞ্চদশ দীর্ঘতম নদধারা। আর পানি প্রবাহের নিরিখে নদটি পৃথিবীর নবম বৃহত্তম। উৎসমুখ থেকে যাত্রা শুরু করে হিমালয়ের অসংখ্য গিরিসংকট পার হয়ে ব্রহ্মপুত্র ঢুকেছে ভারতের অরুণাচল প্রদেশে। সেখান থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে আসাম ভ্যালি অতিক্রম করে এসে পড়েছে বাংলাদেশে।
প্রায় ৩ হাজার ৮৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রহ্মপুত্র নদটি এই অঞ্চলের সেচ, নৌ চলাচল ও মৎস্য সম্পদের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই নদের বিপুল জলপ্রবাহের ওপর চীনের পরিকল্পিত বাঁধের মত বিশাল কোনো স্থাপনা এর সবই বিঘিœত করবে। জনজীবন বিপর্যস্ত করবে।