বড়পুকুরিয়ায়ও উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলা হচ্ছে না
বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির উত্তরাংশে উম্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তুলতে জরিপ করা হলেও শেষ পর্যন্ত বাতিল হতে যাচ্ছে সে সিদ্ধান্ত। সম্প্রতি করা এক জরিপ প্রতিবেদনে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা না তোলার পরামর্শ দেয়া হয়।
মঙ্গলবার জ্বালানি বিভাগে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বড়পুকুরিয়ায় উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলার বিষয়ে করা জরিপের প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। প্রতিবেদনে এই পরামর্শ দেয়া হয়। বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সভাপতিত্বে বৈঠকে জ্বালানি সচিব নাজিমউদ্দিন চৌধুরী, বড়পুকুরিয়ার কয়লা খনি প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এস এম এন আওরঙ্গজেবসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক সূত্র জানায়, জরিপ ছাড়া সংশ্লিষ্টরাও উন্মুক্ত পদ্ধতি করার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন।
এর আগে ২০১৪ সালে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ইন্সটিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্রিউএম) বিভাগ বড়পুকুরিয়ায় উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলা যাবে কিনা সে বিষয়ে জরিপ কাজ শুরু করে। খনি এলাকার মাটিতে পানির অবস্থান, মাটির পুরুত্ব, মাটি উম্মুক্ত করা হলে কি পরিমান পানি আসবে, সে পানি কিভাবে ব্যবহার করা হবে, পানি বের হয়ে আসলে আরো উত্তরের প্রচলিত ফসলের কি পরিস্থিতি হবে, সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন কাজে কিভাবে পানি ব্যবহার হবে ইত্যাদি বিষয় জরিপ করা হয়।
বর্তমানে বড়পুকুরিয়া খনি থেকে ভূগর্ভস্থ পদ্ধতিতে কয়লা তোলা হয়। মাটির নিচে সুড়ঙ করে এই কয়লা তোলা হচ্ছে। দেশের অন্য যে চারটি কয়লা খনি আছে সেখান থেকে কোন কয়লা তোলা হয়নি।
বাংলাদেশের কোন খনিতে কোন পদ্ধতিতে কয়লা তোলা যায় তা সুপারিশ করার জন্য একটি কারিগরি কমিটি করা হয়েছিল। ২০১২ সালে এই কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে ফুলবাড়িয়া ও বড়পুকুরিয়ায় উম্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা খনি করার সুপারিশ করে। এছাড়া খালাশপির ও দিঘিপাড়ায় ভূগর্ভস্থ এবং জামালগঞ্জে গ্যাসিফিকেশন করার সুপারিশ করা হয়। বলা হয়, বড়পুকুরিয়ার উত্তরাংশে এখনই পরীক্ষা মূলকভাবে করা যায় কিনা তার সম্ভাব্যতা যাচাই জরুরী। এরপর পরই বড়পুকুরিয়ায় জরিপের প্রস্তুতি নেয়া হয়।
সরকারের২০২১ সালের ভিশন বাস্তবায়নে কয়লা থেকে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। এজন্য আগামী দশ বছর পর বছরে প্রায় ১১ লাখ মেট্রিক টন কয়লা প্রয়োজন হবে। বর্তমানে বড়পুকুরিয়া থেকে বছরে প্রায় এক লাখ মেট্রিক টন কয়লা তোলা হচ্ছে। বাড়তি চাহিদা পুরণে সরকার উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলার পরিকল্পনা করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই ধরনের কয়লাখনি করা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইনফ্রাস্টাকচার ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন সেন্টারের (আইআইএফসি) হিসেবে, দেশে বর্তমানে পাঁচটি ক্ষেত্রে মোট ২৭৫ কোটি ৪০ লাখ টন কয়লা মজুদ আছে। এরমধ্যে উত্তোলনযোগ্য কয়লার পরিমাণ ১২৫ কোটি টন।
এরআগে উম্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলা নিয়ে বিভিন্ন সময় দেশে আন্দোলন হয়েছে। বিশেষ করে ফুলবাড়িয়া কয়লা খনি উম্মুক্ত পদ্ধতিতে করার বিরোধীতা করে এলাকাবাসী আন্দোলন করেছে। এখনও মাঝে মাঝে খনি উন্নয়নের পক্ষে বিপক্ষে সমাবেশ হচ্ছে।