বড়পুকুরিয়ায় উম্মুক্ত হলে পানি স্তর ৩০ মিটার নেমে যেতে পারে
বড়পুকুরিয়ার উত্তরাংশে উম্মুক্ত ভাবে কয়লা তোলা হলে ৫৬০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় এর প্রভাব পড়বে। খনি এলাকার পানির স্তর বিভিন্ন স্থানে সাত মিটার থেকে ৩০ মিটার পর্যন্ত নিচে নেমে যেতে পারে।
পনি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম) বড়পুকুরিয়ার উত্তরাংশে পানি নিয়ে জরিপ করেছে। জরিপে এই তথ্য দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি তাদের করা এই জরিপের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। কিন্তু উম্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা খনি উল্পুয়ন করতে হলে আরও যেসব তথ্য প্রয়োজন তা এই প্রতিবেদনে নেই বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। জরিপ সংশ্লিষ্টরা জানান, বিস্তারিত তথ্যের জন্য আরও পর্যালোচনা প্রয়োজন।
সূত্র জানায়, ঐ এলাকায় এখন কি পরিমান ফসল হচ্ছে, তার মূল্য কত এবং কয়লা তোলা হলে তার পরিমান এবং মূল্য কত হবে, উম্মুক্তভাবে কয়লা তোলার ফলে কৃষি, শিল্প ও খাওয়ার পানিসহ বিভিল্পু বিষয়ে কি প্রভাব পড়তে তা বলা হয়নি। এজন্য এই প্রতিবেদন অসম্পূর্ণ এবং গ্রহণযোগ্য নয় বলে দাবি করেছে বড়পুকুরিয়া কোল মাইন কোম্পানি।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ি, বড়পুকুরিয়ার উত্তরাংশে উম্মুক্তভাবে কয়লা তোলা হলে প্রতিবছর ৪০০ থেকে ২৩২ মিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি আবার ব্যবহার উপযোগি করতে হবে। তবে কিভাবে এই পানি ব্যবহার উপযোগি করা সম্ভব হবে তা ষ্পষ্ট করা হয়নি।
পেট্রোবাংলার একজন কর্মকর্তা জানান, খনি এলাকার সেচ ও খাদ্যশস্যের ওপর এই ধরণের খনির কারণে কি প্রভাব পড়বে তার কিছুই প্রতিবেদনে নেই। এ ধরণের খনিতে কাদ্য ও সেচে বেশি প্রভাব পড়ে থাকে। উম্মুক্ত ভাবে খনি উল্পুয়ন করলে যে এলাকায় প্রভাব পড়বে সেখানে ফসলের পরিমান এবং খনি থেকে তোলা কয়লার পরিমান এই দুইয়ের মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক কোনটি তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বর্তমানে বাংলাদেশের ৫টি কয়লাখনিতে প্রায় দুই দশমিক ৫৫ বিলিয়ন টন কয়লার মজুদ আছে। কিন্তু কয়লা নীতি চূড়ান্ত না হওয়ার কারণে এসব খনি থেকে কয়লা তোলা যাচ্ছে না। বড়পুকুরিয়ায় প্রায় ৩৮৯ মিলিয়ন টন কয়লা আছে। সেখানে বর্তমানে ভূ-গর্ভস্থ বা সুড়ঙ্গ পদ্ধতিতে কয়লা তোলা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, উম্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলা হলে বড়পুকুরিয়ার মোট কয়লার ৯০ শতাংশই তোলা যাবে। ভূগর্ভস্থ পদ্ধতিতে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ কয়লা তোলা যাবে। খনির উত্তরাংশে প্রায় ১৩৫ মিলিয়ন টন কয়লা মজুদ আছে বলে ধারণা করা হয়েছে।
আগে বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, কোন খনির কয়লার স্তর যদি ২০০ মিটারের চেয়ে বেশি মাটির গভীরে থাকে তাহলে সেখানে ভূগভস্থ পদ্ধতিতে কয়লা তোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু আরও উপরে থাকলে সেখানে উম্মুক্ত পদ্ধতি করাই ভাল। মাটির ১১৮ মিটার নিচ থেকে বড়পুকুরিয়ার কয়লার স্টøর শুরু হয়েছে। এই স্তর শেষ হয়েছে প্রায় ৫০৩ মিটারে গিয়ে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বড়পুকুরিয়ার উত্তরাংশে করা জরিপে প্রয়োজনীয় অনেক তথ্য নেই। ফলে এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে সেখানে উম্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলা সম্ভব নয়। উত্তরাঞ্চলে কয়লা তুলতে গেলে সেখানের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত বিষয় পর্যালোচনা করতে হবে।
বড়পুকুরিয়ার উত্তরাংশে পরীক্ষামূলক উম্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলার পরিকল্পনা আগেই নেয়া হয়েছে। এজন্য নানা কমিটি করা হয়েছে, দুইটি প্রতিবেদনও তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু সেসব প্রতিবেদন থেকে নির্দিষ্ট কোন সুপারিশ আসেনি। ফলে খনি উন্নয়নের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া যায়নি।
পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান ও কয়লা সম্পর্কিত কমিটির চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন বলেন, তবে আইডব্লিউএম এর প্রতিবেদন থেকে পানি স্তরের বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া গেছে। কিন্তু তারপরও ভৌগলিক ও কারিগরি বিষয়গুলো পর্যালোচনা করতেই হবে। উম্মুক্ত খনি করার ফলে খনি এলাকার পানি ও পরিবেশের কি প্রভাব পড়বে তার যথাযথ তথ্য আইডব্লিউএম এর প্রতিবেদনে নেই। এছাড়া ওই এলাকায় উম্মুক্ত কয়লাখনি করার সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে খনি এলাকায় ভৌগলিক ও কারিগরি জরিপ করতে হবে। তিনি বলেন, কি পদ্ধতিতে কয়লা তোলা হবে তার কারিগরি, পানি প্রবাহ, পরিবেশ এবং জীববৈচিত্রের দিক থেকে পর্যালোচনা করতে হবে। উম্মুক্ত পদ্ধতিতে খনি করলে কতখানি অর্থনৈতিকভাবে উপযোগী হবে, খাদ্য উৎপাদন ও জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে কি ধরণের অবদান রাখবে তা যাচাই বাছাই করতে হবে। দেশের খাদ্য উৎপাদনে অন্যমত ভান্ডার উত্তরাঞ্চল। ফলে এবিষয়েটি সুক্ষভাবে বিচার করতে হবে। বিষয়গুলো নিশ্চিত হওয়ার পরেই বড়পুকুরিয়ায় উম্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলা যাবে কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে। তিনি বলেন, এসব বিষয় বিবেচনা করে কিভাবে বড়পুকুরিয়ায় লাভ-ক্ষতির বিষয়টি যাচাই করা হবে তা আইডব্লিউএম তাদের প্রতিবেদনে আনতে ব্যর্থ হয়েছে।