ভারত থেকে সৌরবিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা

ভারত থেকে সৌরবিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা করছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বৈঠকে এবিষয়ে এক প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে দিনে বিদ্যুতের পিক সময় দুটি—দিবাকালীন ও সন্ধ্যাকালীন। এ পিক সময়ের বিদ্যুৎ চাহিদা মূলত তরল জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দিয়ে মেটানো হয়। দেশে সৌরভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জমির সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচও বেশি। প্রতিবেশী দেশ ভারতে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ কম। সেক্ষেত্রে দিবাকালীন পিক চাহিদা মেটাতে ভারত থেকে সৌরবিদ্যুৎ আমদানি করা যেতে পারে। আবার শীতকালের মতো সময়ে, যখন দেশে বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকে; তখন প্রতিবেশী দেশগুলোয় বিদ্যুৎ রফতানি করা যেতে পারে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে গত ১০ বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় দ্বিগুণে। যদিও এ সময় নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে তেমন কোনো সাফল্য অর্জিত হয়নি। এই ১০ বছরে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত থেকে যোগ হয়েছে মাত্র ৩৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ, যার ২৮৬ মেগাওয়াটই এসেছে সোলার হোম সিস্টেম থেকে। এছাড়া সোলার পার্ক, সোলার মিনি গ্রিড ও রুফ টপ সোলার থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য থাকলেও সেখান থেকে উল্লেখযোগ্য কোনো সাফল্য পাওয়া যায়নি।

দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়াতে জীবাশ্ম জ্বালানি ও নিউক্লিয়ার এনার্জির পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনেরও উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। এ লক্ষ্যে ২০১২ সালে নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালার অনুমোদন দেয়া হয়। নীতিমালায় সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, বায়োমাস, হাইড্রো, বায়োফুয়েল, জিও থার্মাল, নদীর স্রোত, সমুদ্রের ঢেউ ইত্যাদিকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির মূল উৎস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এসব উৎস ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে আর্থিক প্রণোদনা দেয়ার পাশাপাশি অন্যান্য সুযোগও রাখা হয় নীতিমালায়।

নীতিমালায় ২০১৫ সালের মধ্যে দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৫ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদনের পরিকল্পনা নেয়া হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২০ সালের মধ্যে তা ১০ শতাংশে উন্নীত হওয়ার কথা। এ পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদিত দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার কথা।

বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে দেশে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা (গ্রিড ও অফ গ্রিড) প্রায় ৩৪০ মেগাওয়াট। অন্যদিকে বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা (গ্রিড ও অফ গ্রিড) প্রায় চার মেগাওয়াট।

এর আগে বিদ্যুৎ খাতের জন্য ২০১০ সালে গৃহীত মহাপরিকল্পনায়ও নবায়নযোগ্য খাত থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল।

২০১৬ সালে জাপানি দাতা সংস্থা জাইকার বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনার খসড়ায় দেখানো হয়, দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত থেকে মোট ৩ হাজার ৬৬৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। এর মধ্যে শুধু সৌরশক্তি কাজে লাগিয়েই ২ হাজার ৬৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। এছাড়া বায়ুবিদ্যুৎ থেকে ৬৩৭ ও বায়োগ্যাস থেকে ২৮৫ মেগাওয়াট উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে।

সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে সর্বোচ্চ জোর দেয়া হলেও এ বিষয়ে সরকারি ও সাহায্য সংস্থার আন্তরিকতার অভাব রয়েছে বলে দাবি করছেন বিদ্যুৎ বিভাগসংশ্লিষ্টরা। বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎস বাড়াতে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হয় সৌরশক্তির ওপর। এ নিয়ে গৃহীত প্রকল্পে বিদেশী সাহায্য সংস্থার সহযোগিতা করার কথা থাকলেও সরকার সে সহযোগিতা পায়নি। নিজস্ব অর্থায়ন, দাতা সংস্থা ও বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে অর্থায়নের চেষ্টাও সফল হয়নি। এছাড়া বায়ুবিদ্যুৎ নিয়ে বিভিন্ন সময় বিদেশী প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন প্রস্তাবের কথা শোনা গেছে। দেশের সব সরকারি অফিসে সোলার প্লান্ট স্থাপনের পরিকল্পনা থাকলেও তাতেও আশানুরূপ সাড়া মেলেনি।