ভাসমান টার্মিনালের চুক্তি: আমদানি হবে গ্যাস
অবশেষে ভাসমান গ্যাস টার্মিনাল করার চুক্তি হলো। জাহাজে করে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করা হবে। পরে তা আবার স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এনে গ্যাস পাইপে করে সরবরাহ করা হবে। কক্সবাজারের মহেশখালিতে এই ভাসমান তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল করা হচ্ছে।
আমেরিকার কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি টার্মিনাল স্থাপন করবে। বাংলাদেশ টার্মিনাল ব্যবহারের জন্য নিদিষ্ট পরিমান ভাড়া দেবে। কাতার বা অন্য কোন দেশ থেকে আন্তর্জাতিক বাজার দরে এই গ্যাস আনা হবে। আগামী ১৮ মাস বা দেড় বছরের মধ্যে টার্মিনাল স্থাপনের কাজ শেষ হবে। সে হিসেবে ২০১৮ সালের প্রথম দিকে এই টার্মিনাল দিয়ে গ্যাস এনে তা সরবরাহ শুরু হবে।
সোমবার পেট্রোসেন্টারে এবিষয়ে এক্সিলারেট ও জ্বালানি বিভাগের মধ্যে চুক্তি হয়েছে। এক্সিলারেট বাংলাদেশ লিমিটেড দুটো চুক্তি করেছে। টার্মিনাল স্থাপন করার জন্য জ্বালানি বিভাগের সাথে এবং টার্মিনাল ব্যবহারের জন্য পেট্রোবাংলার সাথে।
চুক্তি অনুযায়ি, প্রতিদিন ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস আনা হবে। এই গ্যাস আনতে টার্মিনাল ভাড়া দিতে হবে বছরে প্রায় নয় কোটি ডলার। এর সাথে যোগ হবে তিন শতাংশ এআইটি ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট। যার পরিমান বছরে প্রায় দুই হাজার ২৫৪ কোটি টাকা। আর একবছরের গ্যাসের দাম পড়বে বর্তমান বাজার দরে এক দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। সব মিলে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম পড়বে গড়ে আট ডলার। টার্মিনালটি মোট এক লাখ ৩৮ হাজার ঘন মিটার গ্যাস ধারণ ক্ষমতার হবে । এই টার্মিনাল স্থাপনের জন্য ২০১০ সালে প্রথম উদ্যোগ নেয়া হয়। টার্মিনাল করতে এক্সিলারেট আইএফসি থেকে ঋণ নেবে।
চুক্তি সই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম বলেন, বাংলাদেশের জন্য এই টার্মিনাল খুবই প্রয়োজনীয়। শিল্পে এই গ্যাস দেয়া হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নে কেউ বাধা দিতে পারবে না। হত্যা করে পৃথিবীর ইতিহাসে কেউ কখনো জয়ী হতে পারেনি। বাংলাদেশ শান্তির দেশ। ইসলাম শান্তির ধর্ম। এখানে সন্ত্রাসের স্থান নেই। তিনি নিরাপত্তার বিষয়ে সকলকে সচেতন থাকার পরামর্শ দেন।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ভবিষ্যতে গ্যাসের চাহিদা আরও বাড়বে। ৩৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস আমদানি করতে হবে। তরল এই গ্যাসের দাম বেশি পড়বে। তবে তা সহনীয় থাকবে। তিনি বলেন, বিদেশীদের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। আরও বাড়ানো হবে। বাংলাদেশের উন্নয়নকে বন্ধ করা যাবে না।
বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাস্ট্রের রাস্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নে যুক্তরাস্ট্র আগে যেমন ছিল এখনও তেমনইভাবে থাকবে।
এক্সিলারেট এনার্জির প্রধান উন্নয়ন কর্মকর্তা ড্যানিয়েল বুসটস বলেন, বাংলাদেশ দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে। গত কয়েক বছর প্রবৃদ্ধি ছয় শতাংশের উপর রয়েছে। টেকসই উন্নয়নের জন্য জ্বালানির সংস্থান খুব গুরুত্বপূর্ণ।
টার্মিনাল স্থাপনের জন্য জ্বালানি বিভাগের উপসচিব জনেন্দ্র নাথ সরকার, টার্মিণাল ব্যবহার চুক্তির জন্য পেট্রোবাংলার সচিব সৈয়দ আশফাকুজ্জামান চুক্তিতে সই করেন। অন্যদিকে দুটো চুক্তিতেই এক্সিলারেট এনার্জি প্রধান উন্নয়ন কর্মকর্তা ড্যানিয়েল বুসটস সই করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব নাজিম উদ্দিন চৌধুরী। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ইশতিয়াক আহমেদসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।